পেঁয়াজ, আলুর পাশাপাশি এবছরের অধিকাংশ সময়ে বেশ চড়া দামে বিক্রি হয়েছে শাকসবজি। হাতেগোনা দু-চারটি ছাড়া প্রায় সব ধরনের সবজির কেজি বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকার উপরে। কোনোটি বিক্রি হয়েছে ১০০ বা তারও বেশি দামেও।
কিন্তু বছরশেষে বাজারে এখন শীতের নানা ধরনের সবজির সরবরাহ বেড়েছে। ফলে কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছেন ক্রেতারা। গত কয়েকদিনের তুলনায় দাম অনেক কমেছে। অধিকাংশ সবজির কেজি পাওয়া যাচ্ছে ৩০ টাকার আশপাশে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, শীত মৌসুমের তরতাজা সবজি আসছে বাজারে। সরবরাহ বেড়েছে আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। আগে সীমিত কয়েক প্রকার সবজি আসলেও এখন সবজির সংখ্যা বেড়েছে। এ কারণে দাম কমেছে। আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনে দাম আরও কমে যাবে বলে মনে করেন তারা।
সবজির দাম কমে আসায় স্বস্তি পাচ্ছেন ভোক্তারাও। তবে চাষীরা বলছেন, বাজারে মধ্যস্বত্যভোগীদের নিয়ন্ত্রণ করে কৃষকের ন্যায্য দাম ঠিক রাখতে হবে। নতুবা কৃষক উৎপাদনে মনোযোগী হবে না।
শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও হাতিরপুলসহ কয়েকটি সবজি বাজারে খোঁজ নিয়ে ও ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বাজারে এখন বেশকয়েকটি সবজি পাওয়া যাচ্ছে কেজিপ্রতি ৩০ টাকার মধ্যে। সবজির পাশাপাশি কিছুটা কমেছে পেঁয়াজ, ডিম, মুরগি ও নতুন আলুর দামও।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা, যা গত ১৫ থেকে ২০ দিন আগেও বিক্রি হয়েছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকা। মুলার দাম কমে বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকায়। অথচ কিছুদিন আগেও মুলার কেজি ছিল ৫০ টাকা।
বড় একটি ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকায়, যা ১০ থেকে ১২ দিন আগে ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। গত সপ্তাহে ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হওয়া বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়।
১৫ থেকে ২০ দিন আগে ৮০ টাকায় বিক্রি হওয়া লাউ এখন ৩৫ থেকে ৪০ টাকা আর ১০০ টাকা বিক্রি হওয়া গাজর পাওয়া যাচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়।
গত সপ্তাহে বেগুনের কেজি ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। এখন তা কমে এসেছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। করলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা। ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া ঢেঁড়স পাওয়া যাচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়।
তবে বেশিরভাগ সবজির দাম কমলেও এখনো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে পাকা টমেটো ও বরবটি। পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। আর কাঁচা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে।
বেশকিছু দিন ধরে ক্রেতাদের ভোগান্তিতে রাখা আলুর কেজি এখনও ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে গত সপ্তাহে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া নতুন আলুর দাম কমে ৫০ টাকায় নেমেছে।
কমেছে পেঁয়াজের দামও। গত সপ্তাহে ৭৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া দেশি পেঁয়াজ এখন ৬০ টাকা। আর আমদানি করা পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। কাঁচামরিচ রয়েছে আগের মতই। প্রতি কেজির দাম ৯০ থেকে ১১০ টাকা।
সবজির দামের বিষয়ে কারওয়ানবাজারে ব্যবসায়ী সুমন ইসলাম বলেন, ৮ থেকে ১০ দিন আগেও বেশিরভাগ সবজির দাম ১০০ টাকার কাছাকাছি ছিল। কোনোটির দাম ছিল ১০০ টাকার ওপরে। কিন্তু সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় এখন অনেক ধরনের সবজির দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকায় নেমে এসেছে।
তিনি বলেন, অনেক ধরনের সবজি পাওয়া যাচ্ছে এখন। বাজারে প্রতিনিয়ত বাড়ছে শীতের সবজির সরবরাহ। তাই কয়েকদিনের মধ্যে দাম আরো কমবে।
তেজকুনি পাড়া এলাকা থেকে কারওয়ানবাজারে সবজি কিনতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী মোল্লা রহিম।
তিনি বলন, তুলনামূলক সবজির দাম কমায় কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছি। কিছুদিন আগেও সবজির কেজি কিনতে হয়েছে ১০০ টাকায়। বাজারে এখন প্রচুর শীতের সবজি এসেছে। দাম আরো কমবে বলে মনেকরি। কিন্তু হুট করে যেনো কোনো কিছুর দাম না বেড়ে যায় সে বিষয়ে সরকারের নজরদারির বাড়াতে হবে।
তবে পাশাপাশি কৃষকও যেনো ন্যায্য দাম পান সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান চাষী ও ব্যবসায়ী সাহাব উদ্দিন।
তিনি বলেন, আমি রাজশাহী ও নোয়াখালী চরের দিকে সবজি উৎপাদন করি। সেগুলো পাইকারি বিক্রি করি। কিন্তু কিছু সবজি আমরা যে দরে বিক্রি করি ঢাকায় সেটা কয়েকগুণ বেশি দরে বিক্রি হয়। অথচ প্রথম কয়েকদিন দাম কিছুটা বেশি পেলেও পরে পানির দরে আমাদেরকে সবজি বিক্রি করতে হয়। কিন্তু শহরে ব্যবসায়ীরা ঠিকই লাভ বেশি করে।
এই সবজি চাষী বলেন, সঠিক দাম না পেলে কৃষক বা চাষীরা উৎপাদনবিমুখ হবেন। এতে উৎপাদন কমে যাবে। তখন দাম বেড়ে যাবে। তাই মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমিয়ে কৃষকের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।