পদোন্নতি হবে না, এই শঙ্কায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) অধিদপ্তরের উপজেলা পর্যায়ের দেড়শতাধিক সহকারি প্রোগ্রামারের করা রিটে ৫৬ জেলায় প্রোগ্রামার নিয়োগ আটকে আছে। এতে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যক্রম বাধার মুখে পড়েছে বলে অভিযোগ করছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর।
তাই ডিজিটাল বাংলাদেশ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জেলা পর্যায়ে প্রোগ্রামার নিয়োগে এখন আদালতের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছে অধিদপ্তর। সব শর্ত-প্রক্রিয়া শেষে নিয়োগ আটকে যাওয়ায় ক্ষোভ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন নিয়োগের অপেক্ষায় থাকা প্রোগ্রামাররা।
অধিদপ্তর এবং নিয়োগের অপেক্ষায় থাকা প্রোগ্রামারদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী যাদের সহানুভূতি দেখিয়ে সহকারি প্রোগ্রামার হিসেবে চাকরি দিয়েছিলেন, তারাই এখন ৫৬টি জেলায় প্রোগ্রামার নিয়োগ আটকে দিয়েছে।
বিষয়টি এখন আদালতে বিচারাধীন থাকায় সহকারি প্রোগ্রামারদের বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিপ্তরের বর্তমান মহাপরিচালক এ. কে. এম. খায়রুল আলম।
তবে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ লক্ষ্যপূরণে প্রোগ্রামার নিয়োগের বাধা দূর করতে প্রয়োজনীয় সব করা হচ্ছে জানিয়ে চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন: নিয়োগের বাধা দূর করতে আমরা ইতোমধ্যে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছি। অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গেও আমি দেখা করেছি। তিনি যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। সরকারের আইসিটি অধিদপ্তর হিসেবে অবশ্যই আমরা সরকারের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের বাধা দূর করছি।
রিটকারীদের দাবিকে যৌক্তিক বা অযৌক্তিক কোনোটাই মন্তব্য না করে এ. কে. এম. খায়রুল আলম বলেন: যেহেতু বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন তাই রিটকারীদের দাবিকে যৌক্তিক বা অযৌক্তিক বলতে পারছি না। কিন্তু এতটুকু বলতে পারি যে সরকারি কোন পদ যদি শূন্য থাকে তাহলে তো সরকারি কাজ বাধাগ্রস্থ হয়।
‘জেলা পর্যায়ে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যক্রমে আরও গতি আনতে ৫৬ জেলায় প্রোগ্রামার নিয়োগের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিলো। এক্ষেত্রে আমরা আইসিটি নিয়োগ বিধিমালা ২০১৫ অনুসরণ করেছি। আইসিটি নিয়োগ বিধিমালা ২০১৫ অনুসারে পদোন্নতির যোগ্য কোন প্রার্থী না থাকলে সরাসরি (পিএসসি এর মাধ্যমে) নিয়োগের বিধান রয়েছে।’
পিএসসি’র সুপারিশকৃত প্রোগ্রামারদের পক্ষ থেকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জানান, পিএসসি’র মাধ্যমে প্রোগ্রামার পদে সরাসরি নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৬ সালের ২২ মে। যখন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদফতরের বয়স মাত্র ২ বছর ৯ মাস ২১ দিন এবং সহকারী প্রোগ্রামারদের অস্থায়ী চাকুরির বয়স ১০ মাস ৮ দিন।
তাই সব শর্তপূরণ এবং যথাযথভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্নের পরও নিয়োগ না পেয়ে চরম উৎকণ্ঠা, অনিশ্চয়তার মধ্যে মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।
