ভারতের বিখ্যাত মদ ব্যবসায়ী বিজয় মাল্যকে যুক্তরাজ্যে আশ্রিত রাখা হবে, না বহিষ্কার করে ভারতে জালিয়াতির মামলা লড়তে পাঠিয়ে দেয়া হবে, এ ব্যাপারে আজ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে ব্রিটিশ আদালত।
বিজয় মাল্য একশ’ কোটি মার্কিন ডলার (সাড়ে ৭৮ কোটি ব্রিটিশ পাউন্ড) খেলাপি ঋণের অভিযোগ মাথায় নিয়ে ২০১৬ সালের মার্চে ভারত ছেলে যুক্তরাজ্যে চলে গিয়েছিলেন। ঋণ খেলাপির দায়ে তার বিরুদ্ধে মামলার বিচারকাজ চালানোর জন্য তাকে দেশে ফেরত চাইছে ভারত সরকার।
এ বিষয়েই সোমবার লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা রয়েছে। এতদিন বিজয় মাল্যর যুক্তরাজ্যে আশ্রয় প্রার্থনা এবং ভারতের তাকে ফেরত চাওয়ার ইস্যুতে শুনানি চলছিল এই আদালতেই।
তবে মাল্যর দাবি, তিনি ঋণ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাননি, সব অর্থই ফিরিয়ে দেবেন। জুলাইয়ে পুরো অর্থমূল্যটি একবারে পরিশোধ করার ব্যাপারে পাওনাদারদের সঙ্গে ‘নিঃশর্ত’ চুক্তি হয়েছিল বলেও দাবি করেন এই ব্যবসায়ী।
ভারত সরকারের পক্ষের আইনজীবী সাংবাদিকদের জানান, তাদের মামলার ফোকাস হচ্ছে মাল্যর এতদিনের কর্মকাণ্ড এবং কীভাবে তিনি বিভিন্ন ব্যাংকের কাছ থেকে সুযোগ নিয়েছিলেন।
বিলাসবহুল জীবনযাত্রার জন্য ব্যাপক আলোচিত ব্যবসায়ী বিজয় মাল্য। বিলাসী জীবনযাপনের জন্য তিনি যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতেন, সেজন্য তাকে ‘ভারতের রিচার্ড ব্র্যানসন’ এবং ‘কিং অব গুড টাইমস’ হিসেবে বিশ্ব গণমাধ্যমগুলো অভিহিত করত।
মাল্য তার সম্পদ গড়া শুরু করেছিলেন কিংফিশার বিয়ারের মধ্য দিয়ে। বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করে তিনি ভারতীয় ক্রিকেট জগত এবং ফর্মুলা ওয়ান রেসিংয়েও টাকা ঢালতে থাকেন। এরপর ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন অধুনালুপ্ত কিংফিশার এয়ারলাইনস।
এই কিংফিশার এয়ারলাইনসের কারণে বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের জটিলতার দায়ে অভিযুক্ত হন মাল্য। বর্তমানে ভারতের সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) তার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড তদন্ত করছে। ইডি মূলত অর্থ সংক্রান্ত অপরাধকর্ম তদন্তের কাজটিই করে থাকে।
প্রয়োজনীয় তহবিলের অভাবে কিংফিশার এয়ারলাইনসের অবস্থা দিনদিন খারাপ হচ্ছিল। টানা পাঁচ বছর লোকসান গোনার পর ২০১২ সালে কোম্পানিটি তাদের ফ্লাইট কার্যক্রম স্থগিত করে দেয়, কারণ ইতোমধ্যে বারবার ঋণ নেয়ার কারণে ঋণদাতারা নতুন করে মাল্যকে তার এয়ারলাইনের জন্য ধার দিতে অস্বীকৃতি জানান।
ফলে মাল্য ওই বছরই নিজের ইউনাইটেড স্পিরিটস গ্রুপের বেশিরভাগ শেয়ার ব্রিটিশ ড্রিংকস জায়ান্ট ডিয়াজিও’র কাছে বিক্রি করে দেন, এই আশায় যে, এতে ইউনাইটেড স্পিরিটসের ঋণ অনেকটা কমবে এবং কিংফিশার এয়ারলাইনসের জন্য নতুন করে তহবিল সঞ্চয় সহজ হয়ে যাবে।
কিন্তু এতে অবশ্য কোনো লাভ হয়নি। কেননা তার পরের বছরই কিংফিশার এয়ারলাইনস টানা পাঁচ বছর দুরবস্থায় থাকার কারণে তার ফ্লাইং পারমিট হারায়।
এতে কর্মীদের অপরিশোধিত মজুরি ও বেতন, কোম্পানি পরিচালনা সংক্রান্ত ব্যয় মিলিয়ে বিজয় মাল্যর মোট ঋণ একশ’ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে।