পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে এবং তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ বাংলা চ্যানেল সাঁতরে পার হতে ব্রিটিশ সাংবাদিক বেকি হার্সব্রো এখন বাংলাদেশে। রোববার ফ্রি স্টাইলে সাঁতার কেটে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত এ চ্যানেল পাড়ি দেবেন তিনি। তাকে সহায়তা দিতে থাকবে দুটি নৌযান।
তিনিই প্রথম ব্রিটিশ নাগরিক, যিনি বাংলা চ্যানেল অতিক্রম করতে যাচ্ছেন। তিনি বাংলা চ্যানেলকে ব্রিটিশদের কাছে সুপরিচিত করে তুলতে চান। পাশাপাশি বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে ‘ক্রীড়াপ্রেমী’ দেশ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে চান।
বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এ বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বেকি বলেন: ১৯৫৮ সালে ব্রজেন দাশ একজন বাংলাদেশি হিসেবে ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করেছিলেন। আর আমি প্রথম ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে বাংলা চ্যানেল অতিক্রম করতে এসেছি। আমি খুব উজ্জীবিত।
বেকি হার্সব্রো এপির এশিয়া প্রযোজক হিসেবে লন্ডন অফিসে কর্মরত। তিনি সাঁতারের একজন দক্ষ প্রশিক্ষক। এর আগে তার টানা নয় কিলোমিটার সাঁতারের রেকর্ড থাকলেও এবারই প্রথম টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনসের ১৬ কিলোমিটারের পার হওয়ার চ্যালেঞ্জ নিলেন।
বাংলাদেশে প্রতিদিনের পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুহার দারুণভাবে ব্যথিত করেছে বেকিকে। ইন্টারনেট ঘেঁটে বাংলাদেশের পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা দেখে তিনি অবাক হন। বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে যেখানে ৫০ জন শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়, সেখানে যুক্তরাজ্যে বছরে মারা যায় মাত্র ১৫ জন। শিশু মৃত্যুর এ ভয়াবহতা নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি ও তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যেই তিনি বাংলা চ্যানেল সাঁতরে পার হওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন বলে জানান।
বেকি বলেন: এবার তিনি সফল হলে আগামীতে তার যুক্তরাজ্যের সাঁতারপ্রেমী বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে আবার আসবেন বাংলাদেশে। তার জন্য এটি একটি চমকপ্রদ মূহুর্ত। এটা তার ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জ।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম এভারেস্টজয়ী মুসা ইব্রাহিম, গবেষণা সংস্থা সিআইপিআরবির ড. জাহাঙ্গীর, আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এপির ঢাকা ব্যুরোপ্রধান জুলহাস আলম, বেলী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওয়াহিদুজ্জামান।
বেকির সহকর্মী জুলহাস আলম বলেন: গত জুলাই মাসে সাঁতার প্রশিক্ষণ সম্পর্কিত কিছু প্রকল্প দেখতে বাংলাদেশে এসেছিলেন। এসব প্রকল্প দেখে তিনি সত্যিই অভিভূত। তাই ফিরে যাওয়ার পর থেকেই বলছিলেন, পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে তিনি আবার আসতে চান এবং সেটি সত্যি হতে চলেছে।
মুসা ইব্রাহিম বলেন: অনেক সময় সাঁতারু পথ ভুলে গভীর সমুদ্রে কিংবা মিয়ানমারের দিকে চলে যান। গাইড বোট সাঁতারুকে সঠিক পথ দেখাবে। তাছাড়া সমুদ্রে সাঁতারের প্রধান দুটো সমস্যা জেলিফিশের উপদ্রব ও লবণাক্ত পানি। আরেকটি নৌযানে ফিজিওথেরাপিস্টসহ অন্যরা থাকবেন।
সরকারিভাবে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুহার কমানোর কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মুসা ইব্রাহিম বলেন: কয়েক দিন আগে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছিলেন, স্কুল পর্যায়ে শিশুদের সাঁতার শেখানো হবে। সরকারি পর্যায়ে এটা করতে পারলে যথেষ্ট সুফল বয়ে আনবে।
ড. জাহাঙ্গীর বলেন: প্রতিবছর বাংলাদেশে ১৮ হাজার মানুষ মারা যায়। এদের বয়স ১ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। পুরো বরিশাল অঞ্চল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, যেখানে বছরে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ২০০৩ থেকে এ পর্যন্ত আমরা সারা দেশের প্রায় পাঁচ লাখ শিশুকে সাঁতার শিখিয়েছি। তবে তা যথেষ্ট নয়।