পিএসসি’র সুপারিশ পাওয়া ৫৬ প্রোগ্রামারের পক্ষে ওই ব্যক্তি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: আবেদনকৃত প্রকৌশলীদের মধ্যে আমরা চূড়ান্তভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি। আমাদের সকল প্রাক-নিয়োগ প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছি। আমাদের ৮-১০ বছরের আইসিটি অভিজ্ঞতা সরকারের আইসিটি খাতে কাজে লাগিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমাণে কাজ করতে আমরা সংকল্পবদ্ধ। কিন্তু এই অযৌক্তিক কালক্ষেপণের বেড়াজালে যেমনি ব্যহত হচ্ছে “ডিজিটাল বাংলাদেশ” বিনির্মাণ, তেমনি আমরা পার করছি হতাশার প্রতিটি ক্ষণ, কাটাচ্ছি মানবেতর জীবন।
একই বিজ্ঞপ্তিতে একই শর্তাবলী ও একই গ্রেডের অন্য পদে ইতোমধ্যে নিয়োগ দেয়া সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, আরেকটি মজার বিষয় হচ্ছে বিজ্ঞপ্তির পর প্রকল্প থেকে আসা ৫১জন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশও নিয়েছিলেন। যাদের মধ্যে ১৩ জন চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হন। যেখানে ২-৩টি পদেও পদোন্নতি যোগ্য কেও নেই সেখানে ৫৬টি পদের জন্য পদোন্নতির দাবি করে শুধু শুধু কালক্ষেপণ করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ ক্ষমতাবলে ২০১৫ সালে কম্পিউটার কাউন্সিলের দুইটি প্রকল্প থেকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের উপজেলা পর্যায়ের সহকারী প্রোগ্রামার পদে অস্থায়ীভাবে ১৮৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
তাদের নিয়োগের শর্ত ছিল, চাকরি স্থায়ী হওয়ার পর পাঁচ বছর পূর্ণ না হলে তারা পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্য হবেন না। এই পাঁচ বছরে সহকারি প্রোগ্রামার থেকে প্রোগ্রামার পদে পদোন্নতির যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে সরকারি কর্ম কমিশনের মাধ্যমে প্রোগ্রামার নিয়োগ দেয়া হবে। যোগ্য প্রার্থী না থাকায় ২০১৬ সালে সরকারি কর্ম কমিশন-পিএসসির মাধ্যমে প্রোগ্রামার পদে সরাসরি নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়।
নিয়োগের নানা ধাপ শেষে গত বছরের ৬ নভেম্বর ৫৬ জনকে জেলা পর্যায়ের জন্য প্রোগ্রামার হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করে পিএসসি। এই সুপারিশের পরপরই সহকারি প্রোগ্রামারদের কয়েকজনের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে রিট করা হয়।
রিট করার কারণ হিসেবে নিজেদের যুক্তি তুলে ধরে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সহকারি প্রোগ্রামার চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: আমরা যারা সহকারি প্রোগ্রামার তাদেরইতো প্রোগ্রামার পদে যাওয়ার কথা। এখন সরকার যদি হঠাৎ করে কাউকে প্রোগ্রামার পদে নিয়োগ দিয়ে দেয় তাহলে তো আমরা প্রোগ্রামার হতে পারবো না। মানে আমাদের পদোন্নতি হবে না।
চাকুরি স্থায়ী হওয়া এবং নিয়োগের শর্তমতে ৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই তাদের এমন দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে এই সহকারি প্রোগ্রামার বলেন: আমরা এতোদিন ধরে প্রকল্পে কাজ করছি। সরকারতো অপেক্ষা করতে পারতো। কিন্তু তা না করে হুট করে নিয়োগ দিলে আমরা তো বঞ্চিত হই। এজন্যই আমরা আইনি পদক্ষেপ নিয়েছি।
সহকারি প্রোগ্রামারদের করা রিটের পর গত বছরের ৬ ডিসেম্বর অধিদপ্তরকে ওই সংক্রান্ত জবাব দিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
গত ৮ জানুয়ারি অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালক বনমালী ভৌমিক হাইকোর্টকে জানান, সহকারি প্রোগ্রামারদের যে শর্তে নিয়োগ দেয়া হয়, তা এখনও পূরণ হয়নি। তাদের চাকরি স্থায়ী হয়নি, এমনকি তারা পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্য বলেও বিবেচিত হননি।
ছবি: ফাইল