শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ে শুরু, ভারতের বিপক্ষে ড্রয়ের পর স্বাগতিক মালদ্বীপের বিপক্ষে হার। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ফাইনালে খেলার সমীকরণ কঠিন হয়ে ওঠে জামাল ভুঁইয়াদের জন্য। লিগপর্বের শেষ ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে জিততেই হতো, দুর্দান্ত জয়ের কাছাকাছি ছিল বাংলাদেশ। ‘বিতর্কিত’ এক পেনাল্টিতে হয়েছে ফাইনালের স্বপ্নভঙ্গ।
ম্যাচের ৮৭ মিনিটে বাংলাদেশের বিপক্ষে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। পরের মিনিটে অঞ্জন বিস্তা স্পটকিকে গোল করলে ড্রয়ের ফল তুলে নেয় নেপাল। ফাইনালে যেতে নেপালিদের ড্র হলেই চলত।
পেনাল্টির সিদ্ধান্তটি নিয়ে বিতর্ক হবে নিশ্চিত। নিজ বক্সে নেপালের একজনকে পুশ করেছিলেন সাদ। সেটি স্পটকিকের বাঁশি বাজানোর মতো কোনো ঘটনা ছিল না বলেই ভিডিও রিপ্লেতে দেখা গেছে। বাংলাদেশের খেলোয়াড়রাও রেফারির সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি। ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজার পর মাঠেই রেফারিকে ঘিরে ধরে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান জামাল-তপুরা।
বুধবার মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে সাফের ত্রয়োদশ আসরে নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র করেছে বাংলাদেশ। সুমন রেজার গোলে ম্যাচের শুরুতেই এগিয়ে গিয়েছিল লাল-সবুজরা।
৪ ম্যাচে ৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চারে থেকে ১৬ বছর পর সাফের ফাইনালে খেলা স্বপ্ন ভেস্তে গেছে স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজনের শিষ্যদের।
২০০৩ সাফে শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। দুবছর পর পাকিস্তানের করাচী আসরে ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে হেরে টানা দ্বিতীয় শিরোপা হাতছাড়া হয়। পরের টানা চার আসরে গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায়। দীর্ঘ অপেক্ষার পর এসেছিল আরেকটি শিরোপা মঞ্চের সুবাস।
ফাইনালে নেপালের প্রতিপক্ষ হবে রাতের ম্যাচে জয়ী দল, যেখানে লড়বে ভারত ও স্বাগতিক মালদ্বীপ। শিরোপার ফয়সালা ১৬ অক্টোবর, বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায়।
তপু বর্মণের একমাত্র গোলে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে চলতি আসর শুরু করে বাংলাদেশ। পরের ম্যাচের ৫৩ মিনিটে ১০ জনের দল হয়ে পড়ার পরও ইয়াসিন আরাফাতের গোলে ১-১ ব্যবধানে ড্র করে ভারতের বিপক্ষে। স্বাগতিক মালদ্বীপের বিপক্ষে তৃতীয় ম্যাচে হার দেখতে হয় ২-০ ব্যবধানে।
ম্যাচের তৃতীয় মিনিটে তারিক কাজী বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে ব্যর্থ হলে নেপালের আয়ুষ বিপজ্জনক হতে যাচ্ছিলেন, ঢুকে পড়ছিলেন বক্সে, সামনে ছিল শুধু গোলরক্ষক। তাকে পেছন থেকে ফেলে দিয়ে হলুদ কার্ডের বিনিময়ে বিপদ কাটান তপু বর্মণ। বক্সের সামান্য বাইরে সুবিধাজনক জায়গায় ফ্রি-কিক পায় নেপাল। কাজে লাগাতে পারেনি তারা।
সপ্তম মিনিটে আয়ুষের দূরপাল্লার শট সরাসরি যায় গোলরক্ষক জিকোর গ্লাভসে। পরের মিনিটে পাল্টা আক্রমণে ওঠে বাংলাদেশ। ফ্রি-কিক আদায় করে নেয়।
অষ্টম মিনিটে জামাল ভুঁইয়ার দুর্দান্ত বাঁকানো সেই ফ্রি-কিকে মাথা খাটিয়ে গোল আদায় করে নেন সুমন রেজা। মাঠের খেলোয়াড়, ডাগআউটের কোচের সঙ্গে উল্লাসে ভাসে গ্যালারিতে শোরগোল তোলা লাল-সবুজের ঢেউ।
ম্যাচের ১৩তম মিনিটে সুমনের বানিয়ে দেয়া বলে সুযোগ তৈরি করেছিলেন সাদ উদ্দিন, যদিও গোলে রূপ দিতে পারেননি।
পরে ২১ মিনিটে সুমন রেজা ডানপ্রান্ত দিয়ে দুজনকে কাটিয়ে নেপাল বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন দ্রুতগতির সাথে, নিজেই শট নিয়েছিলেন, প্রতিপক্ষ গোলরক্ষকের গ্লাভসে তুলে দেন বল। ইব্রাহিম বক্সে ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থাকলেও তাকে পাস না দিয়ে প্রশ্নের জন্ম দেন সুমন।
ম্যাচের ২৬ মিনিটে পাল্টা আক্রমণে উঠেছিলেন সুমন। সতীর্থরা সেই চেষ্টায় সফল পরিণতি আনতে পারেননি প্রতিপক্ষ রক্ষণের সামনে। ৩২ মিনিটে নেপালের একটি আক্রমণে বক্সের মধ্যে দেয়াল হয়ে দাঁড়ান তপু। ভেস্তে দেন বিপদের শঙ্কা।
প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে বিপদ হতে পারত বাংলাদেশের। আয়ুষের হেড পোস্টের খুব কাছ দিয়ে বেরিয়ে যায়। এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় ব্রুজনের শিষ্যরা।
মধ্যবিরতির পর ফিরে পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে তিনটি বিপজ্জনক আক্রমণ গড়ে নেপাল, যদিও তাদের ফল তুলতে দেয়নি বাংলাদেশ। ৫৪ মিনিটে প্রতিপক্ষ গোলরক্ষককে একা পেয়েও বক্সের মধ্য থেকে জাল খুঁজে নিতে পারেননি সুমন রেজা।
ম্যাচের ৫৩ মিনিটে ইব্রাহিমের হেড পোস্টে বাতাস দিয়ে যায়। পরের মিনিটে গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকোর কল্যাণে গোলহজম করা থেকে বেঁচে যায় বাংলাদেশ।
ম্যাচের ৭৮ মিনিটে বক্সের বাইরে এসে বল ক্লিয়ার করতে যেয়ে হাত ছুঁইয়ে সরাসরি লাল কার্ডে মাঠ ছাড়তে হয় গোলরক্ষক জিকোকে। নিশ্চিত একটি গোল বাঁচালেও ১০ জনের দল হয়ে পড়ে বাংলাদেশ। গোলরক্ষক আশরাফুল রানা আসেন গ্লাভস হাতে বদলি। এসেই দুর্দান্ত একটি সেভে অক্ষত রাখেন জাল।
ম্যাচের ৮৭ মিনিটে বাংলাদেশের হৃদয়ভাঙা পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। যে সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। পরের দুদলই কয়েকটি আক্রমণ শানিয়েছে। নেপাল একটি গোলও পেয়েছিল। অফসাইডে যেটি বাতিল হয়ে যায়। ড্রয়ে শেষ হয় ম্যাচ।