তিনি ইসরাত সাদমীন। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার। যোগদানের পর ইতোমধ্যে উপজেলার সাধারণ মানুষের কাছে নানা বিশেষণের খ্যাতি অর্জন করেছেন। সম্প্রতি সেই বিশেষণের তালিকায় যুক্ত হয়েছে বেরসিক খেতাব। আর তিনি এই খেতাবটি পেয়েছেন এলাকায় একের পর এক বাল্য বিবাহ বন্ধ করে।
ইসরাত সাদমীন এই উপজেলায় যোগদানের পর থেকেই অন্যান্য কাজের সাথে বাল্যবিবাহ বন্ধে অলিখিত যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। উপজেলার যে প্রান্তেই শুনছেন বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটছে সেখানেই উপস্থিত হচ্ছেন তিনি। কোনো রকম দাওয়াত ছাড়াই এসব বিয়ের অনুষ্ঠানের উপস্থিত হয়ে বিয়ে সম্পন্ন করার বদলে তা বন্ধ করে দিচ্ছেন তিনি।
বিনা দাওয়াতে বিয়ে বাড়িতে তার উপস্থিতিতে বাড়ির কর্তারা প্রথমে খুশি না হয়ে নাখোশই হয় বেশি। তবে শেষমেষ ইউএনও’র কর্মতৎপরতা ও বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে অবহিত হয়ে উল্টো দুঃখ প্রকাশই করছেন অভিভাবকরা।
জানা যায়, গত দু’দিনে লতিফপুর ইউনিয়নের কোদালিয়া গ্রাম ও পৌরসভার বংশাই রোডের পর পর দু’টি বাল্যবিবাহ বন্ধ করে উপজেলার অন্যতম আলোচিত ব্যক্তিদের তালিকায় নিজের নাম করে নিয়েছেন।
শুক্রবার রাতে পৌরসভার বংশাই রোডে দশম শ্রেণির ছাত্রী মারিয়ার বিয়ের অনুষ্ঠানের খবর পেয়ে হঠাৎ হাজির হন ইসরাত সাদমীন। বাল্যবিবাহ বন্ধের জন্য তিনি কনের বাবা মোশারফ হোসেনকে অনুরোধ করেন।
এতে কনের বাবা বিয়ে বন্ধে অস্বীকৃতি জানিয়ে তার কাছে উল্টো জানতে চান ‘আপনাকে কে দাওয়াত দিয়েছে?’ পরে নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, তিনি বিনা দাওয়াতের অতিথি এবং এ বিয়ে বন্ধ না করে ফিরবেন না।
এদিকে নাছোরবান্দা ইউএনওকে বশে আনতে কনের বাবা উপজেলার প্রভাবশালী এক আওয়ামী লীগের নেতাকে দিয়ে সুপারিশ করালেও তাতেও মন গলেনি ইসরাদ সাদমীনের। উপস্থিত অতিথিদের বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে বর্ণনা করেন এবং মেয়েকে বাল্যবিবাহ দেবেন না মর্মে বাবার মুচলেকা নিয়ে বিয়ে বন্ধ করেন।
অপরদিকে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কোদালিয়া গ্রামে বাল্যবিবাহ হচ্ছে খবর পেয়ে বর লিটনের বাড়িতে গিয়ে হাজির হন ইউএনও ইসরাত সাদমীন। সন্ধ্যায় ইউএনওর গাড়ির বাতির আলো দেখে বিয়েবাড়ির লোকজন এগিয়ে গিয়ে জানতে চান তিনি কনে পক্ষের লোক কি’না। ইউএনওর পরিচয় জানতে পেরে বাল্যবিয়ের আয়োজনকারীরা বাড়ি ছেড়ে সটকে পড়ার চেষ্টা করেন। পরে ইউএনও ইসরাত সাদমীন সবাইকে ডেকে বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে বর্ণনা করেন। পরে ইউএনওর কাছে লজ্জিত হয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন বাড়ির অভিভাবকরা।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত সাদমীনের এই উদ্যেগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকার সর্বস্তরের জনগণ। সেই সাথে নিজের নামের সাথে যুক্ত করেছেন আরেকটি সুখের বিশেষণ বেরসিক ইউনও।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউএনও ইসরাত সাদমীন জানান, দায় এবং দায়িত্বের তাড়না থেকেই বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। বাল্যবিবাহ বন্ধে সকলের সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি সামাজিক ঐক্যও গড়ে তুলতে হবে।