চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

বিকেলের সাফল্যে জয়ের কড়ানাড়া

তৃতীয়দিন শেষে চতুর্থদিনেই মিরপুর টেস্টের সমাপ্তি রেখা দেখছিলেন অনেকেই। কিন্তু বুধবার সকালে প্রতিপক্ষকে ফলো-অনে না ফেলে বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নেমে গেলে দৃশ্যপট পাল্টে যায়। পরে স্বাগতিকদের ব্যাটিং বিপর্যয়, মাহমুদউল্লাহ’র সেঞ্চুরিতে ঘুরে দাঁড়ানো ও শেষবেলায় জিম্বাবুয়ের প্রত্যয়ী ব্যাটিং ভেঙে দুই উইকেট তুলে নেয়ায় জয়ের কড়ানাড়া শুনতে পাচ্ছে বাংলাদেশ।

টাইগারদের দেয়া ৪৪৩ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য টপকাতে গিয়ে জিম্বাবুয়ে দিন শেষ করেছে দুই উইকেটে ৭৬ রানে। জয়ের জন্য আরও ৩৬৭ রান দরকার তাদের। সবমিলিয়ে লড়াইয়ের আভাস থাকছেই। তবে লড়াইয়ের ইঙ্গিত থাকলেও ম্যাচ ঝুঁকে আছে বাংলাদেশের দিকেই।

প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরিয়ান ব্রেন্ডন টেলর ৪ ও শন উইলিয়ামস ২ রানে অপরাজিত থেকে জিম্বাবুয়ের পঞ্চম দিনের লড়াই শুরু করবেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ-৫২২/৭ ও ২২৪/৬, জিম্বাবুয়ে-৩০৪ ও ৭৬/২ (জিম্বাবুয়ের লক্ষ্য ৪৪৩, আর দরকার ৩৬৭) (চতুর্থ দিন শেষে)

জিম্বাবুয়ে শেষপর্যন্ত ম্যাচ বাঁচাতে বা জিততে পারবে কিনা সেটা এক প্রশ্ন। কারণ টেস্ট ইতিহাসে চতুর্থ ইনিংসে এত রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড নেই। ২০০২ সালে ৪১৮ রান তাড়া করে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেটিই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ।

দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতে বেশ ভালোভাবেই জিম্বাবইয়ান ব্যাটসম্যানদের চেপে ধরেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ফিল্ডারদের পিচ্ছিল হাতে বারবার হতাশ হয়েছেন বোলাররা। এই ফাঁকে আত্মবিশ্বাস পেতে থাকেন হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ও ব্রায়ান চারি। জুটিতে অর্ধশত রানে বেশি তুলে চোখ রাঙাতে থাকেন দুজনে।

একটু একটু করে হাতখুলেও মারতে থাকেন। সেই প্রতিরোধ ভেঙে বাংলাদেশকে উইকেট এনে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তার মাঝ উইকেট বরাবর থাকা বল ডিফেন্স করতে গেলে মাসাকাদজার ব্যাটপ্যাড হয়ে বল চলে যায় মুমিনুল হকের হাতে। ফেরার আগে ২৫ রান করেন সফরকারী অধিনায়ক।

দ্বিতীয় সাফল্য পেতে বেশি দেরি করতে হয়নি বাংলাদেশকে। চারিকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেয়া তাইজুল ইসলাম। অনেকটা হাতখুলে খেলা চারি আউট হন ৪৩ রান করে। ৬৮ রানে প্রথম উইকেট যাওয়ার পর দ্বিতীয় উইকেট পড়ে ৭০ রানে।

এর আগে মিরপুরে প্রথম ইনিংসে ২১৮ রান লিড পাওয়া বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট হারিয়ে ২২৪ রান তুলে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ১০১ রানে অপরাজিত থাকেন। তিনি শতরানে পৌঁছানোর পরই ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ।

দেশের মাটিতে মাহমুদউল্লাহর এটি প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি। আট বছর আর ৪৭ ইনিংস পর সেঞ্চুরির দেখা পেলেন এ ডানহাতি ব্যাটসম্যান। আগের সেঞ্চুরিটি ২০১০ সালে নিউজিল্যান্ড সফরে।

জিম্বাবুয়েকে ফলো-অন না করিয়ে ব্যাটিংয়ে নামার সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছিল টাইগার টপঅর্ডার। ২১৮ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামার স্বস্তি অস্বস্তিতে রূপ নেয় চতুর্থ দিনের সকালেই, ২৫ রানে চার উইকেট হারিয়ে।

প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ পাঁচশ পাড়ি দিয়েছিল মুশফিক-মুমিনুলের বীরত্বে। দ্বিতীয় ইনিংসে যখন তারা ব্যর্থ, তখন হাল ধরেন মিঠুন ও মাহমুদউল্লাহ। তাদের ১১৮ রানে রানের জুটিতে স্বস্তি ফেরে।

৬৭ রান করে মিঠুন স্লগসুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ ওঠান আকাশে। উইকেটের পেছনে থাকা চাকাভা অনেকটা দৌড়ে শর্ট লেগে গিয়ে বল জড়ান গ্লাভসে। তাতেই ভাঙে প্রতিরোধ গড়া জুটিটি। টেস্ট অভিষেকে ফিফটি পাওয়া মিঠুন খেলেন ১১০ বল। তার ইনিংসে ছিল ৪টি চার ও একটি ছয়ের মার।

বাংলাদেশের জন্য চতুর্থ দিনের সকালটা ছিল বিভীষিকার! জারভিস ও ত্রিপোনো মিলে শাসন করেন মিরপুরের ২২ গজ। দলীয় ৯ রানের মাথায় জারভিসের বলে মাভুতার হাতে ক্যাচে তুলে দেন ইমরুল (৩) ।

পরের ওভারে ত্রিপানোর বলে উইকেটের পেছনে চাকাভার হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন মুমিনুল (১) । দলের রান তখন ১০। ২৫ রানর মাথায় সাজঘরে ফিরে যান মুশফিকও। ৭ রান করে ত্রিপোনোর বলে ক্যাচ দেন মাভুতার হাতে।

ধ্বংসস্তূপ থেকে দলকে টেনে তোলেন অধিনায়ক। ১২২ বলের ইনিংসে ছিল ৪টি চার ও দুটি ছক্কা। ৩৪ বল খেলে ২৭ রান করে অপরাজিত থাকেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তার ইনিংসে দুটি চার।