বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিবৃতি দিয়েছে বিএনপি। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সহস্র মৃত্যু, বিচারবহির্ভূত হত্যা জাতিকে ব্যথিত করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত এই সরকারের অধীনে এ দেশে প্রায় তিন হাজার মানুষ পুলিশ, র্যাব, ডিবির হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। ২০২০ সালের ২৫ জুন পর্যন্ত ১৩৪ জন মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। এর অধিকাংশই বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী। ১০ বছর সময়ের মধ্যে এ দেশে জেল কাস্টডিতে মারা গেছে ৭৯৫ জন মানুষ। গুম হয়েছে ৬০১ জন মানুষ। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭৮০৬ জন নারী। ১৯৩৪ জন শিশু নির্যাতিত হয়েছে, ১৮ জন শিশু হত্যার শিকার হয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে এক লক্ষের উপর রাজনৈতিক মামলা হয়েছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, অতি সম্প্রতি মেজর (অব) সিনহাকে পুলিশ হত্যা করেছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। অনেক পরিবারের সদস্যরা মামলা করতে সাহস পায় না। গর্বিত সেনাবাহিনীর একজন মেজরের এ ধরণের হত্যাকাণ্ডের জন্য অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা, সমগ্র জাতি যেভাবে প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছে তাতে মেজর সিনহা’র পরিবার সাহস পাচ্ছে। বিচারপ্রার্থী হতে পারছে। আমরাও মেজর সিনহা হত্যার বিচার চাই, সকল বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ডের বিচার একদিন এ দেশের মাটিতে হবে সে আস্থা এবং বিশ্বাস রাখি।
সেখানে বলা হয়, মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর আইএসপিআর থেকে জানানো হয়েছে যে, পুলিশের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে ভবিষ্যতে আর এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না। যদি তাই হয়, তাহলে আমরা বলতে চাই, ক্রসফায়ারে হত্যাকাণ্ড ঘটানো বা না ঘটানো পুলিশ বাহিনীর সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ঠাণ্ডা মাথার সুপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত? এতদিন বিএনপির পক্ষ থেকে এটাই বলে আসা হয়েছে। আমরা বারবার বলেছি, ক্রসফায়ারে সাজানো গল্প মিথ্যা, বানোয়াট, এটা সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকার নীল নকশার অংশ। মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে, এই হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিত আমাদের এতদিনের দাবি অভিযোগ সত্য বলে প্রমাণিত হলো।
বিবৃতিতে বলা হয়, বিনাবিচারে মানুষ খুন-গুম কখনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে যায় না, আমাদের সংবিধান এটাকে সমর্থন করে না। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য, ভিন্নমতকে দমন করার জন্য এ ধরনের খুন-গুম-অত্যাচার-নিপীড়ন ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্ট, ১৯৭৩ এর ধারা-২ (২) (ক) এর অধীন মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবেও গণ্য হতে পারে। এ সরকারের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে বাংলাদেশের ওপর অসংখ্য প্রতিবেদন তৈরি করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ইউরোপিয় ইউনিয়র, ইউএসএ স্টেট ডিপার্টমেন্ট, যুক্তরাজ্য সরকারসহ অনেক দেশি ও আন্তর্জাতিক সংস্থা। দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে অসংখ্য প্রতিবেদন। কিন্তু এ সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সবকিছুকেই উপেক্ষা করছে। এটাই ফ্যাসীবাদী সরকারের বৈশিষ্ট্য। আমরা এর অবসান চাই।