বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) বহুতল ভবন ভাঙার রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
তবে ভবন সরিয়ে নিতে সময়ের প্রয়োজন বলে বিজিএমইএ এর আইনজীবী আবেদন জানালে কতদিন সময় লাগবে তা লিখিত ভাবে আবেদন করতে বলেন আদালত।
বৃহস্পতিবার সে আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত আদেশ দেবেন কত দিনের মধ্যে ওই ভবন সরিয়ে নিতে হবে।
রোববার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বধীন তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ রিভিউ খারিজের রায় দেন।
আদালতে বিজিএমইএ ভবনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আর এ্যমিকাস কিউরি আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
রিভিউ খারিজের এই রায়ের মধ্য দিয়ে বিচারের সব ধাপ শেষ হয়ে যাওয়ায় বিজিএমইএ ভবন ভাঙতেই হবে বলে জানান আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
এর আগে ২ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি মুলতবি করে আদালত ‘নট টুডে’ আদেশ দেন।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রিভিউ আবেদনের শুনানির জন্য ২ মার্চ দিন ধার্য করেছিলেন আদালত।
গত বছরের ৮ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের রায় স্থগিত চেয়ে রিভিউ আবেদন করে বিজিএমইএ। সেই সাথে বহুতলভবনটি ভেঙ্গে ফেলার জন্য তিন বছরের সময় চাওয়া হয়।
এর আগে দেয়া আপিলের রায়ে বলা হয়, অবিলম্বে এই অবৈধ বহুতল ভবন ভাঙ্গতে হবে। ভবন ভাঙ্গার যাবতীয় খরচ বিজিএমইএকেই বহন করতে হবে। বিজিএমইএ না ভাঙ্গলে রায়ের কপি পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে রাজউককে ভবনটি ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেয় আপিল বিভাগ। এজন্য যে অর্থ প্রয়োজন তা বিজিএমইএর কাছ থেকে নিতে বলা হয়েছে।
রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই কারওয়ানবাজার সংলগ্ন বেগুনবাড়ি খালে বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে উল্লেখ করে ২০১০ সালের ২ অক্টোবর ইংরেজি দৈনিক ‘নিউ এজ’ পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই দিনই প্রতিবেদনটি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ডি এইচ এম মনিরউদ্দিন আদালতে উপস্থাপন করেন।
এর পরদিন বিজিএমইএ ভবন কেন ভাঙ্গার নির্দেশ দেওয়া হবে না, তার কারণ জানতে চেয়ে হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন।
২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ বিজিএমইএ’র ভবন ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দিয়ে রায় দেন।
রায়ে বিজিএমইএকে নিজস্ব অর্থায়নে ভবনটি ভাঙ্গতে বলা হয়। ভবনটি নির্মাণের আগে ওই স্থানের ভূমি যে অবস্থায় ছিলো সে অবস্থায় ফিরিয়ে আনতেও নির্দেশ দেওয়া হয়।
ওই বছরের ৫ এপ্রিল বিজিএমইএ’র আবেদনে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন।
পরবর্তী সময়ে আপিল বিভাগ স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরো বাড়ান। এর দুই বছর পর ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ হাইকোর্টের ৬৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপির পর লিভ টু আপিল করে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ।
যেটা ২০১৬ সালের ২ জুন খারিজ হয়ে যায়। এরপর বিজিএমইএ আবার রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে (রিভিউ) আবেদন করেন।
১৯৯৮ সালের ২৮ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিএমইএ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ভবন নির্মাণ শেষ হলে ২০০৬ সালের ৮ অক্টোবর বিজিএমইএ ভবন উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এরপর থেকে বিজিএমইএ ভবনটি তাদের প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করছে।