চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

বিচার বিভাগকে জিম্মি করে রাখা হচ্ছে: প্রধান বিচারপতি

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, ‘বিচার বিভাগকে জিম্মি করে রাখা হচ্ছে। মনে রাখবেন রাষ্ট্রের কাছে ব্যক্তির চেয়ে প্রতিষ্ঠান বড়।রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ফেয়ার-প্লে হচ্ছে না। ‘এভাবে আর কতো’ প্রশ্ন রেখে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে এসব কথা বলেছেন প্রধান বিচারপতি।

নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশে সরকার আরো দুই সপ্তাহ সময় আবেদনের পরে এসব কথা বলেন প্রধান বিচারপতি।

মঙ্গলবার অ্যাটর্নি জেনারেলের করা দুই সপ্তাহ সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আট বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ সময় আবেদন মঞ্জুর করেন।

এর আগে ২৭ ফেব্রুয়ারি অ্যাটর্নি জেনারেলের করা দুই সপ্তাহ সময় আবেদন মঞ্জুর করে ১৪ মার্চ শুনানির দিন ধার্য করেছিলেন আদালত। ১৯৯৯ সালের দুই ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলায় (বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ) ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেওয়া হয়। ওই রায়ে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল।

সে ধারাবাহিকতায় আপিল বিভাগের নির্দেশনার পর ২০১৫ সালের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় শৃঙ্খলা সংক্রান্ত একটি খসড়া বিধি প্রস্তুত করে সুপ্রিমকোর্টে পাঠায়। কিন্তু গত বছরের ২৮ আগস্ট আপিল বিভাগ খসড়ার বিষয়ে বলেন, শৃঙ্খলা বিধিমালা সংক্রান্ত সরকারের খসড়াটি ছিল ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার হুবহু অনুরূপ, যা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থী।

এরপর সুপ্রিমকোর্ট একটি খসড়া বিধিমালা করে আইনমন্ত্রণালয়ে পাঠায়। একইসঙ্গে ৬ নভেম্বরের মধ্যে তা প্রণয়ন করে প্রতিবেদন আকারে আদালতকে জানাতে আইন মন্ত্রণালয়কে বলা হয়।

গত ৬ নভেম্বর সে অনুসারে মামলাটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি জানাতে না পারায় আপিল বিভাগ বিধিমালা চূড়ান্তের বিষয়ে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, তা লিখিতভাবে জানাতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দিয়ে ৭ নভেম্বর এ বিষয়ে আদেশের দিন ধার্য করেন।

কিন্তু ৭ ডিসেম্বর অ্যাটর্নি জেনারেল সময়ের আবেদন জমা দেন, যাতে বিধিমালাটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর কথা উল্লেখ করেন তিনি। তখন সর্বোচ্চ আদালত ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত তাকে সময় দেন।

পরে ২৪ নভেম্বর অ্যাটর্নি জেনারেল গেজেট প্রকাশে আরো এক সপ্তাহ সময় চাইলে আপিল বিভাগ তা মঞ্জুর করেন। কিন্তু এক সপ্তাহ পর গত ১ ডিসেম্বর পুনরায় এক সপ্তাহ সময় চাইলে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষকে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছিলেন।

কিন্তু ৮ ডিসেম্বর বিধিমালার গেজেট প্রকাশ না করায় আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবকে ১২ ডিসেম্বর আদালতে হাজির করতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে মৌখিক নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা নেতৃত্বাধীন আট বিচারপতির বেঞ্চ।

তবে সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক এবং মোহাম্মদ শহিদুল হকের হাজির হওয়ার একদিন আগেই নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ সংক্রান্ত বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা নেই বলে রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন।

রাষ্ট্রপতির দেওয়া সিদ্ধান্তের বিষয়টি ১২ ডিসেম্বর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতকে জানিয়েছিলেন, ‘রাষ্ট্রপতিকে এ বিষয়ে ভুল বোঝানো হয়েছে’ উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ ১৫ জানুয়ারির মধ্যে বিধিমালার গেজেট আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেন। এসময় আদালতে হাজির ছিলেন আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক এবং মোহাম্মদ শহিদুল হক।

কিন্তু গত ১৫ জানুয়ারি অ্যাটর্নি জেনারেল আবার সময়ের আবেদন করেন। সেসময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিধিমালার গেজেট আদালতে দাখিলের জন্য ৫ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য্ করেছিলেন আপিল বেঞ্চ।

এক সপ্তাহ পর গত ১২ ফেব্রুয়ারি আচরণবিধির গেজেট করতে কেন সময় দরকার, তার কারণ ১৩ ফেব্রুয়ারি লিখিতভাবে জানাতে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছিল আপিল বিভাগ।

এরপর ১৩ ফেব্রুয়ারি অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে জানান বিধিমালাটি বিবেচনার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়েছে। পরে তিনি ২ সপ্তাহ সময় আবেদন করলে আপিল বেঞ্চ বিধিমালার গেজেট প্রকাশের জন্য ২ সপ্তাহ সময় দেন।