রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পশ্চিম নাখালপাড়ার ‘রসুল ভিলা’ নামক বাড়িতে বাসা ভাড়া নেওয়ার কথা বলে বাসায় ঢোকা দুর্বৃত্তদের হাতে বৃদ্ধা মালিক আমেনা বেগম খুন হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পার হলেও পুলিশ এখনও কোন ক্লু খুঁজে পায়নি। নিহতের স্বজনরাও বলছেন, আমেনা বেগম কিংবা তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কারও কোন দ্বন্দ্ব ছিল না। তাই তদন্ত সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, ২০১৬ সালে বাড়ি ভাড়া নেওয়ার কথা বলে কয়েকজন মালিককে খুনের সঙ্গে এই খুনের মিল থাকতে পারে।
শুক্রবার জুমার নামাজের পর বাড়ির পাশে পারিবারিক গোরস্থানে আমেনা বেগমকে দাফন করা হয়। ঘটনাস্থলে থাকা স্থানীয় এলাকাবাসী ও প্রতিবেশীরা চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান: ষাটের দশক থেকেই আমেনা বেগমের পরিবার নাখালপাড়ায় থাকেন। এলাকার লুকাস মোড় থেকে পশ্চিম নাখালপাড়ার রেল ক্রসিং পর্যন্ত তাদের ভাই বোন ও আত্মীয় স্বজনদের বাড়িঘর। স্থানীয়ভাবে প্রতাপশালী আমেনা বেগমের পরিবার।
‘হত্যাকারীরা সঠিক সময়টি বেছে নেয়, এমনও হতে পারে হত্যাকারীদের আমেনা চিনে ফেলেছিল। এলাকার প্রতাপশালীকে যদি এমনভাবে হত্যা করা হয় তাহলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?’, বলেন স্থানীয় এক মুরব্বি।
নিহত আমেনা বেগমের এক প্রতিবেশী জানান: চলতি বছরের শুরুর দিকে নিচতলার নতুন ভাড়াটিয়ার কাছে স্থানীয় কিছু যুবক এসে বেশ মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেছিল। পরে ভাড়াটিয়া বাড়ির মালিককে জানালে আমেনা বেগম আত্মীয় স্বজন নিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করেছিলেন।
নিজেদের পরিবারের সঙ্গে কারো শত্রুতা নেই জানিয়ে আমেনা বেগমের ছোট ছেলে রাসেল আহমেদ বাবু চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: দীর্ঘদিন ধরে আমি সাইপ্রাসে বসবাস করি, তবে প্রতি বছর একবার করে দেশে আসি। মা সব কিছু দেখে শুনে রাখতেন। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার চাই।
শনিবার সাইপ্রাসে ফিরে যাবার কথা থাকলেও মায়ের মৃত্যুর জন্য ফ্লাইট বাতিল করেছেন বাবু।
পুলিশ সকল প্রকার তথ্য সংগ্রহ করেছে জানিয়ে আমেনা বেগমের বড় ছেলে হান্নান জানান: থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে, কে বা কারা এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত পুলিশ তা এখনো আমাদের জানায়নি।
তেজগাঁও থানার ওসি (তদন্ত) সেন্টু মিয়া চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: এটি একটি ‘ক্লু’লেস মার্ডার, এখন পর্যন্ত আমরা ধারণা করছি হত্যাকাণ্ডটি পূর্বপরিকল্পিত। আমরা তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি।
নিহতের ছোট ছেলে রাসেল আহমেদ বাবু অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে বৃহস্পতিবার রাতে তেজগাঁও থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে বলা হয়, বাসা ভাড়া নিতে এসে বাড়ির মালিক আমেনা বেগমকে (৬৫) কুপিয়ে হত্যা করে এক দুর্বৃত্ত। হত্যার পর ওই গৃহকর্ত্রীর গলার চেন ও হাতে থাকা স্বর্ণের চুড়ি খুলে নিয়ে যায় খুনি।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন: বছর দুয়েক আগে রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় ঘটে যাওয়া কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের ধরনের সঙ্গে এই হত্যাকাণ্ডের অনেক মিল রয়েছে। হতে পারে এটিও সিরিয়াল কিলিংয়ের একটি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তেজগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বলেন: আমরা এখনো সব বিষয় মাথায় রেখে পর্যবেক্ষণ করছি, এখন পর্যন্ত এ হত্যাকাণ্ডের কোনো অগ্রগতি নেই।এছাড়াও বাড়ির গলিতে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা না থাকায় একটু অসুবিধা হচ্ছে। অন্যান্য রোডের সিসি ক্যামেরাগুলোয় পরীক্ষা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২৪ জুলাই দক্ষিণখানের উত্তর গাওয়াইরে বাসা ভাড়া নিতে এসে গৃহকর্ত্রী শাহিদা বেগমকে (৫০) নৃশংসভাবে খুন করে ভাড়াটিয়াবেশী দুর্বৃত্ত। পরদিনই দক্ষিণখানের আশকোনা মেডিক্যাল রোডে গৃহকর্ত্রী মাহিরা বেগমকে (৫০) কুপিয়ে আহত করা হয়।
এর এক মাস পর ২১ আগস্ট দক্ষিণখানের তেঁতুলতলা ইয়াছিন রোডে গৃহকর্ত্রী সুমাইয়া বেগমকে (৫২) একইভাবে কুপিয়ে খুন করা হয়। এর ১০ দিন পর ৩১ আগস্ট দক্ষিণখানের মুন্সি মার্কেট এলাকায় জেবুন্নেছা চৌধুরীকে (৫৬) কুপিয়ে আহত করে অজ্ঞাত দুর্বৃত্ত। এরপর ৭ সেপ্টেম্বর দক্ষিণখানের উত্তর গাওয়াইরে ওয়াহিদা আক্তার সীমাকে (৪৮) একইভাবে কুপিয়ে খুন করা হয়।
ছবি: সাকিব উল ইসলাম