বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের এক দুর্দান্ত স্পাই ‘মাসুদ রানা’। গোপন মিশন নিয়ে ঘুরে বেড়ায় দেশ-দেশান্তর। বিচিত্র তার জীবন। যে জীবন টানে সবাইকে। অন্যায়-অবিচার দেখলেই রুখে দাঁড়ায়, পদে পদে তার শুধুই মৃত্যুর হাতছানি। গল্পে পড়া কল্পনায় দেখা ‘মাসুদ রানা’ এমনই। আর তাকে পর্দায় তুলে ধরতেই ২ আগস্ট থেকে শুরু হয়েছিলো ‘মেন’স ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি চ্যানেল আই হিরো’ প্রতিযোগিতামূলক রিয়েলিটি শো। যার ট্যাগ লাইন ছিলো ‘কে হবে মাসুদ রানা?’
অডিশন পর্ব প্রচারের পর পরই ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয় এই রিয়েলিটি শো’টি। সেই সঙ্গে এটি নিয়ে সমালোচনারও ঝড় বইয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিশেষ করে প্রাথমিক বাছাই পর্বে থাকা বিচারকদের ‘আচরণ’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেন অনেকে। তুলোধুনো করা হয় ইউটিউবেও, ব্যক্তিগত আক্রমণেরও শিকার হন প্রত্যেক বিচারক। শুধু তাই নয়, বিচারকদের ব্যক্তিগত ফোন নাম্বারেও আসে হুমকি!
বিচারকদের উপর আক্রমণাত্মক কথা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হেনস্তাসহ এই রিয়েলিটি শো’র চ্যাম্পিয়ন ‘মাসুদ রানা’ চলচ্চিত্রে আদৌ অভিনয় করবে কিনা, এসব বিষয় নিয়ে খোলাখুলি চ্যানেল আই অনলাইনের সাথে কথা বলেছেন ‘মেনস ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি চ্যানেল আই হিরো-কে হবে মাসুদ রানা?’ প্রকল্পটির অধিকর্তা ইবনে হাসান খান:
‘মেনস ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি চ্যানেল আই হিরো-কে হবে মাসুদ রানা?’র চ্যাম্পিয়ন কি ‘মাসুদ রানা’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করছে?:
যে প্রথম হবে তার জন্য পুরস্কার হিসেবে একটি গাড়ি এবং ‘মাসুদ রানা’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করবে, শুরুতে এমনটাই কথা ছিলো। যে কারণে আমরা এই রিয়েলিটি শোয়ের ট্যাগলাইন রেখেছিলাম ‘কে হবে মাসুদ রানা?’ বেশি ফোকাস করা হয়েছিলো ‘মাসুদ রানা’কে, হিরোকে নয়। কিন্তু এই মুহূর্তে আমরা সবাই জানি, জাজ মাল্টিমিডিয়া একটু বেকায়দায় রয়েছে। এই কারণে তাদের সাথে আমাদের প্রপার কমিউনিকেশন হচ্ছে না। ঠিক একই কারণে আমরা এখনো বুঝতে পারছি না রিয়েলিটি শো-এর চ্যাম্পিয়ন হওয়া ছেলেটা আদৌ ‘মাসুদ রানা’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে পারবে কিনা! ব্যাসিকেলি ব্যাপারটা তো এরকম না যে, এই রিয়েলিটি শোয়ের চ্যাম্পিয়ন হলো, আর আমরা ওকে হিরো করে ছেড়ে দিলাম। একটা সিনেমা দিয়ে একজন হিরোর তো জীবনে কিছুই হয় না, হিরোর জীবনে অসংখ্য সিনেমা লাগে। আর অসংখ্য সিনেমা কে বানায়? বানায় ইমপ্রেস টেলিফিল্ম। তো মাসুদ রানার রিয়েলিটি-শো থেকে যে তিনটা ছেলে বের হয়ে আসবে তাদের আমাদের সাথে চুক্তি থাকবে, কিংবা চুক্তি যদি নাও থাকে তবুও আমরা এই তিনটা ছেলেকে দিয়ে বছরব্যাপী ইমপ্রেস টেলিফিল্মের চলচ্চিত্র অভিনয় করাবো। চ্যানেল আইয়ের সিরিয়ালগুলোতে অভিনয় করবে, চ্যানেল