যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেছেন: বিএনপি এদেশের সবচেয়ে বড় শত্রু। তারা কখনো, কোনদিন এদেশের ভাল চায় নাই। বঙ্গবন্ধুকে শুধু হত্যা নয়, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাকে পরাজিত করার জন্যই বিএনপি নামক সংগঠনটির সৃষ্টি।
সোমবার খিলগাঁও থানার ৭৫নং ওয়ার্ড ত্রিমোহনী কবরস্থান সংলগ্ন ঈদগাহ মাঠে যুবলীগের উদ্যোগে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের মাঝে ঈদ উপহার বিতরণ অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
পরশ বলেন: আপনারা দেখেছেন বিএনপি যখনি ক্ষমতায় এসেছে এদেশের দুঃখী-দরিদ্র, বঞ্চিত মানুষদের আরও বঞ্চিত করেছে। বাংলাদেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে এটা তাদের বদলা। বিএনপি-জামাতের উদ্দেশ্যই হচ্ছে এদেশের মানুষকে নির্যাতন করে, এদেশকে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসাবে পরিচিত করা। তাহলেই তাঁরা তাদের ৭১-এর পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে পারে এবং একই সাথে সেই সময় তাদের দেশবিরোধী কার্যকলাপের এবং নৃশংস কর্মকাণ্ডের অজুহাতও দিতে পরে। ৭১-এর অপকর্মের নৈতিক ভিত্তি পাবার এবং যুক্তি সৃষ্টি করার জন্য এইটা তাদের বাসনা এবং নীলনকশা। সুতরাং বিএনপির মুখে যখন এই সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র হনন করার অভিযোগ শোনা যায় তখন হাসি পায়। কারণ বিএনপি সেই দল যাদের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান একটা নির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধান, জাতির পিতাকে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করেছিল।
তিনি বলেন: বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা এদেশে হত্যা, গুম ও সন্ত্রাসের রাজনীতি কায়েম করেছিল। রেফেরেন্ডাম দিয়ে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার চেষ্টা করেছিল। পরবর্তীতে বিএনপি নেত্রী ঐ একই পরিকল্পনা ও নীলনকশা অনুযায়ী এদেশকে দুর্নীতির চ্যাম্পিয়ন বানিয়ে ছিলেন। সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন, সার ও বিদ্যুতের জন্য কৃষকদেরকে গুলি করে হত্যা, শ্রমিক ভাই-বোনদের ওপর অত্যাচার ও গুলি, সাংবাদিক ভাই-বোনদের উপর নির্যাতন, বুদ্ধিজীবীদের নির্যাতন, ২১ আগস্টের হত্যাকাণ্ডসহ এহেন কোন অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড নাই যা বিএনপি করে নাই। এরপরে আবার ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রহসনের নির্বাচন করার পরও তাদের বর্তমান সরকারকে অগণতান্ত্রিক সরকার বলার ঔদ্ধত্য সত্যি সাহসের ব্যাপার।
তিনি আরও বলেন:এখনো তারা সেই নীলনকশা অনুযায়ী এদেশে অরাজকতা সৃষ্টি করে ক্ষমতায় আসার পায়তারা করছে। সম্প্রতি ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সাথে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের পিছনে তাদের ষড়যন্ত্রের প্রমাণও বেরিয়ে এসেছে। আসলে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের দুর্ভাগ্য যে যখনই এদেশের দরিদ্র মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের সুযোগ এসেছে, তখনই স্বাধীনতা বিরোধীচক্র, জামায়াত ইসলাম, বিএনপি ও পাকিস্তানী মতাদর্শীদের ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়ে তাদের ভাগ্য উন্নয়নের পথ পালটে দিয়ে এদেশকে একটা জঙ্গি ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে ঐ প্রতিবপ্লবী মহল। ১৯৭৫ সালেও বাংলার দুঃখী-দরিদ্র মানুষ যখন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এই যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে নিজের পায়ে দাঁড় করাবার চেষ্টা করছিল, ঠিক তখনই জাতির পিতাকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল। আজকে বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যখন সুখী সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে, ঠিক তখনই বিএনপি-জামাতের সেই ন্যাক্কারজণক ভূমিকার অবতারণা। তবে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ এব্যাপারে সজাগ আছে। এদেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে যে অগ্রযাত্রা তা আমরা নস্যাৎ হতে দেব না। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করার তাদের সেই অতি পরিচিত নীলনক্সা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ যেকোনো মূল্যে প্রতিরোধ করবে।
তিনি উপস্থিত সুবিধা বঞ্চিত ভাই-বোনদের উদ্দেশ্যে বলেন-আপনাদেরও সচেতন থাকতে হবে, যাতে করে আপনাদের ভাগ্য নিয়ে কোন স্বার্থান্বেষী মহল ছিনিমিনি খেলতে না পারে। আজকে আপনাদের সবার হাতে মোবাইল, ঘরে বিদ্যুৎ, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের চাহিদা নিশ্চিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা যদি আর একবার রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পায়, তাহলে শুধু আপনাদের না, আপনাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মেরও উন্নত ভাগ্য নিশ্চিত করা হবে। তিনি এই অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি বলেন: রাজনীতির মূল লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য কী? নিজেদের ভাগ্যোন্নয়ন করা? নাকি যাদের নিয়ে আমরা রাজনীতি করি তাদের পাশে দাঁড়ানো। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজের ভাগ্যের দিকে না তাকিয়ে সাধারণ খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি করেছেন। এর জন্য তিনি দীর্ঘ জীবন জেল-জুলুম খেটেছেন। একইভাবে আমাদের প্রিয়নেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন এবং তিনি এদেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনার দক্ষ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে ধাপে ধাপে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন: আপনারা জানেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্র করছে জামাত-বিএনপি। তারা শুধু ষড়যন্ত্রের মধ্যেই আছে এদেশের সাধারণ মানুষের পাশে নেই। বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশে সারা বাংলাদেশে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। বন্যায় মানুষের পাশে দাড়িয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে, শেখ হাসিনার নির্দেশে অসহায় কৃষকের ধান কেটে ঘরে তুলে দিয়েছে, করোনার মহামারিতে মানবতার ঢাল হয়ে সাধারণ মানুষের পাশে ছিল, খাদ্য, চিকিৎসা, বিনামূল্যে অক্সিজেন, ফ্রি এ্যাম্বুলেন্সসহ করোনায় মৃত মানুষের দাফন ও সৎকারে। আপনার বলেন-এই করোনায় জামাত-বিএনপি কাউকে এক মুঠো চাল পর্যন্ত দিয়েছে কি না। দেয় নাই। অথচ তারা ক্ষমতায় থেকে এদেশের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করেছে। আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতা-কর্মীকে হত্যা ও গুম করেছে। সাধারণ মানুষকে জিম্মী করে তাদের অধিকার বঞ্চিত করেছে। আমি যুবলীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলতে চাই- জামাত-বিএনপির সকল ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়ে সাধারণ মানুষের পাশে থাকবেন। আপনারা আগামীতে ভোটের মাধ্যমে নৌকাকে আবার বিজয়ী করবেন।