বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখার বিপরীতে ওপাড়ে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি অতিরিক্ত সৈন্য সমাবেশ করেছে। শূন্যরেখায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সেখান থেকে সরে যেতে নির্দেশ দেয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সীমান্তবর্তী স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝেও।
এ নিয়ে সীমান্তে বিজিবি কড়া সর্তক অবস্থান এবং নজরদারি অব্যাহত রেখেছে। সীমান্তের শূন্যরেখার কাছাকাছি এলাকায় মিয়ানমার অভ্যন্তরে অতিরিক্ত সৈন্য সমাবেশের বিষয়টি অবহিত করে বিজিপির কাছে পতাকা বৈঠকের আহবান জানিয়েছে বিজিবি।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের হুমকি এবং অতিরিক্ত সৈন্য সমাবেশ করা হয় বলে জানিয়েছেন বিজিবির ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান। তবে এ নিয়ে সীমান্তে আপাতত কোন ধরনের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি দেখছেন না বলে জানান তিনি।
শূন্যরেখায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা ও সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের রবাত দিয়ে লে. কর্নেল মঞ্জুরুল বলেন: গত ২৫ আগষ্ট মিয়ানমারে নিরাপত্তা বাহিনীর চৌকিতে হামলা ঘটনার পর থেকে দেশটি থেকে পালিয়ে তমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় আশ্রয় নিয়েছে অন্তত ৭ হাজারের কাছাকাছি রোহিঙ্গা। সেখান থেকে সরে যেতে মিয়ানমারের বিজিপি গত ফেব্রুয়ারির প্রথমদিক থেকে মাইকিংসহ নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল।
“সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সকালেও তমব্রু সীমান্তের শূণ্যরেখার ক্যাম্পের কাছাকাছি বিপরীতে এসে মিয়ানমারের বিজিপি রোহিঙ্গাদের সেখান থেকে সরে যেতে হুমকি দেয়। কয়েক ঘণ্টা পর পর মাইকিং করে রোহিঙ্গাদের সেখান থেকে যাওয়ার নির্দেশনা দিচ্ছে।”
বিজিবির অধিনায়ক বলেন: শূন্যরেখায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সরে যেতে হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি তমব্রু সীমান্তের ক্যাম্পটির বিপরীতে মিয়ানমার অভ্যন্তরে বিজিপি অতিরিক্ত সৈন্য সমাবেশ করেছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও রোহিঙ্গারাও জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে বিজিপির কয়েকেটি গাড়ী করে বেশ কিছু সৈন্য মোতায়েন করতে দেখেছে। এতে অন্তত ২ শতাধিক সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে। এর আগে থেকেও সীমান্তের ওপাড়ে আরো ২ শতাধিক সীমান্তরক্ষী মোতায়েন ছিল।
এ নিয়ে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির কাছে চিঠি পাঠিয়ে বিজিবির সঙ্গে পতাকা বৈঠকের আহবান জানিয়েছে বিজিবি। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে এবং বিকালে বিজিপির কাছে পতাকা বৈঠকের আহবান জানিয়ে চিঠি দেয়া হলেও এখনো কোন ধরণের সাড়া পাওয়া যায়নি।
বিজিবি অধিনায়ক বলেন, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সীমান্ত এলাকায় বিজিবি কড়া সতর্ক অবস্থান নেয়ার পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে নজরদারীও। তারপরও এ নিয়ে সীমান্তে আপাতত কোন ধরণের উত্তেজনার আশংকা করছি না।
শূন্যরেখার ক্যাম্পটির ব্লক ভিত্তিক মাঝি ( প্রতিনিধি ) মোহাম্মদ আরিফ বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে বিজিপির ৭/৮ টি ট্রাকে করে বেশ কিছু সৈন্য মোতায়েন করতে দেখা গেছে। প্রতি গাড়ীতে ২০/২৫ জন করে অন্তত ২ শতাধিকের বেশী সৈন্য মোতায়েন করা হয়। এসব সৈন্য শূণ্যরেখার ক্যাম্পটির সীমান্তের বিপরীতে মিয়ানমার অভ্যন্তরে অবস্থান করছে।
“বৃহস্পতিবার সকালে শূণ্যরেখার ক্যাম্পের কাঁটা তারের বেড়ার কাছে এসে বিজিপির সৈন্যরা অস্ত্র তাক করে রোহিঙ্গাদের সরে যেতে হুমকি দেয়। এমনকি বিজিপির সৈন্যরা সীমান্তের কাঁটা তারের উপর মই দিয়ে ক্যাম্পে প্রবেশ করে হামলারও চেষ্টা চালায়। এসময় মিয়ানমার অভ্যন্তরে সীমান্তবর্তী বিভিন্ন পাহাড়ে ভারী অস্ত্র-সশস্ত্র নিয়ে বিজিপির সৈন্যদের অবস্থান নিতে দেখা যায়। তবে দুপুর ২ টার পর বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবির সতর্ক অবস্থানের কারণে বিজিপি এসব ভারী অস্ত্র-সশস্ত্র সরিয়ে নিয়েছে।”
একই ধরণের তথ্য জানালেন তমব্রু সীমান্তের শূণ্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্পটির ব্লক ভিত্তিক মাঝি নুর মোহাম্মদ, শফিউল আলম ও মো. আয়ুব।
তমব্রু বাজার পাড়ার জহিরুল কাদের বলেন, গত ৯ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের উপ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর জেনারেল অং সো তমব্রু সীমান্ত পরিদর্শন করেন। তিনি শূন্যরেখার ক্যাম্পটির কাছে এসে রোহিঙ্গাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর থেকে প্রতিদিনই মাইকিং করে রোহিঙ্গাদের সরে যেতে হুমকি দেয়া হচ্ছিল।