যৌন ব্যবসার জন্য রোহিঙ্গা মেয়ে ও শিশুদের পাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অল্পবয়সী মেয়েরাই বিদেশীদের যৌন কাজে ব্যবহারের টার্গেট হয়ে উঠেছে।
বিবিসি জানিয়েছে, ১৪ বছর বয়সী আনোয়ারার পুরো পরিবারকে মিয়ানমারে হত্যা করা হয়। তারপর থেকে শরণার্থী হয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারে আসলে সাহায্য খুঁজতে থাকে আনোয়ারা। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কাছে একজন দালালের সাথে তার দেখা হলে সাহায্য করার আসায় সে তাকে একটা গাড়িতে উঠায়। এরপর কিছুক্ষণ পর দুইজন ছেলেকে পাঠায় আনোয়ারার কাছে।
‘‘তারা জোর করে যৌন কার্যকলাপ চালাতে থাকে। বাধা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছুরি দিয়ে পেটে আঘাত করতে থাকে। পরবর্তীতে তাকে ধর্ষণ করা হয়।’’
এমন ঘটনা প্রতিনিয়ত কক্সবাজারে ঘটছে বলে প্রতিবেদনে উঠে আসে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সবচেয়ে বেশি যৌন কার্যকলাপ এবং ধর্ষণের শিকার হয় ১৩ থেকে ১৭ বছরের মেয়েরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘এসব মেয়েদের ভালো চাকরি, বসবাসের জন্য ভালো জায়গা এবং হোটেল অথবা বাড়িতে কাজ করার মত লোভনীয় অফার দিয়ে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। পরে পাচার করা হয় অন্য কোন দেশে, নাহয় ধর্ষণের পর পতিতাবৃত্তিতে জোর করে নিয়ে আসা হয়। অনেকেই জানায়, টাকা পয়সার অভাব এবং মিয়ানমারের পরিবার হারিয়ে এসব পেশায় অনেকেই যাচ্ছে।’’
এমনই ঘটনার শিকার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকা ১৪ বছর বয়সী মাসুদা। তিনি বলেন, ‘আমি এখানকার স্থানীয় দাতব্য সংস্থায় সাহায্য চেয়েছিলাম। কিন্তু ওখানে একজন রোহিঙ্গা মহিলা অনেক দিন ধরেই কাজ করত, সে আমাকে একটা চাকরি অফার করলেন। পরে বুঝতে পারি পতিতাবৃত্তিতে জড়িয়ে যাচ্ছি।’
বিবিসির অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, কক্সবাজারের স্থানীয় ছোট হোটেল ও সৈকতের রিসোর্ট থেকে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই দালালদের ফোন দিলে তারা যৌন কার্যকলাপের জন্য রুম ভাড়া করে রাখে। এসব দালাল বিভিন্ন হোটেলের গেস্ট রুমে ছদ্মবেশে থাকে।
‘‘বিদেশী অনেক পর্যটক দালালদের ফোন করে খুব স্বল্পমূল্যে অল্পবয়সী রোহিঙ্গা মেয়ে খোঁজে। তাই সস্তায় রোহিঙ্গা মেয়েদের দিয়ে পতিতাবৃত্তি করিয়ে দালাল শ্রেণি রমরমা ব্যবসা করছে। তবে যখন খদ্দর না থাকে তখন এসব মেয়েদের দালালদের বাড়ির রান্না ও ঘর ধোয়ামোছার কাজে লাগানো হয়।’’
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘শুধু কক্সবাজারে না, ঢাকা, নেপালের কাঠমান্ডু ও ভারতের কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এসব রোহিঙ্গা মেয়েদের। আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় পর্যায়ে নারী ও শিশু পাচারে খুব শক্তিশালী নেটওয়ার্ক থাকায় খুব সহজেই ইন্টারনেটে যোগাযোগ করে এই ধরণের কার্যকলাপ করছে দালাল গোষ্ঠী। বাংলাদেশে নতুন সেক্স ইন্ডাস্ট্রি গড়ে না উঠলেও যৌনকর্মী হিসেবে মেয়ে সরবরাহ বেড়ে গেছে। আর সেটির অন্যতম শিকার রোহিঙ্গা মেয়েরা।’’