শিরোপা নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। সেজন্য তো আর মর্যাদার লড়াই থেমে থাকবে না। এল ক্লাসিকো তাই প্রত্যাশিত উত্তাপই ছড়াল। গোল হয়েছে। দ্বন্দ্বে জড়িয়ে হলুদ-লাল কার্ড দেখেছেন খেলোয়াড়রা। ইনিয়েস্তার জন্য ছিল অন্যরকম ভালোবাসাও। এতসব থাকার ম্যাচে কেবল ফলটাই এল না। দশজনের বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদ রোমাঞ্চ ছড়িয়ে ২-২ গোলের ড্র নিয়ে মাঠ ছেড়েছে।
এই ড্রয়ে লাভ-ক্ষতি কোনটাই হয়নি বার্সা বা রিয়ালের। আগেই শিরোপা জিতে যাওয়া বার্সা লা লিগায় নিজেদের অপরাজিত থাকার রেকর্ডটা আরেক ম্যাচ বাড়িয়ে নিল এটাই যা বাড়তি! আর্নেস্টো ভালভার্দের চ্যাম্পিয়ন বার্সা নিজেদের শেষ তিন ম্যাচে এ দৌড় অব্যাহত রাখলে অসাধারণ এক রেকর্ডই গড়বে তাতে।
রোববার রাতে ন্যু ক্যাম্পে ম্যাচের আগে ‘গার্ড অব অনার’ নিয়ে বিতর্ক হয়েছে বিস্তর। নিজেদের কথামত ম্যাচে বার্সাকে সেটি দেয়নি জিনেদিন জিদানের দল। তবে খেলা গড়াতেই সেসব অতীত, পুরো ম্যাচ জুড়েই পরে থাকল বারুদে উত্তাপ।
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের শক্তি দেখিয়ে শুরুতে বারবার আক্রমণে গেছে কাতালানরা। তাতে ১০ মিনিটেই মিলেছে ফল। মাঝ মাঠ থেকে দৌড়ে আসা সার্জিও রবের্তোর দারুণ এক ক্রসকে ভলিতে গোলে রূপান্তর করেন লুইস সুয়ারেজ।
জবাব দিতে দেরি করেনি রিয়ালও। পিছিয়ে পড়ার চার মিনিটের মাথায় সমতায় ফেরে লস ব্লাঙ্কোসরা। টনি ক্রুসের ক্রসে বেনজেমার হেড আলতো ছোঁয়ায় জালে জড়িয়ে ১৪ মিনিটে সমতা ফেরান ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।
ম্যাচের ২৪ মিনিটেই রিয়ালকে এগিয়ে দেয়ার সুযোগ ছিল রোনালদোর সামনে। নাচোর উড়িয়ে দেয়া পাসে সিআর সেভেনের হেড চলে যায় বারের উপর দিয়ে। এর তিন মিনিট পর বার্সা গোলরক্ষক টের স্টেগেনকে একা পেয়েও গোল জাল খুঁজে নিতে পারেননি পর্তুগিজ মহাতারকা।
ম্যাচের ৩৭ মিনিটে রোনালদো আরেকবার সুযোগ হাতছাড়া করেন। ৪০ মিনিটে ব্যর্থ হন বেনজেমাও। ৪৩ মিনিটে সামনে কেবল গোলরক্ষক নাভাসকে পেয়েও জালের ঠিকানা পাননি মেসি। রিয়ালের ত্রাতা তখন নাভাস।
প্রথমার্ধে আর গোল না হলেও ম্যাচে উত্তেজনা ছড়িয়েছে দুই দলের ফুটবলারদের হাতাহাতি। ৪৫ মিনিট পেরোনোর আগেই রিয়াল-বার্সার খেলোয়াড়দের মোট পাঁচবার হলুদ কার্ড দেখিয়েছেন রেফারি, যার মধ্যে আছেন মেসি-সুয়ারেজও।
আর প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে মার্সেলোকে অহেতুক ফাউল করে লাল কার্ড দেখে বার্সাকে দশজনের দলে পরিণত করেন সার্জিও রবের্তো। রবের্তোকে ধাক্কা মেরে শুরু করেন মার্সেলো, তার মুখে পাল্টা আঘাত করে সোজা মাঠের বাইরে বার্সা তারকা।
দ্বিতীয়ার্ধে আর মাঠে নামেননি রোনালদো। গোল করার সময় চোট পান তিনি। তাকে তুলে নিয়ে মার্কো আসেনসিওকে মাঠে নামান জিদান।
উঠে যাওয়ার আগে রোনালদো গোল পেয়েছেন। মেসিও বসে থাকেননি। প্রথমার্ধে হঠাত হঠাত ঝলক দেখানো আর্জেন্টাইন মহাতারকা গা ঝারা দিয়ে ওঠেন ম্যাচের ৫২ মিনিটে। সুয়ারেজের পাসে দুই ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে বল জালে জড়ান এল ক্লাসিকোর সর্বোচ্চ গোলদাতা। এবারের লিগে এটি মেসির ৩৩তম গোল।
এগিয়ে যাওয়ার পরপরই ম্যাচের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মুহূর্তটি আসে। ম্যাচের ৫৮ মিনিটে পাউলিনহোকে জায়গা করে দিয়ে মাঠ থেকে উঠে যান ইনিয়েস্তা। চোখে জল আর সমর্থকদের অফুরান ভালোবাসা নিয়েই নিজের শেষ এল ক্লাসিকো থেকে বিদায় নেন বার্সা কিংবদন্তি।
ম্যাচের ৭০ মিনিটে লিগে ৩৪তম গোলের দেখা প্রায় পেয়েই গিয়েছিলেন মেসি। কিন্তু গোলরক্ষক নাভাসকে একা পেয়েও জালের নাগাল পাওয়া হয়নি এলএম টেনের।
পিছিয়ে থাকা রিয়ালকে সমতায় ফেরান গ্যারেথ বেল। আসেনসিওর পাসে বাঁ-পায়ের জোরাল শটে টের স্টেগেনকে পরাজিত করেন ওয়েলস ফরোয়ার্ড। ম্যাচের তখন ৭২ মিনিট।
ম্যাচের ৭৬ মিনিটে নিজেদের বক্সে মার্সেলোকে ফাউল করেও বেঁচে যান আলবা। রিয়ালের পেনাল্টির আবেদনে সাড়া দেননি রেফারি। ছয় মিনিট পর পাল্টা আক্রমণ থেকে মেসির শট একটুর জন্য লক্ষ্যে থাকেনি। খানিক পর তার বুলেট গতির শট কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান নাভাস।
ম্যাচের ৮২ মিনিটে দুবার বার্সাকে এগিয়ে দেয়ার সুযোগ এসেছিল মেসির সামনে। কিন্তু দলকে জয়সূচক গোল এনে দিতে পারেননি আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। শেষ দিকে আক্রমণ পাল্টা আক্রমণের সময় বার্সা রক্ষণে প্রচণ্ড চাপ তৈরি করে সাফল্য আনতে পারেনি রিয়ালও।
এই জয়ে ৩৫ ম্যাচে ৮৭ পয়েন্ট হল অপরাজিত থাকা বার্সার। সমান ম্যাচে ৭২ পয়েন্ট নিয়ে তিনে রিয়াল।