বিশ্বকাপে মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে কয়েকঘণ্টা পরই ভারতের বিপক্ষে নামবে বাংলাদেশ। লড়াইয় দুই দলের মধ্যে হলেও ফলাফল নির্ধারণে ভূমিকা রাখবেন দুদলের কয়েকজন খেলোয়াড়। ক্রিকেট দলগত খেলা হলেও ব্যক্তিগত দ্বৈরথ জমে ওঠে অনেক সময়ই।
বাংলাদেশ-ভারত মহারণে তেমন কয়েকটি সম্ভাব্য ব্যক্তিগত দ্বৈরথে চোখ রাখা যাক-
তামিম-সামি: তামিম ইকবাল বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন। বিশ্বকাপের শুরুতে নিষ্প্রভ ছিলেন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চেনাছন্দে ফিরতে শুরু করেছেন। বাঁহাতি ওপেনার ভারতের বিপক্ষে অনেকবারই ত্রাতা হয়েছেন। কোহলিদের শক্তিশালী বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে আবারও জ্বলে উঠলে টিম টাইগার্স পাবে ঝড়ো শুরুর রসদ। সেজন্য সামি-বুমরাহকে সামলাতে হবে তামিমকে।
বিশ্বকাপের চলতি আসরে মাত্র তিন ম্যাচ খেলেই ১৩ উইকেট- মোহাম্মদ সামির সামর্থ্য বোঝানোর জন্য এই পরিসংখ্যানই যথেষ্ট। শুরুতে ব্রেক-থ্রু এনে দেয়ার পাশাপাশি আঁটসাঁট বোলিংয়ে ব্যাটসম্যানদের নাভিশ্বাস ছোটাচ্ছেন এ ডানহাতি পেসার। ডেথ ওভারেও সমান কার্যকরী তিনি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে চরম প্রয়োজনের মুহূর্তে দুর্দান্ত এক হ্যাটট্রিকে ভারতকে জয় এনে দিয়েছেন। বার্মিংহামে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন। তামিম-সামি দ্বৈরথ তাই জমেই ওঠার কথা।
সৌম্য-বুমরাহ: এবারের আসরে সাউথ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পাওয়া দারুণ দুটি জয়ে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত নৈপুণ্য উপহার দিয়েছেন সৌম্য সরকার। যেদিন তার ব্যাট কথা বলে, সেদিন বাংলাদেশের জয়ের পথ মসৃণ হয়। গত চারটি ম্যাচেই নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন সৌম্য। ভারতের বিপক্ষে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান চেনাছন্দে ফিরতে পারলে উড়ন্ত সূচনাই এনে দেবেন দলকে। সেজন্য সামি-বুমরাহকে সামলাতে হবে দক্ষতার সাথে।
এবারের আসরে ব্যাটসম্যানদের দাপট চোখে পড়ার মতো। তবে এরমধ্যেও যে কয়জন বোলার ব্যাটসম্যানদের উপর আধিপত্য বিস্তার করে চলেছেন জাসপ্রিত বুমরাহ তাদের মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশ যে শুরুতেই সৌম্য-ঝড়ের স্বপ্ন দেখছে, সেই ঝড় থামিয়ে দেয়ার সামর্থ্য রাখেন জাসপ্রিত। বুমরাহ ও সৌম্যর দ্বৈরথ কতটা জমে ওঠে সেটি গড়ে দিতে পারে ম্যাচের গতিপথও।
সাকিব-পান্ডিয়া: বাংলাদেশের সেরা খেলোয়াড় তিনি। চলতি বিশ্বকাপে দ্যুতি ছড়িয়ে চলেছেন। ছয় ইনিংসে ব্যাটিং করে এখন পর্যন্ত তিনটি হাফসেঞ্চুরি ও দুটি সেঞ্চুরিতে ৪৭৬ রান করেছেন সাকিব। বল হাতে উইকেটও পাচ্ছেন, নামের পাশে ১০ উইকেট। ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারত বধের দিনে হাফসেঞ্চুরি করেছিলেন। একযুগ পর তেমন একটি ম্যাচ উপহার দিতে পারলে বিশ্বের নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডারের কাঁধে চেপে স্বপ্ন বুনতে পারে বাংলাদেশ।
হার্দিক পান্ডিয়া বিশ্বকাপে ভারতের এক্স-ফ্যাক্টর। লোয়ারঅর্ডারে ব্যাট হাতে ঝড় তুলতে পারঙ্গম তিনি। ভারতের পঞ্চম বোলারের অভাবও পূরণ করে চলেছেন। বার্মিংহামে সাকিবের জবাব হতে পারেন পান্ডিয়া। দুজনের দ্বৈরথ গড়ে দিতে পারে ম্যাচের পার্থক্য।
কোহলি-সাইফউদ্দিন: ভারতের সেরা ব্যাটসম্যান কোহলি, বিশ্বেরই অন্যতম সেরা। আছেন দারুণ ফর্মে। ৮২, ৭৭, ৬৭, ৭২ ও ৬৬- আসরে সর্বশেষ পাঁচ ইনিংসে কোহলির রান। এমন একজন ব্যাটসম্যানকে শুরুতেই সাজঘরে ফেরত পাঠানোর জন্য বাড়তি পরিকল্পনা নিয়েই মাঠে নামবে বাংলাদেশ। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সাইফউদ্দিনই হতে পারেন টাইগারদের ভরসা। বড় ইনিংস খেলার আগেই যদি সাইফউদ্দিন কোহলিকে ফেরাতে পারেন, সেটি ম্যাচে বাংলাদেশকে এগিয়ে রাখবে।
চলতি বিশ্বকাপে পরিসংখ্যানের বিচারে বাংলাদেশের সেরা বোলার তো সাইফউদ্দিনই। অন্যদিকে কোহলি নিজের সেরাটা দিতে পারলে কী হবে সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। এসব ভেবে রোমাঞ্চ নিয়ে অপেক্ষা করাই যায়।
মোস্তাফিজ-ধোনি: ২০১৫ সালে নিজের অভিষেকেই ধোনিকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। সেবার তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে মোস্তাফিজকে ধাক্কা দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন ভারতের উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। সেই ম্যাচে ধোনিকে আউট করে ‘প্রতিশোধ’ও নিয়েছিলেন কাটার মাস্টার। হয়েছিলেন সিরিজ সেরা। বাংলাদেশ জিতেছিল সিরিজ। মঙ্গলবার মাঠে নামলে সেই সুখস্মৃতি ফিরে আসবে মোস্তাফিজের মনে! ফিজ মাঝের ওভারগুলোতে এবং শেষে দারুণ কার্যকরী হলে ধোনির সফলতার পথ আটকে যাবে। ধোনি-মোস্তাফিজের মধ্যে দ্বৈরথে জয়ী খেলোয়াড়টির দলের জন্য সেই পারফরম্যান্স ম্যাচজয়ের নিয়ামকও হতে পারে।