আইয়ের নাটকগুলোতে তারা অভিনয় করবে। এছাড়া ইউনিলিভার যেহেতু এই রিয়েলিটি শোয়ের সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষক, তারাও তাদের বড় প্রজেক্টগুলোতে যে কাজ হয়, যেমন ‘ক্লোজআপ কাছে আসার গল্প’সহ ঈদের মধ্যে স্পেশাল ড্রামাগুলোতে এই ছেলেগুলো অভিনয় করবে। তার মানে হচ্ছে, ইউনিলিভার ও চ্যানেল আই মিলে এই রিয়েলিটি শো থেকে বের হয়ে আসা ছেলেগুলোকে মিডিয়াতে প্রোভাইড করবে, এটা অন্তত নিশ্চিত।
বিচারকদের নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় বিতর্ক:
সোশ্যাল মিডিয়াতে এটা নিয়ে আগুন জ্বলছে। আমি ওই প্লাটফর্মে নেই, তারপরেও এর উত্তাপ পাচ্ছি। যারা বিচারক ছিলেন ইফতেখার আহমেদ ফাহমি (নির্মাতা), শবনম ফারিয়া (অভিনেত্রী), শাফায়েত মানসুর রানা (নির্মাতা), জাকিয়া বারী মম (অভিনেত্রী) এবং মুহাম্মদ মুস্তফা কামাল রাজ (নির্মাতা)। প্রথমেই বলে নেই, এই বিচারকদের কোনো দোষ নেই। তারা প্রত্যেকেই একটি পরিকল্পিত স্ক্রিপ্টের মধ্যে (চিত্রনাট্য) থেকেই কথা বলেছেন। প্রতিযোগীদের সঙ্গে কোনো দুর্ব্যবহার করা হয়নি। কারণ, এখনও পর্যন্ত কোনো সাংবাদিক কিংবা গণমাধ্যমের কাছে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া কোনো ছেলে অভিযোগ দেয়নি। তো এই অভিযোগটা কোথা থেকে আসলো? এটা এসেছে ফেসবুক থেকে। ফেসবুকে কেউ যদি বলে আকাশের রং চমৎকার, সবাই সেখানে লাইক দিয়ে সহমত জানিয়ে দেয়। তাকিয়েও দেখে না, আদৌ আকাশের রং চমৎকার কিনা! আমি মনে করি, মিডিয়া থেকে অভিযোগটা সৃষ্টি করছে। তারপর ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছে।
সেখান থেকে সাধারণ মানুষ হুজুগে এটার সঙ্গে মিশে গেছেন। ফেসবুকে যারা এটা নিয়ে সমালোচনা করছেন, বিভিন্ন অভিযোগ তুলছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, একটি রিয়েলিটি শো’র জন্য যখন কেউ আসে তখন তাকে শত শত ক্যামেরা, গণমাধ্যমের মুখোমুখি হতে হবে। অনেক রকমের ফাইট করতে হবে, নানা চরিত্রে ভর করতে হবে! এসব উতরে এগিয়ে যাওয়ার জন্য দরকার সাহস। তাকে শুরুতে ওই রকম আচরণ করে ভড়কে দেওয়ার চেষ্টা করেছি আমরা। তার সাহস পরীক্ষা করে দেখতে চেয়েছি। আর এই সাহসের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য যারা শুরুতে বিচারক ছিলেন, কারও কোনো ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য ছিল না, কিছু বলার ছিল না।
বাছাই পর্বে যা দেখেছেন, তার পুরোটাই ছিল সাজানো, চিত্রনাট্য নির্ভর। এই প্রকল্প অধিকর্তা হিসেবে বলছি, পুরোটাই চ্যানেল আইয়ের ক্রিয়েটিভ টিম, ইউনিলিভারের ক্রিয়েটিভ টিম, অ্যাডকম ক্রিয়েটিভ টিম থেকে সাজানো হয়েছে। বিচারক যারা ছিলেন তাদের উপর দ্বায় চাপানো বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। যারা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন, তাদের কাছ থেকে যদি নির্দিষ্টভাবে কোনো অভিযোগ আসে, প্রকল্প অধিকর্তা হিসেবে আমি অবশ্যই যা করণীয় হবে সেই ব্যবস্থা নেব। তারা তো কেউ বলছে না যে তারা অপমানিত হয়েছেন, অস্বস্তিবোধ করেছেন! এমন কোনো অভিযোগই তো আমি পাইনি।
