বিজ্ঞাপনে রসালো চোখ ধাঁধানো ছবি ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন নির্মাতারা আমাদের বার্গার, চিপস, কোমল পানীয়সহ নানারকম সুস্বাদু, কিন্তু অস্বাস্থ্যকর খাবার খেতে প্রভাবিত করে ফেলে।
আমরাও সহজেই পটে যাই সেসব লোভনীয় ছবি দেখে আর চটকদার ভাষা শুনে। কিন্তু এমন যদি হয়, বিজ্ঞাপন আমাদের কাছে স্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রির চেষ্টা করছে, তাহলে?
পপাই দ্য সেইলর ম্যান ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যের বিজ্ঞাপন
ছোটবেলা থেকে পপাইয়ের কার্টুনছবি আমরা অনেকেই দেখেছি। ‘পপাই দ্য সেইলর ম্যান’-এর শত্রু ব্লুটো তার তুলনায় আকারে দ্বিগুণ। অথচ প্রিয় শক্তিবর্ধক খাবারের কৌটো থেকে এক গাল ভরা সবুজ যাদুকরী খাবার চিবিয়ে নিলেই পপাই হয়ে ওঠে ভীষণ শক্তিশালী। দ্বিগুণ আকারের ব্লুটোকে সে তখন পেশিবহুল এক হাতে তুলে শূন্যে ছুড়ে ফেলে দিতে পারে। বাঁচিয়ে আনতে পারে বান্ধবী অলিভ অয়েলকে শত্রুর খপ্পর থেকে।
সেই যাদুকরী খাবারটি আর কিছু নয়, স্পিনাচ বা পালংশাক।
১৯৩০ এর দশকে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে চলমান চরম মন্দার সময়ও পালংশাকের বিক্রি বেড়ে গিয়েছিল এক-তৃতীয়াংশ। আর এই বিক্রি বৃদ্ধির কৃতিত্ব পপাই কার্টুনকেই দেওয়া হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রে পপাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতার মাত্রা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে ওই সময় পালংশাক উৎপাদনকারী এলাকাগুলোর প্রধান শহরগুলোতে এই নাবিক চরিত্রটিকে ‘হিরো’ হিসেবে নিয়ে তার ভাষ্কর্য নির্মাণ করা হতে থাকে।
শুধু অর্থনৈতিক বিষয় নয়। কৃতজ্ঞতার আরেকটা কারণ হলো, পপাই কার্টুনে উদ্বুদ্ধ হয়ে একটা প্রজন্ম অনেক বেশি পালংশাক খেয়েছে। ফলে অনেক বেশি ভিটামিন পেয়েছে আগের ও পরের প্রজন্মগুলোর চেয়ে, যা হয়তো পপাই না থাকলে সম্ভব হতো না।
কিন্তু বর্তমানে স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রচারের জন্য আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন বা বিজ্ঞাপন জাতীয় অনুষ্ঠান হয় না বললেই চলে। বিশেষ করে শাকসবজি বিক্রি বাড়াতে খুব একটা চেষ্টা করছে না বিপণন বিশ্ব। যুক্তরাজ্যে মাত্র ১.২ শতাংশ বিজ্ঞাপন শাকসবজির প্রচারের জন্য তৈরি হয় বলে জানিয়েছে ফুড ফাউন্ডেশন নামের একটি সংস্থা।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘পিজ প্লিজ’ নামক প্রচারণা সংস্থার সঙ্গে এ নিয়ে কাজ করছেন শেফ হিউ ফার্নলি-হুইটিংস্টল ও জেইমি অলিভার। তাদের মতে, শাকসবজি গ্রহণের হার বাড়াতে হলে এমন বিজ্ঞাপন তৈরি করতে হবে যেন এর প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যায়।
এই দলটির মতে, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে শাকসবজির পক্ষে যত বিজ্ঞাপন বা প্রচারণা আছে সবগুলোতে ‘স্বাস্থ্যকর’ বিষয়টিকে গুরুত্ব বেশি দেয়া হয়। এর ফলে শাকসবজি খাওয়াটাকে একটা বিরক্তিকর দায়িত্বের মতো মনে হয়।
‘মানুষ সুস্বাস্থ্য জিনিসটা কিনতে চায় না, তারা কেনে সুখ। এটাই সফল বিজ্ঞাপনের মূলমন্ত্র,’ বলেন হিউ ফার্নলি।
অন্যদিকে বিজ্ঞাপন নির্মাতা ড্যান পার্কার বলেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিজ্ঞাপন নির্মাতারা ‘অন্ধ’ থাকেন। তারা দেখেনই না তাদের তৈরি বিজ্ঞাপনগুলো অন্যদের জীবনে কী করছে।
জাংকফুড খেতে খেতে টাইপ টু ডায়াবেটিস ধরা পড়ার পর উপলব্ধি করেন ড্যান, কোমল পানীয়, বার্গার আর চিপসের মতো খাবারের বিপণনে যে কৌশল তিনি ব্যবহার করেছেন, একই কৌশল ব্যবহার সম্ভব স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রচারে।
তিনি জানান, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কার্যকর কৌশল হলো কোনো জিনিসকে স্বাভাবিক হিসেবে প্রচার করা। কোনো খাবারকে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক অংশ হিসেবে এবং জীবনকে স্বাভাবিক ও সুখী করতে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখাতে পারলেই মানুষ তা সহজে গ্রহণ করে।
আর শাকসবজিকে বিরক্তিকর অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে না দেখিয়ে যদি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনের অংশ, সুখকর আকর্ষণীয় কিছু হিসেবে তুলে ধরা যায়, তাহলেই মানুষ শাকসবজি খেতে অনেক বেশি আগ্রহী হবে, যেমনটা হয়েছিল পপাই দ্য সেইলর দেখে।