শান্তিতে নোবেল জয়ী মানবতার প্রতীক মাদার তেরেসার ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। মৃত্যুবার্ষিকীর ঠিক আগের দিনই রোববার ‘সেইন্ট’ উপাধিতে ভূষিত হন তিনি। ভারতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সেবায় ব্যাপক অবদানের জন্য সম্মান জানিয়ে তেরেসাকে এই সম্মান জানায় রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টধর্মের কেন্দ্র ভ্যাটিকান সিটি। এই উপাধি পাওয়ার পর থেকে তাকে মাদার তেরেসার বদলে ডাকা হচ্ছে ‘সেইন্ট’ তেরেসা নামে।
১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ সফরে ঢাকায় এসেছিলেন তৎকালীন ‘মাদার’ ও বর্তমানের ‘সেইন্ট’ তেরেসা। তখন তার একটি সাক্ষাৎকার নেয়ার সুযোগ হয়েছিল সিনিয়র সাংবাদিক হাসান শাহরিয়ারের। সেই পরিচয় এবং সাক্ষাৎকারের মুগ্ধতার কথা চ্যানেল আই অনলাইনকে জানিয়েছেন তিনি।
সেইন্ট তেরেসার সঙ্গে দেখা হয়ে কেমন লেগেছিল, কেমন দেখেছিলেন তাকে – এই প্রশ্নের জবাবে হাসান শাহরিয়ার বলেন, ‘আমার দৃষ্টিতে পৃথিবীতে ভালো মানুষ খুব কম আছে। কিন্তু সেদিন আমার মনে হয়েছে, একজন খুব ভালো মানুষের সঙ্গে দেখা হয়েছে আমার। মহৎ একজন ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। আমার মনে হয়েছিল, এমন একজন মহৎ ব্যক্তির সঙ্গে আমার আগে কেন দেখা হয়নি?
আমি আবেগে আপ্লুত হয়ে গিয়েছিলাম তাকে দেখে। আমি গর্ববোধ করি যে মাদার তেরেসার মতো একজন মানুষের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। এমন একজন গুণী লোককে যে আমার দেখার সুযোগ হয়েছিল, সেটাই আমার জীবনের অনেক বড় একটা পাওয়া।’
সেইন্ট তেরেসার ব্যবহার সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘উনি কথা বলছিলেন খুব ধীরগতিতে, আস্তে আস্তে। ইংরেজিতে আমরা যাকে বলি সফট স্পোকেন। তিনি খুব সুন্দর করে কথা বলেছেন আমার সাথে। সাক্ষাৎকারে তিনি মূলত বলেছিলেন মানবতার কথা। বলেছিলেন, মানবতার জন্য কাজ করতেই তিনি বেঁচে আছেন।’
সেইন্ট তেরেসা হাসান শাহরিয়ারকে বলেছিলেন, তিনি দুঃখী মানুষের জন্য সারাজীবন কাজ করেছেন। এতে তিনি এক ধরণের শান্তি পান। মানুষের জন্য কাজ করে যে আনন্দ পান, আর কোনোকিছুতে এত আনন্দ পান না তেরেসা।
‘উনি (সেইন্ট তেরেসা) এমন কথাও বলেছেন, ‘দেখুন, আমরা তো না দেখেই ঈশ্বরে বিশ্বাস করি, ভালোবাসি। কিন্তু যাদের আমরা প্রতিনিয়ত দেখি তাদেরকে ভালোবাসি না। যাকে দেখি না তাকে ভালোবাসি, অথচ যাকে দেখি তাকে ভালোবাসি না – এটা কেমন কথা?’ এটা খুব মূল্যবান কথা বলেছিলেন তিনি,’ বলেন হাসান শাহরিয়ার।
১৯৯৩-এ ঢাকায় আসার আগে সেইন্ট তেরেসা খুব অসুস্থ ছিলেন উল্লেখ করে হাসান শাহরিয়ার জানান, অসুস্থ শরীর নিয়েই তিনি ঢাকা এসেছিলেন। সে সময় তার স্বাস্থ্য খুব ভেঙ্গে পড়েছিল। বয়সও হয়েছিল অনেক। তারপরও তার মধ্যে মানুষের জন্য কাজ করার তীব্র উদ্যম দেখতে পান এই সিনিয়র সাংবাদিক।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, মাদার তেরেসার মোদ্দাকথাই ছিল, আমরা এই পৃথিবীতে এসেছি, সৃষ্টিকর্তা আমাদের পাঠিয়েছেন একে অপরের জন্য। একজনের সুখে-দুঃখে অন্যজন কাছে থাকবে।
সাংবাদিক হাসান শাহরিয়ারের ভাষায় ‘অনেক কম বয়সে মাদার তেরেসা নান হয়েছিলেন। খ্রিস্টধর্মে এর অর্থ সংসারধর্ম ত্যাগ করা। তিনি একজন নিবেদিতপ্রাণ সমাজসেবিকা ছিলেন। উনি ব্যক্তিগত আরাম-আয়েশ ত্যাগ করে মানবতার সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন।
তিনি পক্ষাঘাতসহ এমন রোগীদের সেবা নিজে করতেন, যাদেরকে অন্যরা স্পর্শও করতে চাইত না। আমি যাকে গুরু হিসেবে মানব, তার কাজকর্ম কমবেশি অনুসরণ-অনুকরণ করব এটাই স্বাভাবিক। মাদার তেরেসার কাজ দেখে অনেক না হলেও কিছু সংখ্যক মানুষ আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে আসতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন সে সময়।’
অনেক বিত্তশালী ব্যক্তিই গোপনে বেনামে সেইন্ট তেরেসার কাজে অর্থ সাহায্য দিতেন জানিয়ে সাংবাদিক হাসান শাহরিয়ার বলেন, ‘মাদার তেরেসার ব্যাপারে এ নিয়ে একটা সমালোচনা রয়েছে, তিনি অনেক একনায়কের কাছ থেকেও অনুদান নিয়েছেন। এ সম্পর্কে তার অনুসারীদের বক্তব্য হলো, যে দান করবে তার দানই আমরা নেবো। দাতার পরিচয় আমাদের কাছে ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।’
নিজের সৎকর্মের মধ্য দিয়ে মাদার তেরেসা যে ধনী ব্যক্তিসহ সবাইকে দান এবং সেবামূলক কাজে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছেন, সমাজ বদলে এটা তার বিরাট এক সাফল্য বলেই মনে করেন হাসান শাহরিয়ার।