চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘বাবার কারণেই আজ আমি দেবাশীষ বিশ্বাস’

‘তিনি শুধু আমার বাবা নন, আমার মেন্টর, গাইড, গুরু, শিক্ষক— সব। এককথায় আজ যে আমি দেবাশীষ বিশ্বাস, তা বাবার কারণেই। বাবার হাত থেকে কাজ শিখেছি। কাজ ধরেছি। আমি যখন ক্যামেরার সামনে কাজ শুরু করি, তখন আমার পেছনে ছিলেন তিনি। যখন ক্যামেরার পেছনে কাজ করি, তখনো আমার পেছনে ছিলেন তিনি। আমার প্রথম ছবি শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ প্রযোজনা করেছেন তিনি। সুতরাং বাবা হয়ে, গুরু হয়ে তিনি আমাকে বটবৃক্ষের মতো নিরাপত্তার ছায়া দিয়েছেন আজীবন।’ বাবার হাত ধরে চলচ্চিত্রে প্রবেশ করা পরিচালক, উপস্থাপক দেবাশীষ বিশ্বাস বাবার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কথাগুলো বলেন।

বাংলা চলচ্চিত্রের অতি পরিচিত নাম দিলীপ বিশ্বাস। ১৯৬৬ সালে গায়ক হিসেবে চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেন। পরিচালক জাহির রায়হানের বেহুলা ছবিতে গান গাওয়ার মধ্য দিয়ে ঢাকাই চলচ্চিত্রে অভিষেক দিলীপ বিশ্বাসের। হাবুর বিয়ে নামে একটি ছবিতে অভিনয় করেছেন। এরপর আসেন পরিচালনায়। একের পর এক দর্শক নন্দিত চলচ্চিত্র বের হয় তার ঝুলি থেকে। ১৯৭৩ সালে তৎকালীন তিন জনপ্রিয় অভিনেতা নায়ক রাজ্জাক, আলমগির ও সোহেল রানাকে নিয়ে একসঙ্গে নির্মাণ করেন জিঞ্জির। ছবিটি  তখন ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা পায়।

বাবা প্রখ্যাত পরিচালক দিলীপ বিশ্বাস সারা জীবন ছেলে দেবাশীষ বিশ্বাসকে পত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শুধু  শিখিয়েই গেছেন। দেবাশীষ বিশ্বাস বলেন, ‘বাবার থেকে আমি পরিচালনা শিখেছি। পরিচালনার বাইরে উপস্থাপক হিসেবে আমার আরেকটি পরিচয় আছে। অনেকে মনে করেন, বাবা ছিলেন সংগীতশিল্পী, পরিচালক, অভিনেতা। তিনি আমাকে উপস্থাপনা শেখাননি। কিন্তু আমি জানি বাবা আমাকে হাতে কলমে উপস্থাপনা না শেখালেও জেনেটিক্যালি শিখিয়েছেন।’

দেবাশীষ বিশ্বাস ও দিলীপ বিশ্বাস
দেবাশীষ বিশ্বাস ও দিলীপ বিশ্বাস

বাবাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি একটি ঘটনা বলেন। ২০০৬ সালে মুক্তি পাওয়া মায়ের মর্যাদা ছবির চিফ অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর ছিলেন দেবাশীষ বিশ্বাস। তিনি একটি দৃশ্য অন্যভাবে ধারণ করতে চাইলেন। পরিচালক দিলীপ বিশ্বাস বললেন, ‘এটা তো খুব কঠিন হবে। তুমি পারবে না।’ দেবাশীষ বিশ্বাস বললেন, ‘নিয়ে দেখি, হয় কি না।’ দৃশ্য ধারণের পর দেখা গেল তিনি যেভাবে নিতে চেয়েছিলেন সেভাবেই হয়েছে। দিলীপ বিশ্বাস ছেলেকে বললেন, ‘আরে! তুমি তো পেরেছো। আমি আশীর্বাদ করি, একদিন তুমি সবাইকে ছাড়িয়ে যাবে।’ এটা জীবনের বড় প্রাপ্তি বলে মনে করেন দেবাশীষ বিশ্বাস।

বাবা তার সার্বক্ষণিক অনুপ্রেরণা, এমনটা জানিয়ে দেবাশীষ বলেন, ‘বাবাকে  মিস করি। খুব মিস করি।  আজ ১১ বছর হয়ে গেল শারীরিকভাবে বাবা আমার পাশে নেই। কিন্তু আমার মেন্টাল সাপোর্ট হিসেবে বাবা সব সময় আমার সঙ্গে আছেন। ’

দিলীপ বিশ্বাস ২৪ ঘণ্টা চলচ্চিত্র নিয়ে ভাবতেন। তার পেশা, ব্যবসা, ভালোবাসা সব ছিল চলচ্চিত্র নিয়ে। পুত্রের সঙ্গে আড্ডার প্রধান বিষয় থাকত চলচ্চিত্র। আজ দিলীপ বিশ্বাসের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে সবার কাছে দোয়া, আশীর্বাদ ও ভালোবাসা চেয়েছেন দেবাশীষ বিশ্বাস।

দেবাশীষ বিশ্বাস একুশে টেলিভিশনের পথের পাঁচালী,  এনটিভির ক্লোজ আপ ওয়ান ও হা-শো উপস্থাপনা করে উপস্থাপক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। ২০০২ সালে শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ নির্মাণের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে পা রাখেন। এরপর নির্মাণ করেন শুভ বিবাহভালোবাসা জিন্দাবাদ নামে আরও দুটি দর্শকপ্রিয় চলচ্চিত্র।

সম্প্রতি নির্মাণ করছেন মন জ্বলে নামে একটি ছবি। ছবিতে ‘বলছে আকাশ মুখ লুকিয়ে’ শিরোনামে একটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ভারতের জনপ্রিয় গায়ক কুমার শানু।