রাইসা সালসাবিল-এর জন্ম ও বেড়ে ওঠা সিলেটে। ইংরেজি মাধ্যমে পড়ুয়া রাইসার বাংলার প্রতি রয়েছে অগাধ ভালোবাসা। সে ভালোবাসা থেকেই সে নাম লেখায় বাংলাবিদ প্রতিযোগিতায়। যৌথভাবে প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান লাভ করে রাইসা। চ্যানেল আই অনলাইনকে রাইসা জানালেন বাংলাবিদ হওয়ার গল্প-
যৌথভাবে তৃতীয় হয়েছেন, আরেকটু হলেই হয়ত প্রথম হওয়া যেত। মন খারাপ হয়নি তো!
রাইসা সালসাবিল: আসলে আমার ওরকম কোন কষ্ট বা দুঃখ নেই। আমরা সবাই এটাকে খেলা হিসেবে নিয়েছি। সবাই মিলে যে খেললাম, একসাথে থাকলাম, আমাদের যে বন্ধুত্ব হলো- আমাদের যে পুরো পথচলা এটা নিয়েই আমরা খুশি। এখানে উঠানামা থাকবেই। সত্যিকার অর্থে আমার মাঝে এটা নিয়ে কোন কষ্ট নেই। কারণ এখানে যে আমি আসতে পেরেছি এটাতেই আমি অনেক খুশি। শীর্ষস্থানে যে আসতে পেরেছি এটাই অনেক বড় পাওয়া।এটার জন্য অবশ্যই ইস্পাহানি মির্জাপুর গ্রুপ ও চ্যানলে আইকে ধন্যবাদ।
ভাষা বা ব্যাকরণ তো কঠিন একটা ব্যাপার। এরকম একটা দাঁতভাঙা প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার সাহস কোত্থেকে পেলেন?
রাইসা: আসলে বাংলার সাথে যুক্ত হওয়ার যে প্রক্রিয়াটা সে বিষয়ে যদি বলি তাহলে বলতে হয়, আমি যদিও ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থী তারপরও ছোটবেলা থেকেই আমার বাবা মা আমাকে বাংলা সংস্কৃতি ও বাংলা ভাষার সঙ্গে ওৎপ্রোতভাবে জড়িয়ে রেখেছে। যখন বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই আমার বাবা মা আমাকে গান আবৃত্তি, নাচ এসব বিষয়ে আগ্রহী করতেন। এ ছাড়া ছোটবেলা থেকেই কোন প্রতিযোগিতায় জয়ী হলে বাবা মা আমাকে বাংলা বই উপহার দিতেন। এ কারণে আমার বাসায় ইংরেজি বইয়ের চেয়ে বাংলা বই বেশি। বাংলাবিদে যুক্ত হওয়ার মূল সাহস মূলত আমার বাবা মায়ের কাছ থেকেই পেয়েছি। তারাই আমাকে এতদূর টেনে এনেছে। তার সাথে আমার শিক্ষকদের কথাও বলতে হয়। কারণ তাদের অনুপ্রেরণাও বেশি ছিল।
আপনার কথায় মনে হচ্ছে বাংলা বানান আপনার কাছে খুবই সহজ একটা বিষয়। কিভাবে কঠিন বিষয়কে সহজ করে নিলেন?
রাইসা: আমার কাছে বাংলা ভাষা বা বাংলা ব্যাকরণ ঠিক কঠিন মনে হয় না। কারণ দেখা যায়, যে আমরা যে সমাজে বাস করছি তারা অনেকেই বলে যে, বাংলা অনেক কঠিন, ঠিকমতো বোঝা যায় না। তো তাদের দিকে যদি দেখেন, যারা এসব বলে তারা আসলে বাংলা চর্চাটা ঠিকমতো করে না। চর্চাটা ঠিকমতো করলে ভাষা বা বানান কোনটাই কঠিন না।
ক্যাম্পের দিনগুলো কেমন ছিল?
রাইসা: ক্যাম্পের কথাটা যদি বলতে হয় আমরা সবাই মিলে এত বৈচিত্র্যপূর্ণ পরিবেশে, এতো ভালোভাবে ছিলাম যে ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমরা এতজন একেক জনের চিন্তার সঙ্গে আরেকজনের চিন্তার যে মেলবন্ধন এটা আমাদের জন্য একটা বড় পাওনা। সবচেয়ে বড় ব্যাপার ক্যাম্পে আমাদের সবাই সাহায্য করেছেন। তাহের শিপন স্যার থেকে শুরু করে যারা ছিলেন সবার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। এখান থেকে আমরা প্রচুর দিক নির্দেশনা পেয়েছি। তাদেরকে সবাই ধন্যবাদ দিতে চাই।
বাংলা ভাষা নিয়ে ভবিষ্যতে কাজ করার ইচ্ছে আছে?
রাইসা: আমরা বিজ্ঞানের যারা শিক্ষার্থী আছি তারা কিন্তু একটা বিষয়ের খুব মুখোমুখি হই- সেটা হচ্ছে আমরা যখন বিজ্ঞানের কোনো বিষয় নিয়ে পড়তে যাই, তখন কিন্তু আমাদের রেফারেন্স বইটা থাকে ইংরেজি। এ ছাড়া আমরা কোনো ব্যাপারে অনুসন্ধান করতে গেলে আমাদের ইংলিশ রাইটারের বই-ই পড়তে হয়। তো দেখা যায় যে আমাদের বাংলা ভাষায় সমৃদ্ধ বিজ্ঞানের বই নেই। জাফর ইকবাল স্যারসহ অনেকে কাজ করছেন কিন্তু ব্যাপকহারে নেই। ফলে বাংলা ভাষার মাধ্যমে বিজ্ঞানকে যদি উপস্থাপন করা যায় তাহলে আমরা আরও সমৃদ্ধ হবো। চেষ্টা করব বাংলা ভাষার মাধ্যমে বিজ্ঞানকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার।
ছবিঃ ওবায়দুল হক তুহিন