কোনা বাধার মুখে বাঙালিত্ব ও বাঙালি সংস্কৃতিকে বাধাগ্রস্ত করতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ার করেছেন উদীচীর সভাপতি অধ্যাপক সফিউদ্দিন আহমদ। বৃহস্পতিবার বিকেলে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত ‘পয়লা বৈশাখের বিরুদ্ধে মৌলবাদী আক্রমন, অপপ্রচার এবং ধর্মান্ধদের সঙ্গে সরকারের নির্লজ্জ্ব আপোষের বিরুদ্ধে’ প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
কওমী ওলামাদের সঙ্গে বৈঠকে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ভাস্কর্য সরানো এবং কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ সনদকে স্নাতকোত্তর মর্যাদা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার প্রেক্ষাপটে দেশব্যাপী এ সমাবেশ করে সাংস্কৃতিক এ সংগঠনটি।
উদীচী সভাপতি বলেন: সরকার বলে আমরা মুক্তিযুদ্ধের সরকার। মুক্তিযুদ্ধের সরকারের কাজ কি কওমী মাদ্রাসাকে উচ্চ শিক্ষার সমান পর্যায়ে আনা? পাঠ্যপুস্তকে বিকৃত করা? আমরা এগুলোকে আর সহ্য করব না।
হেফাজতের দাবির পর প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য দেওযার সমালোচনা করে তিনি বলেন: একজন শিক্ষক হিসাবে প্রশ্ন করছি, আপনি এতোদিনে কেন ভাস্কর্যের বিষয়ে বিরূপ মনোভাব প্রকাশ করছেন? হেফাজততো আগে বলেছে, হেফাজতের আগে আপনি বলেন নাই কেন?
হেফাজত আগে বলেছে। আপনি হেফাজতের নির্দেশে এই ভাস্কর্যকে সমালোচনা করছেন, আপনি নিজে বলছেন আপনি পছন্দ করেন না, এটাকে এখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে। এর চেয়ে ঘৃণ্য, নিকৃষ্ট আর কি হতে পারে! এটা কেবল একটি ভাস্কর্য নয়, এটা শিল্পকলার মধ্যে পড়ে। এটাকে এভাবে কীভাবে ঘৃণা করা হবে?
চট্টগ্রামে পহেলা বৈশাখের চিত্রকে মবিল দিয়ে ঢেকে দেওয়ার সমালোচনায় উদীচী সভাপতি বলেন: আমরা দুর্জয় প্রত্যয় নিয়ে বলছি, আমরা মঙ্গলযাত্রা বের করবই। আমরা কখনো কোনো বাধা বিপত্তিকে মানব না। বাঙালির যে প্রাণের দাবি, বাঙালিত্ব, বাংলার সংস্কৃতির জন্য আমরা প্রয়োজনে প্রাণ দিব। কিন্তু কোনো ছাড়া দেওয়া হবে না।”
প্রকাশক রবীন আহসান বলেন, বাঙালি কখনো মাথা নত করে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাহক দাবিকারী প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় ভাস্কর্য সরানোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এটা আমাদের মাথানত করার ইতিহাস হলো। হেফাজতীরা সারাদেশের ভাস্কর্য সরানোর যে পরিকল্পনা এঁটেছে সেটার প্রথম বিজয় এটা। অপরাজেয় বাংলাসহ সব ভাস্কর্য সরানোর মাধ্যমে সেই পরিকল্পনা তারা বাস্তবায়ন করে ছাড়বে।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন: আপনি ভাবছেন এসব করে মৌলবাদীদের ভোট পাবেন। আমরা বলতে পারি, আপনি একটি ভোটও পাবেন না তাদের। এর বিপরীতে আওয়ামী লীগকে তাদের কাছে পরাজিত করেছেন। বিসজ্জন দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের সব অর্জনকে।
উদীচীর সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপনের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি জিএম জিলানি শুভ, গণজাগরণ মঞ্চ কর্মী জীবনানন্দ জয়ন্ত, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান, হাবিবুল আলম, সহ-সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে, ইকবালুল হক খান, ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন প্রমুখ।