চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

বারী সিদ্দিকীকে হারানোর এক বছর

‘বারী সিদ্দিকী বেশ ক’বার আমাদের বাসার জলসায় এসেছিলেন। বাবার বাসায় একবার। ওঁর আসা মানে আমার অপ্রস্তত হওয়া। সবার সামনে অঝোরে কাঁদা। আমার স্ত্রীর অবস্থাও তথৈবচ। হারমোনিয়ামটি কাছে টেনে তিনি যখন গান শুরু করতেন তখন আমরা শ্রোতারা অন্য ভুবনের বাসিন্দা। আমাদের বাসায় যখন আসতেন তখন তাঁর দাঁড়িটুপি ছিল না। তাঁর সাথে আমার পরিচয় ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ মুক্তি পাওয়ার বছর খানেক আগে। আজ তাঁর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। বারী সিদ্দিকী, আপনি যেখানেই থাকুন আনন্দে থাকুন।’-বাংলা ফোক গানের কালজয়ী শিল্পী বারীসিদ্দিকীর প্রথম মৃত্যু বার্ষিকীতে এভাবেই তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করছিলেন ত্রিশঙ্কু মল্লিক নামের একজন ভক্ত।

শুধু ত্রিশঙ্কু নয়, বারী সিদ্দিকীর প্রথম মৃত্যু বার্ষিকীতে তাকে এভাবেই স্মরণ করছেন বাংলার হাজারো সাধারণ শ্রোতা ভক্ত।

প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে সব মানুষকে একসময় চলে যেতে হয়। এই চলে যাওয়া অবশ্যই কষ্টের, তবে কিছু মানুষের চলে যাওয়ার ক্ষতি কখনোই পূরণ হওয়ার নয়। এমনই একজন গুণী মানুষ বারী সিদ্দিকী।

লাখো শ্রোতার হৃদয়ের মনিকোঠায় বারী সিদ্দিকী ছিলেন লোকগানের অপার ভাণ্ডারে। একখণ্ড হীরকের মতো জ্বলজ্বলে। শুধু কণ্ঠশিল্পী হিসেবে নয়, বাঁশির জাদুকরী সুর তোলার ক্ষেত্রেও বারী সিদ্দিকী ছিলেন অতুলনীয়। মৃত্যুর এক বছর পার হলেও তার গানের শ্রোতা যেন দিনকে দিন আরো বেড়েই চলেছে। এখানেই বোধহয় একজন সৃষ্টিশীল মানুষের সার্থকতা।

১৯৯৯ সালে হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছবিতে গান গেয়ে সংগীতশিল্পী হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন দীর্ঘদিন ধরে বাঁশি বাজানো বারী সিদ্দিকী। এরপর বেশকিছু গান গেয়ে তিনি পৌঁছে যান সব শ্রেণির শ্রোতার কাছে। তার গাওয়া জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘সুয়াচান পাখি আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছ নাকি’, ‘পুবালি বাতাসে’, ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’, ‘ওলো ভাবিজান নাউ বাওয়া’, ‘মানুষ ধরো মানুষ ভজো’ ইত্যাদি।

১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলায় এক সংগীতজ্ঞ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বারী সিদ্দিকী। শৈশবে পরিবারের কাছে গান শেখায় হাতেখড়ি হলেও ১২ বছর বয়সেই তালিম নিয়েছেন ওস্তাদ গোপাল দত্ত, ওস্তাদ আমিনুর রহমান, দবির খান, পান্নালাল ঘোষসহ অনেক গুণীশিল্পীর সান্নিধ্যে থেকে। ২০১৭ সালের ২৪ নভেম্বর স্কয়ার হাসপাতালে মৃত্যু বরণ গুণী এই শিল্পী। মৃত্যুদিনে তাকে শ্রদ্ধা।