বইমেলা থেকে দুই বছরের জন্য শ্রাবণ প্রকাশনীকে নিষিদ্ধ করার প্রেক্ষিতে ফেসবুকে লিখেছেন প্রবাসী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আমিনুল ইসলাম।
ফেসবুকে তিনি লিখেন,
“সেবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের সাথে পরিচয় হলো ইউরোপে। তিনি এসেছেন এক কনফারেন্সে। সেই কনফারেন্সে আমিও গিয়েছি। কনফারেন্স শেষে দেখি ওই শিক্ষক সাত-আট জন বাংলাদেশি এমপির সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তো ওই শিক্ষক আমাকে চিনতেন। তিনি আমাকে ডেকে বললেন
-আমিনুল, এরা সবাই দেশের সম্মানিত সাংসদ। পরিচত হও।
আমিও পরিচিত হলাম। এরপর খেয়াল করে দেখলাম ওই শিক্ষক, এমপিদের সাথে এমন ভাবে কথা বলছেন-দেখে মনে হলো তিনি ওই এমপিদের পার্সোনাল সেক্রেটারি (পিএস) ছাড়া আর কিছুই না। সব কথাতেই দেখলাম- “ইয়েস স্যার” বলছেন!
আমি ওই শিক্ষক’কে বলেছিলাম
– আপনি যে উনাদের সব কথায় ‘ইয়েস স্যার’ বলছেন এটা কি ঠিক হচ্ছে?
ওই শিক্ষক আমার উপর রীতিমত বিরক্ত হয়েছিলেন! একজন সম্মানিত শিক্ষক কি করে এই কাজ করছেন, সেটা দেখে আমি এমনই বিব্রত হয়েছি, শেষমেশ আমি বাধ্য হয়ে তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছি। পরে জেনেছিলাম এই শিক্ষক ইউরোপের ওই কনফারেন্সে এসছিলেন এই এমপিদের কাছে ধরনা দিয়েই!
এর বছর খানেক পর শুনি ওই শিক্ষক ঢাকার বাহিরের একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) হয়েছেন!
সেবার বুয়েটে প্রভাষক পদে আবেদন করেছি, গেলাম ইন্টার্ভিউ দিতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা বিশেষজ্ঞ শিক্ষক জিজ্ঞেস করলেন
-তুমি তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়োনি, এখানে আবেদন করেছো কেন?
-কেন কোথাও কি লেখা ছিল নাকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাড়া আবেদন করা যাবে না?
আমি উনার কথার তেমন কোন প্রতিবাদ করিনি, শুধু উনার প্রশ্নের জবাবে ব্যাপারটা জানতে চেয়েছিলাম; অথচ ওই ভাইভা বোর্ড পারলে আমাকে সেখানে থেকে জোর করেই বের করে দেয়ার মতো অবস্থা! নেহাত বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গা বলে, সেটা না করে বলেছে- আপনি এবার আসতে পারেন।
এই দেশে যারা বড় বড় পদে বসে আছেন, তারা কিভাবে ওই পদ পান; সেটা বুঝতে অবশ্য কারো অসুবিধা হওয়ার কথা না। আজ কিছুক্ষণ আগে জানতে পারলাম বাংলা একাডেমি নাকি এই বই মেলায় শ্রাবণ প্রকাশনীকে নিষিদ্ধ করেছে। তাও দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে! এর কারন জানতে চাওয়া হলে শ্রাবণ প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী রবিন ভাই বলেছেন
-নানান কারনে আমি বাংলা একাডেমির সমালোচনা করেছিলাম, এই জন্য হয়তো নিষিদ্ধ করা হয়েছে শ্রাবণ প্রকাশনী।
আচ্ছা, কারো কি জনা আছে বাংলা একাডেমির বড় বড় পদে যারা চাকরি করেন, তারা কোন যোগ্যতায় ওই পদ পান? তাদের যোগ্যতা আসলে কি? নাকি “ইয়েস স্যার” করেই এরা ওই পদ পেয়ে গেছেন!
যে কোন লেখক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী তার সমালোচনা অবশ্যই নিতে জানবেন এবং পুরো পৃথিবী জুড়ে সেটা তারা নেনও। পৃথিবীর যে কোন দেশে অন্তত বুদ্ধিজীবী সমাজ তাদের সমালোচনা সহ্য করে থাকেন, কারন সমালোচনা থেকেও অনেক কিছু শেখার আছে। আর বাংলাদেশে লেখক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীরা অতি সামান্য সমালোচনাও নিতে পারেন না। কারন তারা বুদ্ধিজীবী বনে গেছেন- বুদ্ধির জোরে নয়, “ইয়েস স্যারের” জোরে!”