তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র নির্বাচনে ভোটের পরিবেশ তৈরি হলেও প্রতিপক্ষকে ভয়ভীতি দেখোনো হচ্ছে অভিযোগ করে স্বাধীনতা পরিষদের প্যানেল লিডার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত নির্বাচনের মতো এবারও ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেয়া, এজেন্ট বের করে দেয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না।
রোববার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে বিজিএমইএ নির্বাচন উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ আশঙ্কার কথা জানান তিনি।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত নির্বাচনে অনেক জাল ভোট পড়েছিল। ভোটার না এলেও তার ভোট কাস্ট হয়েছিল। সে সময় আমার স্ত্রীকে এজেন্ট করেছিলাম কিন্তু তাকে বের করে দেয়া হয়েছিল। নানান ভয়ভীতি দেখানো হয়েছিল, তবে জাল ভোট পড়লেও পোশাকখাতের বৃহত্তর স্বার্থের জন্য আমরা সে নির্বাচনটি মেনে নিয়েছিলাম।
অনুষ্ঠানে তিনি তার প্যানেলের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন, এবার ভোটের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। আমাদের প্যানেল নির্বাচনে থাকবে, ঢাকার ২৬ পদে আমাদের প্রার্থী থাকবে। চট্টগ্রাম থেকেও আমরা প্রার্থী দেব। পুরো প্যানেল নিয়ে নির্বাচন করবো।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা নির্বাচিত হলে আরএমজি উইং থেকে পণ্যের ব্র্যান্ড, বাজার সম্পর্কে তথ্য দেয়া এবং বায়ারের সঙ্গে কোনো মতবিরোধ হলে তার সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হবে। পাশাপাশি শ্রম আইনের অচল ধারাগুলো সংশোধন করে যুগোপযোগী শিল্পবান্ধব শ্রমনীতি তৈরি করার উদ্যোগ নেয়া হবে।
তিনি বলেন, কবে বিদায় হবে করোনা, কবে স্বাভাবিক হবে বিশ্ববাজার, তা অনিশ্চিত। এমন বাস্তবতায় পোশাক খাত থেকে ২০২১ সালে ৫০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয় অর্জন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। এসব ব্যর্থতার দায় কেবল করোনাভাইরাসের নয়। পোশাক খাতে নেতৃত্বহীনতা, সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে না পারা, আইনি সংস্কার করতে না পারার কারণও রয়েছে।
তবে করোনা সংকটে খারাপ সময়ে সরকারের কাছ থেকে শিল্প বান্ধব বেশ কিছু সিদ্ধান্ত আদায় করে নিতে পারার জন্য বিজিএমইএ’র বর্তমান নেতৃত্বকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
লিখিত বক্তব্যে স্বাধীনতা পরিষদের প্যানেল লিডার বলেন, সদস্যদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার ব্রত নিয়ে স্বাধীনতা পরিষদের যাত্রা শুরু। ২০১৯ সালে তৈরি পোশাক মালিকদের একটা অংশ একত্র হয়ে এই সংগঠনটি গড়ে তুলেছিলাম বলেই হয়ত বিজিএমইএতে নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোটের সংস্কৃতি ফিরে এসেছে।
করোনা সংকট কাটিয়ে উঠতে বিনা সুদে সরকার পোশাক খাতে যে ঋণ দিয়েছে তা শোধ দেয়ার সময় অতিরিক্ত ৬ মাসের মোরাটরিয়ামসহ কমপক্ষে ৩ বছর করার দাবি জানান তিনি।
নির্বাচনে বিজয়ী হলে বিভিন্ন উদ্যোগ নিবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। যেমন-
১. এই মুহুর্তে আমাদের অন্যতম সংকট, দাম নিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতা। এর সুফল কিন্তু নিচ্ছেন ক্রেতারা। আমরা মনে করি বিজিএমইএ ইউডি ইস্যুর ক্ষেত্রে প্রোডাক্ট কস্ট বিশ্লেষণ করে ন্যূনতম সিএম এর নিশ্চয়তা বিধান করতে পারে। এটি করতে পারলে আবারো শিল্পের বিকাশ হবে।
২. ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্পের জন্য ন্যূনতম নিরাপত্তা মানদন্ড তৈরি করা।
৩. শ্রম আইনের অচল ধারাগুলো সংশোধন করে যুগোপযোগী করা।
৪. প্রত্যেক বায়ারের জন্য ইউনিফাইড কোড অব প্র্যাকটিস তৈরি করা।
৫. নতুন বাজার ধরতে বিদেশে মিশনগুলোতে আরএমজি উইং খোলা। এই উইং থেকে পণ্যের ব্র্যান্ডিং, নতুন বাজারের বায়ার সম্পর্কে গার্মেন্টেস মালিকদের তথ্য দেয়া এবং বায়ারের সঙ্গে কোন মতবিরোধ হলে তার সমাধানে উদ্যোগী হবে।
৬. ট্রেড লাইসেন্স, ফায়ার লাইসেন্স, বন্ড লাইসেন্স, পরিবেশ লাইসেন্সসহ আবশ্যক লাইসেন্সের মেয়াদ কমপক্ষে ৩ বছর করা।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ৪ এপ্রিল ঢাকা ও চট্টগ্রামে এক যোগে অনুষ্ঠিত হবে ২০২১-২০২৩ সালের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন। ২৫ এপ্রিলের মধ্যে মনোনয়ন দাখিল করতে হবে। আর ৪ মার্চ প্রকাশ করা হবে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা।
এবারের নির্বাচনে বর্তমান সভাপতি রুবানা হকের প্যানেল ফোরাম এবং সম্মিলিত পরিষদ নামের আরেকটি প্যানেল অংশ নিচ্ছে।