চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

বিনা অপরাধে ২৩ বছর কারাগারে, হারালেন বাবা-মা

১৯৯৬ সালে হওয়া একটি বোমা বিস্ফোরণ মামলায় সম্পৃক্ততার প্রমাণের অভাবে অবশেষে আদালত বন্দীদশা থেকে খালাস দিলেন আলী ভাটকে। কিন্তু এর মধ্যে হারিয়ে গেছে তার ২৩টি বছর। হারিয়েছেন তারুণ্য, কারাগার থেকে বের হয়ে দেখলেন বাবা-মা মারা গেছে।

মুক্তি পাবার দু’দিন পর আলী ভারত নিয়ন্ত্রণাধীন জম্মু কাশ্মীরের শ্রীনগরে নিজ এলাকায় পৌঁছে সবার আগে বাবা-মাকে দেখতে যান। বাড়ি ফিরে হাসিখুশি বাবা-মায়ের বদলে তাদের কবর দেখে আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলেন না, ঝাঁপিয়ে পড়লেন কবরের ওপর।

আলী ভাটের এই মন ভাঙা কান্নার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে।

এমনই নির্মম বাস্তবতার মুখোমুখি আলীর মতো আরও চারজন।

শুধু বিচারের আশায় প্রায় আড়াই দশক জেলে কাটানোর পর মঙ্গলবার বিকেল সোয়া ৫টায় লতিফ আহমেদ বাজা (৪২), আলী ভাট (৪৮), মির্জা নিসার (৩৯), আবদুল গণি (৫৭) এবং রইস বেগ (৫৬) – এই ৫ কারাবন্দী কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন। সোমবার তাদেরকে খালাস দেন রাজস্থান হাইকোর্ট।

এদের মধ্যে রইস বেগকে ১৯৯৭ সালের ৮ জুন আটক করা হয়। আর বাকিদের ১৯৯৬ সালের ১৭ জুন থেকে ২৭ জুলাইয়ের মধ্যে আটক করা হয়েছিল। সেই থেকে এ পর্যন্ত এদেরকে কখনো দিল্লি, কখনো আহমেদাবাদের বিভিন্ন কারাগারে স্থানান্তর করা হলেও জামিন বা প্যারোল দেয়া হয়নি।

১৯৯৬ সারের ২২ মে দাউসার সামলেটি গ্রামের কাছে জয়পুর-আগ্রা মহাসড়কে একটি বাসের ভেতর বোমা বিস্ফোরণে ১৪ জন নিহত ও ৩৭ জন আহত হয়। এ ঘটনার চার্জশিটে ১২ জনকে জড়িত দেখিয়ে বলা হয়েছিল, এরা এর আগেও কয়েকটি সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত।

এর আগে এ ঘটনায় আটক আরও ৭ জন বিভিন্ন দফায় খালাস পেলেও সর্বশেষ মঙ্গলবার এই ৫ জন মুক্তি পেলেন।

মঙ্গলবার কারাগার থেকে বেরিয়ে পাঁচজনের প্রত্যেকেই জানান, ক্রাইম ব্রাঞ্চ তাদেরকে মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার আগ পর্যন্ত কেউ কাউকে চিনতেন না।

সোমবার বেকসুর খালাস দেয়ার সময় হাউকোর্ট বলেন, এই অভিযুক্ত পাঁচজনের সঙ্গে মামলার মূল আসামি ড. আবদুল হামিদের কোনো সম্পর্ক ছিল, রাষ্ট্রপক্ষ এমন কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি। ড. আবদুল হামিদের মৃত্যুদণ্ড এখনো বহাল রয়েছে।

কিন্তু সম্পৃক্ততা প্রমাণ করার ব্যর্থতা স্বীকার করতে এবং আদালতের সিদ্ধান্ত জানাতে জানাতেই কেটে গেল দীর্ঘ ২৩ বছর। ফলে এদের প্রত্যেকের জীবনের বড় একটি অংশ হারিয়ে ফেলেছেন। এর মাঝে তাদের বেশিরভাগেরই বাবা-মা এবং বয়স্ক নিকটাত্মীয়রা মারা গেছেন।