নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা বিধির গেজেট বিষয়ে আদেশ বুধবার। দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের করা সময় আবেদনের প্রেক্ষিতে আদেশের এই দিন ধার্য করেন।
এদিকে এই শৃঙ্খলাবিধি প্রকাশের মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগের উপর শাসন বিভাগের কর্তৃত্ব ফুটে উঠেছে দাবি করে উদ্বেগ জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ ছয়জন আইনজীবী।
সুপ্রিম কোর্ট দিবস পালন উপলক্ষ্যে সোমবার ড.কামাল হোসেন, রফিক-উল হক, এম আমীর-উল ইসলাম, মইনুল হোসেন, এ এফ হাসান আরিফ ও ফিদা এম কামাল এই বিবৃতি দেন।
যেখানে বলা হয়, ‘অধস্তন আদালতে বিচার বিভাগীয় পদে নিয়োগ, নিয়ন্ত্রণ, পদোন্নতি প্রদান ও ছুটি মঞ্জুরিসহ শৃঙ্খলা বিধান সংক্রান্ত বিষয় সংবিধানে দুটি অনুচ্ছেদ ১১৫ ও ১১৬ তে পৃথকভাবে বিচার বিভাগের অংশে প্রণীত আছে। তথাপি উক্ত আইন প্রণয়নের মাধ্যমে অধস্তন বিচার বিভাগের বিচারকদের নির্বাহী বিভাগের অধস্তন হিসেবে গণ্য করা হয়েছে, যা ক্ষমতার পৃথকীকরণ নীতির লঙ্ঘনসহ মাসদার হোসেন মামলার রায়ের সাথেও সাংঘর্ষিক’।
এর আগে গত ১৩ ডিসেম্বর আদালত এবিষয়ে আদেশের জন্য ২ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছিলেন।
আর গত ১১ ডিসেম্বর নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা বিধির গেজেট প্রকাশ করে সরকার। আদেশের দিন প্রকাশিত গেজেট আদালতে উপস্থাপনের কথা ছিল।
এদিকে প্রকাশিত গেজেটের বিধির ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের কাছ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আসে।
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘গেজেট প্রকাশ হওয়ায় একটি বিব্রতকর অবস্থার পরিসমাপ্তি হয়েছে।’
আর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘গেজেট প্রকাশ করায় সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা ক্ষুণ্ণ করা হয়নি বরং কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।’
তবে গেজেট প্রকাশের পর সাবেক আইনমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘গেজেট প্রকাশের মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ‘মৃত্যু’ ঘটেছে।’
এদিকে ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম বলেন, ‘যে প্রক্রিয়ায় এই গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে তা সাংধিানিকভাবে বৈধ প্রক্রিয়ায় নয়। এই গেজেটের গোড়াতেই গলদ রয়েছে।’
এই গেজেট প্রকাশের জন্য সরকারকে বহুবার সময় দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্ট। তবে এর আগে বিধিমালায় আপত্তি জানিয়ে তা ফেরত পাঠিয়েছিলেন পদত্যাগ করা প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।
১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলায় (বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ) ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেওয়া হয়। ওই রায়ে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল।
আপিল বিভাগের নির্দেশনার পর ২০১৫ সালের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় শৃঙ্খলা সংক্রান্ত একটি খসড়া বিধি প্রস্তুত করে সুপ্রিমকোর্টে পাঠায়। কিন্তু গত বছরের ২৮ আগস্ট আপিল বিভাগ খসড়ার বিষয়ে বলেন, শৃঙ্খলা বিধিমালা সংক্রান্ত সরকারের খসড়াটি ছিল ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারি (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার হুবহু অনুরূপ, যা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থী।
এরপর সুপ্রিম কোর্ট একটি খসড়া বিধিমালা করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। একই সঙ্গে ৬ নভেম্বর ২০১৬ এর মধ্যে খসড়া বিধিমালা প্রণয়ন করে প্রতিবেদন আকারে আদালতকে জানাতে আইন মন্ত্রণালয়কে বলা হয়। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ থেকে খসড়া বিধিমালা প্রকাশের জন্য বার বার সময় নেয়া হয়।