সিঙ্গাপুর এবং মালেয়শিয়া থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিকাশের মাধ্যমে যে টাকা দেশে পাঠাচ্ছেন তা মূলত হুন্ডির মাধ্যমে অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। রেমিটেন্সের অর্থ অবৈধভাবে হুন্ডির দায়ে মানি লন্ডারিংয়ের আট মামলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিকাশের সাত এজেন্টকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।
গ্রেপ্তার হওয়া বিকাশ এজেন্টরা হলেন: মো. মান্নান, মো.মনোয়ার হোসেন মিন্টু, সংগীত কুমার পাল, মো. জামিনুল হক, মো. মোজাম্মেল মোল্লা, মো. হোসেন আলী, মো. দিদারুল হক ও আবু বকর সিদ্দিক। তাদেরকে ময়মনসিংহ, পাবনা, রাজশাহী ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন: মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর বা অন্য অনেক দেশে অনেক মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান তাদের দোকানে বিকাশ লেখা সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখে। সেখানে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরা মনে করে, এটাই বিকাশের শাখা। তাই তারা সেখানে দেশে সহজে টাকা পাঠানোর জন্য যান। সেখানে তারা দেশে থাকা কোন স্বজনের ফোন নম্বর দেন, যে নম্বরে এই টাকা গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন: এসব প্রতিষ্ঠান দেশে থাকা তাদের কোন এজেন্টকে হোয়াটস অ্যাপ, ভাইবার বা উই চ্যাটে ওই নম্বরে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা বিকাশ করার জন্য বলে দেন। সেই স্বজন হয়তো তখন তার মোবাইলের মাধ্যমেই টাকা পান। কিন্তু এক্ষেত্রে বিকাশ বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নাম ব্যবহার করা হলেও আসলে হুন্ডির মাধ্যমে টাকার লেনদেন হচ্ছে।
মেশিন জেনারেটেডের মাধ্যমে এ অর্থ পাচার করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন: আমাদের দেশে রাতে বিকাশের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের দোকান বন্ধ থাকে। কিন্তু আমরা এক মিনিটে বিকাশে ৬০টি ক্যাশ ইন হওয়া খবর জেনেছি। এখানে শতভাগ ক্যাশ ইন হয়। সাধারণত ক্যাশ ইন করতে গেলে একজন উপস্থিত থেকে বিকাশের মাধ্যমে ক্যাশ ইন করে। কিন্তু এখানে কেউ উপস্থিত থাকছে না।
মোল্যা নজরুল বলেন: বাংলাদেশ ব্যাংকের আওতাভুক্ত স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) দুই হাজার ৮০০ মোবাইল এজেন্টদের অস্বাভাবিক লেনদেন খতিয়ে দেখতে অনুরোধ করে সিআইডিকে।
সিআইডি তদন্ত করে জানতে পারে একটি মোবাইল এজেন্ট ব্যাংকিং অপরাধী চক্র রেমিটেন্স কমানোর পিছনে কাজ করছে। এই চক্রটি অবৈধ হুন্ডি তৎপরতার মাধ্যমে রেমিটেন্স প্রবাহ কমিয়ে দিচ্ছে।
বিকাশ কর্তৃপক্ষ এ বিষয়গুলো জড়িত রয়েছে কি না জানতে চাইলে পুলিশের এই বিশেষ সুপার বলেন: আমরা এখন পর্যন্ত বিকাশ কর্তৃপক্ষের কোন কিছু পাইনি, শুধু তাদের এজেন্টদের একটি অপরাধী চক্র পেয়েছি। যদি বিকাশ কর্তৃপক্ষ জড়িত থাকে তাহলে অবশ্যই মানি লন্ডারিং আইনে তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
তিনি জানান: গ্রেপ্তার হওয়া অপরাধীরা আমাদের বেশ কিছু তথ্য দিয়েছে, সেই তথ্য অনুযায়ী আমরা যাদের নাম পেয়েছি তাদের খবর নিচ্ছি। আশা করছি আমরা মূল হোতাদের ধরতে পারব। এ চক্রটি বেশ কয়েক কোটি টাকার লেনদেন করেছে বলেও জানান তিনি।