ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে গোটা উপকূল এলাকার জনজীবন অনেকটা বিপর্যস্ত। উপকূল অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় অনেক বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে, এছাড়া যেসব এলাকায় বেড়িবাঁধ ছিল না, সেখানকার ঘরবাড়ি, ফল-ফসল ও মাছের ঘের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে খাদ্য ত্রাণ ও নির্মাণ সামগ্রী পৌঁছানো জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে দেশের উপকূলীয় ৯ জেলার ২৭ উপজেলার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই উপজেলাগুলো হলো সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার ২৭টি উপজেলা। ক্ষতিগ্রস্তদের মানবিক সহায়তা হিসেবে কিছু খাদ্য সামগ্রী দিয়েছে সরকার।
দেশে বিভিন্ন সময় ঘূর্ণিঝড়ের আগেপরে উপকূলে এই অবস্থা সবসময়ই দেখা যায়। বিশেষ করে আইলা-সিডর-নার্গিসের পরে ভয়াবহ চিত্র দেখা গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে নির্মিত বেড়িবাঁধগুলো অনেক আগেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। সেসব বাঁধের উচ্চতা এতো কম যে, বছরে একাধিকবার অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে বাঁধগুলো তলিয়ে যায়। এর ফলে বিস্তীর্ণ জনপদ প্লাবিত হয়ে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ সৃষ্টি ও ব্যাপক ফসলহানী হয়।
এছাড়া উপকূলে বাঁধ নির্মাণ বিষয়ে দুর্নীতির দিকটিও নানা সময়ে আলোচিত। ইয়াসের পরে ‘উপকূল রক্ষায় টেকসই ও স্থায়ী বেড়িবাঁধ চাই’ শ্লোগানে উপকূলের বিভিন্ন সংগঠনের ও ব্যক্তিদের নানা দাবি নিয়ে রাস্তায় দাঁড়াতেও দেখা গেছে, সেখানেও উঠে এসেছে দুর্নীতির বিষয়গুলো। এছাড়া সামাজিক মাধ্যমে এখনও শেয়ার হচ্ছে উপকূলীয় এলাকার বর্তমান দুর্দশার চিত্র। ইয়াস অনেক আগে বিদায় নিলেও অনেক এলাকায় এখনও জোয়ার-ভাটায় দুর্ভোগে মানুষ। ক্ষোভ হতাশায় থাকা উপকূলের মানুষের জনরোষেও পড়তে হয়েছে স্থানীয় এক সংসদ সদস্যকেও।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও ক্ষতি হয়েছে অনেক বেশি। সেখানকার রাজ্য সরকার এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে ঘূর্ণিঝড়দুর্গতদের জন্য। সামনে আমাদের জাতীয় বাজেট আসছে, উপকূল এলাকার মানুষদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখতে পারে সরকার। এছাড়া বিগত কয়েক যুগে ওইসব এলাকায় সুরক্ষা স্থাপনা নির্মাণের মান ও প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করে একটি দুর্নীতিমুক্ত ও টেকসই পরিবেশ তৈরি করা সময়ের দাবি।