বিচারকদের বয়স ও অভিজ্ঞতা নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় প্রশ্ন:
টেলিভিশন মিডিয়া একটি গ্ল্যামারাস ও সেলেব্রেটি মিডিয়া। আমাকে দর্শক চেনে না। কিন্তু ধরুন আমি খুব দক্ষ, কিন্তু দর্শক বিরক্ত হয়ে বলতো ‘এই লোকটা কে!’ তাই আমার দক্ষতা নিয়ে টিভির সামনে গেলে দর্শকদের কাছে কোনো ভ্যালু থাকে না। দর্শক যাকে চেনে ও জানে তার কাজই দেখে। যারা বিচারক ছিলেন তাদের সবাইকে দর্শক চেনেন। প্রাথমিক পর্যায়ে কয়েক হাজার প্রতিযোগীর সঙ্গে আমাদের মিট করতে হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী এখন যারা জনপ্রিয় সেলেব্রেটি, যাদের কাজ দর্শক বেশী পছন্দ করে সেখান থেকে কয়েকজন নির্মাতা ও অভিনেত্রী বিচারক হয়েছেন। এখানে তাদের বয়স গুনলে ভুল হবে। মিডিয়ায় তাদের অভিজ্ঞতা, অবস্থান দেখতে হবে। ঝোঁকের মাথায় ফেসবুক, ইউটিউবে এসব নির্মাতা ও শিল্পীদের বিরুদ্ধে যারা বাজে কথা বলছেন তারা এটা করতে পারেন না। তাদের বুঝতে হবে, এটি একটি পরিকল্পিত শো। আর টিভিতে শো করতে গেলে অবশ্যই সেলেব্রেটির কথা ভাবতে হয়। ‘মাসুদ রানা’র প্রধান বিচারক হিসেবে আছেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস এবং চিত্রনায়িকা পূর্ণিমা। এছাড়া প্রায় প্রতি পর্বে তাদের সঙ্গে বড় বড় তারকা থাকছেন অতিথি বিচারক হিসেবে।
প্রাথমিক বাছাই পর্বের বিচারকদের উদ্দেশ্যে প্রকল্প অধিকর্তা:
ফাহমি, শবনম ফারিয়া, মম, রাজ, রানার এখানে কোনো ব্যক্তিস্বার্থ বা ব্যক্তিগত মতামত নেই। শুনেছি, ফারিয়া নাকি বাধ্য হয়ে থানায় জিডি করেছে। কিন্তু সে ব্যক্তিগত জীবনে কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করার মেয়ে নয়। সে একজন অভিনেত্রী। তাকে বিচারকের চরিত্রে অভিনয় করতে বলা হয়েছে। সে তার চরিত্রটাই করেছে। কাউকে নিজের ইচ্ছে কটাক্ষ কেউ করেনি। সব দর্শক, ফেসবুক ও ইউটিউব ব্যবহারকারীদের উদ্দেশ্যে বলছি, পুরোটাই একটি শো। এটি এতো কঠিন নির্ণয়ের বিচারাধীন কোনো প্রক্রিয়া নয়। টিভির প্রতিটি জিনিসই এক ধরণের খেলা। মেহজাবীন এবং অপূর্ব’র নাটক দেখতে মানুষ পছন্দ করছে, এটাও একটা খেলা। কারণ, তাদের নাটক দেখার আগেই কিন্তু মানুষ জানে এটি একটি সাজানো গল্প, ফিকশন। তারপরেও দেখছে কারণ এ দুজন শিল্পী এখন খুবই প্রিয়।
‘মাসুদ রানা’র বিচার কার্যে স্পাই কিংবা গোয়েন্দা সংস্থার কেউ নেই কেন?:
আগামীতে একটি স্পেশাল পর্বে স্পাই রেখেছি। তার দক্ষতা ও বিচারকার্য দর্শক দেখতে পাবেন দু’একটি এপিসোড পরেই। দর্শকদের কাছে অনুরোধ করবো, পুরো শোগুলো আগে দেখুন, ফাইনাল পর্বসহ। তারপর এটা নিয়ে মন্তব্য করা উচিত।
শেষ কথা:
শেষবার আমরা ইউনিলিভারের সাথে মিলেই ‘হিরো’ খোঁজার রিয়েলিটি শোয়ের আয়োজন করেছি। সেখানেও প্রাথমিক বাছাই পর্বগুলোতে একটু মজা দেয়ার চেষ্টা ছিলো। সেই আয়োজনের চেয়ে এবার আরো একটু ভিন্ন স্বাদ দিতে চেয়েছিলাম আমরা। কিন্তু দর্শক সেই স্ক্রিপ্টেট বিষয়টাকে এভাবে নিবেন এটা আমরা ভাবতেও পারিনি। এটা আমাদের জন্য একটা ‘শিক্ষা’ হয়ে থাকলো। আগামিতে এই বিষয়টি আমাদের মাথায় থাকবে।