দুষ্টুমি আর হাসানোর ওস্তাদ আমাদের গ্রামের এক বড় ভাই। আসল নামটা না হয় নাই বললাম এখানে, একটা ছদ্ম নাম বলি, হাসেম ভাই। ঘটনা কিন্তু একদম সত্য, সাথে একটু সাহিত্যের মিশেল দিলাম, সুখপাঠ্য করার জন্য। পাক-ভারত যুদ্ধের বছর, ১৯৬৫ সাল। আমি তখন অনেক ছোট হলেও নাকি মেধাবী ছিলাম।
তাই বয়স আমার ৭ হলেও প্রাইমারী স্কুলে সবে ক্লাস ফোরে উঠেছি তখন। বড় বড় ভাব। সাথে সবকিছু দেখা আর জানার আগ্রহ প্রবল। আমার শরীরটা একটু খারাপ। তাই ঘোরাঘুরি করছি, বাইরের রাস্তায়। একদিন দেখি হাসেম ভাই বাচ্চাদের সাথে জমিয়ে খেলছেন গোল্লাছুট। আমি খুব অবাক হয়ে গেলাম।
এতো বড় মানুষ ওদের সাথে খেলছে, কিন্তু কেন! উনার কি কোন কাজ নেই! তবুও শরীর নিয়ে ভাবতে ভাবতে বাসার দিকে ফিরছি। হঠাৎ ডুকরে ওঠা কান্নার শব্দে পিছনে ফিরলাম। দেখি দুইজন (বাচ্চা) হাতে আধ খাওয়া পেয়ারা নিয়ে কাঁদছে, আর হাসেম ভাই টানা পায়ে চলে যাচ্ছেন মাঠের দিকে। আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম, ‘কী হয়েছে? কাঁদছিস কেন?’
ওরা যা বলল তা এমন: খেলার আগেই ওরা দুইজন দু’টো ডাসা পেয়ারা হাতে ওই দিক দিয়ে যাচ্ছিল। হাসেম ভাই জিজ্ঞাসা করলেন, কোথা থেকে পেয়ারা পেয়েছি। রহিম চাচার বাড়ি থেকে বলার পরে হাসেম ভাই খেলা করার জন্য পীড়াপীড়ি শুরু করে দিলেন। বাধ্য হয়ে খেলা শুরু করলাম। কিছুক্ষণ খেলার পরে বললেন, আমাদের পেয়ারা দু’টো একটু দুই হাতে নিয়ে একটু ছুঁয়ে দেখতে তার খুব ইচ্ছা।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও দুইজন তাদের পেয়ারা হাসেম ভাইয়ের হাতে দিল। আরও সঙ্গে সঙ্গেই হাসেম ভাই দুই পেয়ারায় দুই কামড় বসিয়ে দিলে তাতে পেয়ারার প্রায় বার আনা শেষ। তাই দেখে দুঃখে তারা কাঁদছে। আমি আর কি বলবো, সান্ত্বনা দিয়ে বললাম, চল রহিম চাচার বাড়িতে গিয়ে তোদের আবার দুইটা ভালো পেয়ারা নিয়ে দিই।
আরেকদিনের ঘটনা। তখন ম্যাচ এর সংকট ছিল। গ্রামের গৃহস্থ বাড়িতে ঠুঙ্কি পাথর উপর লোহার দণ্ড দিয়ে আঘাত করে শোলায় (কর্ক) আগুন জ্বালানো হতো। সেখান থেকে আগুন যেত অনেক বাড়িতে। রান্নাসহ আগুনের সব কাজ হত এভাবেই। তাই ধূমপায়ী কারো হূক্কা খেতে বা বিড়ি নিভে গেলে অন্য কারো বিড়ি থেকে বা কার বাড়ির চূলা থেকে তা আবার জ্বালানো ছাড়া উপায় ছিল না। হাসেম ভাই রাস্তা দিয়ে মাঠের দিকে যাচ্ছেন। কানে গোঁজা একটা আধাপোড়া পাতার বিড়ি (আগে টেণ্ডু পাতার বিড়ি খেতো গ্রামের ধূমপায়ী সবাই)।
হাসেম ভাই দেখে একটা বাচ্চা ছেলে আসছে, হাতে সদ্য আগুন লাগানো বিড়ি। সে অবাক হয় নি কারণ তখন শিশুরা তাদের ধূমপায়ী বাবাদের কারণেই ধূমপান শিখত। বাবারাই বলতো যা, বিড়িটা জ্বালিয়ে নিয়ে আয়, দেখিস যেন নিভে না যায়। মাঝে মাঝে দুই একটা টান দিস। হাসেম ভাইয়ের মাথায় বরাবরের মতই দুষ্টু বুদ্ধি চক্কর দিল। সামনে সুযোগ। সঙ্গে সঙ্গে সে ভাল মানুষ সেজে গেলো।
আধাপোড়া বিড়িটা বের করে হাতে নিয়ে খুব বিনয়ের সাথে ছেলেটাকে বললো, বাছা দাও তো একটু বিড়িটা জ্বালিয়ে নিই। ছেলেটার বিড়িটা হাতে নিয়েই, আগুন ঠিক করার নামে দিল একটা লম্বা সুখটান। তাতেই বিড়ি ৮০ ভাগ শেষ। হাসেম ভাই নিজের বিড়িটা কানে গুঁজে বললো, নারে আর ধরাবো না, নে তোর বিড়ি নে। বিড়ি হাতে পেয়েই ছেলেটা ডুকরে কেঁদে উঠলো। কিন্তু তার আর কিছু আর করার নেই, বিড়ি প্রায় শেষ।
খবরে দেখলাম, আওয়ামী লীগ, বিএনপির সঙ্গে জাতীয় ঐক্যে গঠন করবে না জানিয়ে দিলেও জাতীয় ঐক্য গঠনে হাল ছাড়েনি বিএনপি। দলটির নেতারা নিজেদের জোট ছাড়াও অন্যান্য দলের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। কৌশলে জামায়াতকে বাইরে রেখে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে বিএনপি। মহাসচিব মির্জা ফখরুল লন্ডন থেকে দেশে আসলে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করবেন বিএনপি।
সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার দলগুলোর প্রধানের সঙ্গে আলোচনা করছেন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এরই অংশ হিসেবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রবের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বিএনপির জাতীয় কনভেনশনের এ বিষয়ে আ স ম রব ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন বলে জানা গেছে। এর পরে কাদের সিদ্দিকীর দলের সাথে আলাপ হবে।
এদিকে ঢাকা শহরে বিভিন্ন মাধ্যমে গুজব ছড়ানো হয়েছে সন্ত্রাসী হামলা হবে, নগরীতে কোথাও। এর পাশাপাশি পত্রিকার এই খবর পড়ার পরেই হাসেম ভাইয়ের কথা মনে পড়ে গেল আমার। দেশ মাতার হাতে থাকা উন্নয়ন সম্ভাবনার ডাসা পেয়ারা খাওয়ার ধান্দায় আছে নাকি বিএনপি আর ২০ দলীয় জোট! কী আর করা মনের উপর তো আর জোর নেই আমার।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)