দুই বাসের মধ্যে পড়ে হাত হারানোর পর রাজীবের মৃত্যুতে তার দুই ভাইকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের আদেশের বিরুদ্ধে করা আবেদনের উপর আপিল বিভাগ আদেশ দেবেন সোমবার।
ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টের দেয়া আদেশের বিরুদ্ধে বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ আদেশের এই দিন ধার্য করেন।
তবে এসময় আদালতে বিআরটিসির পক্ষের আইনজীবী এ বি এম বায়েজিদ বলেন, ‘মাই লর্ড, আমরা ওই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী না। স্বজন পরিবহনের ওই গাড়িটি ওইদিন বাম দিক থেকে ওভারটেক করে এসে বিআরটিসি’র গাড়িটিসহ রাজীবকে ধাক্কা দেয়। অতএব, আমি দায়ী না হলে ক্ষতিপূরণের টাকা কেন দেব?
এসময় স্বজন পরিবহনের পক্ষের আইনজীবী পংকজ কুমার কুণ্ড বলেন, ‘মাই লর্ড, স্বজন কোম্পানি কিন্তু ওই গাড়ির মালিক না। ওই গাড়িটি আমাদেরকে প্রতি মাসে ৬০০০ টাকা দিত। এবং আমাদের স্বজন নামের ব্যানার দিয়ে চলতো। আসাদুজ্জামান রাজু নামের একজন ওই গাড়ির মালিক।
এরপর আদালত ক্ষতিপূরণ বিষয়ে আদেশের জন্য সোমবার দিন ধার্য করেন।
এসময় আদালতে রাজীবের ক্ষতিপূরণের পক্ষে কথা বলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
গত ৮ মে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের নেতৃত্বহীন হাইকোর্ট বেঞ্চ রাজীবের দুই ভাইকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১ কোটি টাকা দেয়ার নির্দেশ দেন। বিআরটিসি ও ‘স্বজন পরিবহন’কে ৫০ লাখ করে মোট এক কোটি টাকা দিতে ওই আদেশে বলা হয়।
হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী আগামী এক মাসের মধ্যে ওই দুই বাস কর্তৃপক্ষকে ২৫ লাখ করে মোট ৫০ লাখ টাকা পরিশোধের পর আদালতকে অবহিত করতে বলা হয়। সোনালী ব্যাংক মতিঝিল শাখায় রাজীবের খালা ও রাজীবের গ্রামের এক কর্মকর্তা ওমর ফারুকের নামে যৌথ অ্যাকাউন্ট খুলে সেখানে এই টাকা রাখতে বলেন আদালত। আগামী ২৫ জুন আদালত পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।
গত ৩ এপ্রিল বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারার সামনে দুই বাসের মাঝে পড়ে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী রাজীব হোসেনের হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
বাংলামটর থেকে ফার্মগেটমুখী বিআরটিসির একটি দোতলা বাসে ছিলেন রাজীব। সেটি সার্ক ফোয়ারার কাছে পান্থকুঞ্জের পাশে সিগন্যালে এসে থামে। এসময় একই দিক থেকে আসা স্বজন পরিবহনের একটি বাস দ্রুতগতিতে দোতলা বাসের পাশের ফাঁক দিয়ে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করে।
ওই সময় রাজীবের ডান হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে দুই বাসের মধ্যে ঝুলতে থাকে। রাজীবকে প্রথমে পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়।
পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এই ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর ৪ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলের এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনার পাশাপাশি রুল জারি করেন।
পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজীবের মৃত্যু হলে এই তথ্যসহ আদালতে একটি সম্পূরক আবেদন করেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। সে আবেদনে রাজীবের ভাইদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার আবেদন করা হলে হাইকোর্ট ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের আদেশ দেন।
তবে এই আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহন।