একজন উদ্যোক্তা, একজন ধনী ব্যবসায়ী কতটা বিনয়ী হতে পারেন, দেশে তাঁর অন্যতম উদাহরণ লতিফুর রহমান। ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান, প্রথম আলো,ডেইলি স্টারের উদ্যোক্তা পরিচালক লতিফুর রহমান চলে গেলেন আকস্মিক। অসুস্থ শরীরটাকে ঠিক রাখতে সম্প্রতি চলে গিয়েছিলেন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের পৈত্রিক বাড়িতে। সেখানেই আজ সকালে প্রয়াত হয়েছেন।
প্রথম আলোর আগেই ভোরের কাগজের রিপোর্টার হিসেবে পরিচয় হয়েছিল এমপ্লয়ার এসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে। প্রথম আলোর সূচনালগ্নে কারওয়ান বাজারের ট্রান্সকম গ্রুপের অফিসে যখন আমরা বসতে শুরু করেছিলাম,তখন নিজেই আমাদের দুপুরের খাবার,সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ” বিরতিহীন চায়ের সরবরাহ ” ঠিক আছে কি না খোঁজ নিতেন। চামড়া মোড়ানো আর কার্পেট শোভিত ট্রান্সকমের বোর্ডরুম সাংবাদিকদের অতি ব্যবহারে চাকচিক্য হারিয়েছিল।
কোনদিন কোনো উচ্চস্বরের শব্দ শুনিনি প্রথম আলোর উদ্যোক্তার। বরং নিজে আগের পরিচয়ের সুত্রে প্রশ্রয় পেয়ে ” শামীমভাই ” ডাকতে পারতাম। নিজের বিনম্র আচরনে প্রথমআলোর সকল কর্মীর শ্রদ্ধা- ভালোবাসা পেয়েছিলেন। প্রথমআলোর শুরুর বছরগুলোতে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনটিতে সপরিবারে আসতেন। মনে পড়ে সবার সাথে বার্তাকক্ষে দাড়িয়েই সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিতেন।
পরে বোর্ডরুমে সিনিয়রদের সাথে চা খেতে খেতে বলতেন ” যত ভালো পত্রিকা হবে,যত কম মতি ভাইয়ের সাথে আমার দেখা হবে, আর তত বেশী স্বাধীনতা আপনারা ভোগ করবেন।” একবার জানতে চেয়েছিলাম, এতকিছু করলেন একটা ট্রান্সকম টাওয়ার করলেন না? ” সংক্ষিপ্ত জবাব ছিল ” একটা কংক্রিটের ভবন বানানোর চেয়ে প্রথম আলোর মত প্রতিষ্ঠান করা কি ভালো না”? সেই প্রথম আলো ছেড়ে চলো গেলেন,তার আগে ঢাকা ছেড়েছিলেন, নিজের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে।
হায় তারপরও শারীরিক মৃত্যু আপনাকে গ্রাস করলো। কিন্তু নিশ্চিত একজন ব্যবসা সফল, ব্যতিক্রমী উদ্যোক্তা আর বিনয়ী মানুষ হিসেবে আপনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। বিনম্র শ্রদ্ধা। কোথাও দেখা হলে মৃদুহেসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে শামীম ভাই আর বলবেন না ” প্রণব কেমন আছেন?”
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)