চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

বিদায় বেলায় একজন বিচারপতির যে অনুরোধ

বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহের শেষ কর্মদিবস

জুনিয়র আইনজীবীরা যেন পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালোভাবে  পেশায় টিকে থাকতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে সিনিয়র আইনজীবীদের প্রতি অনুরোধ করে গেলেন বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ।

হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিজের শেষ কর্মদিবসে ভার্চুয়াল মাধ্যমে দেয়া বিদায়ী বক্তব্যে এমন অনুরোধ করেন তিনি।

মহামারী করোনার প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার দুপুরে মাইক্রোসফট টিমস অ্যাপের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের পক্ষ থেকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহকে বিদায় সম্ভাষণ জানান।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলের সঞ্চালনায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে হওয়া বিদায় অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সাংবাদিকরা সংযুক্ত ছিলেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বিদায় সম্ভাষণে বলেন, ‘আজ করোনাভাইরাস না থাকলে আদালত কক্ষে উপস্থিত হয়েই আমারা আপনাকে বিদায় জানাতাম। তবে মহামারী করোনার কারণে এভাবে ভার্চুয়াল বিদায় অনুষ্ঠান করতে হচ্ছে।’

‘‘আপনি বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে থেকে সততা, নিষ্ঠা ও প্রজ্ঞার সঙ্গে বিচারিক দায়িত্ব পালন করেছেন। সিভিল ও ক্রিমিনাল মামলার পাশাপাশি হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স মামলার বিচারের ক্ষেত্রে আপনি অনন্য হয়ে থাকবেন।

আর বার কাউন্সিলের এনরোলমেন্ট (অন্তর্ভুক্তি) কমিটির একজন সদস্য হিসেবে তার দায়িত্বশীলতা ছিল লক্ষণীয়। এছাড়াও একজন বিচারক হয়ে সংস্কৃতির প্রতি আপনার যে টান দেখেছি তা অতুলনীয়।’’

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহের ব্যক্তিগত গুণাবলী তুলে ধরে বলেন, ‘একজন প্রজ্ঞাবান বিচারকের পাশাপাশি আপনি মানবিক মনের একজন মানুষ। আমরা জানি আপনি নিজ উদ্যোগে এতিমখানা তৈরি করে অনাথ শিশুদের আশ্রয় দিয়েছেন। আপনার মানবিকতা ও ন্যায় বিচারের দৃষ্টান্ত অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য।’

বিদায় অনুষ্ঠানে নিজের অনুভুতি প্রকাশ করে বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ বলেন, ‘বিচার বিভাগের অগ্রযাত্রায় বার এবং বেঞ্চ একে অপরের পরিপূরক। আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় বার এবং বেঞ্চের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকা আবশ্যক। বিচারক হিসেবে দীর্ঘ পথচলায় আমি আপনাদের যে সহযোগীতা পেয়েছি সে জন্য আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আর আমিতো নিজেকে আপনাদেরই একজন মনে করি। কারন বিচারক হবার আগে আমি জেলা কোর্টের আইনজীবী ছিলাম।’

এ সময় সিনিয়র আইনজীবীদের প্রতি অনুরোধ রেখে তিনি বলেন, ‘সার্বিক অর্থনৈতিক বাস্তবতায় জুনিয়র আইনজীবীরা যেন আইন পেশায় টিকে থাকতে পারে এবং পরিবার-পরিজন নিয়ে ভাল থাকতে পারে সে দিকে খেয়াল রাখবেন।’

‘‘তিন দশকের বেশি সময় আপনাদের সাথে কাজ করেছি, তাই আজ আপনাদের ছেড়ে যেতে কষ্ট হচ্ছে। এই সুদীর্ঘ পথ চলায় অনিচ্ছাকৃতভাবে কোনো ভুলত্রুটি হয়ে থাকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আপনার সবাই ভাল থাকবেন। করোনা পরিস্থিতির মাঝে ভার্চুয়াল মাধ্যমে একত্রিত হয়ে আমাকে বিদায় জানানের জন্য আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’’

সংবিধান অনুযায়ী ৬৭ বছর বয়স পর্যন্ত একজন বিচারপতি বিচারকার্য পরিচালনা করতে পারেন। সে অনুযায়ী বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ’র অবসরে যাওয়ার নির্ধারিত দিন আগামী ৭ আগস্ট। তবে এর মধ্যে ছুটি পড়ে যাওয়া আজ শেষ কর্মদিবসে ভার্চুয়াল বিদায় অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।

১৯৫৩ সনের ৮ আগস্ট বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। ইংরেজিতে এমএ এবং এলএলবি ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৭৯ সালের ১ মার্চ জেলা বারে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন তিনি।

১৯৮৩ সলের ২০ এপ্রিল তিনি মুন্সেফ হিসেবে (সহকারী জজ) বিচার বিভাগে যোগদান করেন। এরপর ২০০০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে পদোন্নতি পান। ২০১০ সালের ১২ ডিসেম্বর তিনি হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর ২০১২ সালের ১০ ডিসেম্বর হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান তিনি।

বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ বহুল আলোচিত নারায়ণগঞ্জের সাত খুন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের আহমেদ হত্যা, জাসদ ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক মোমিন হত্যা, লক্ষ্মীপুরে স্কুলছাত্রী স্মৃতিনাথ সীমাকে ধর্ষণের পর হত্যা এবং নরসিংদীর সিক্স মার্ডারসহ আলোচিত অনেক মামলায় রায় দিয়েছেন।