ইংল্যান্ড, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, সাউথ আফ্রিকা- দ্বাদশ বিশ্বকাপের শিরোপার দাবিদার হিসেবে এই নামগুলোই বেশি উচ্চারিত হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে বাংলাদেশ ফেভারিট না হলেও টাইগারদের কাছে প্রত্যাশার চাপ কমও নয়। সেই পথ চলায় মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার দল রোববার বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে, সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে।
একঝাঁক অভিজ্ঞ ও তরুণ ক্রিকেটারের মিশেলে দারুণ এক স্কোয়াড নিয়ে ইংল্যান্ডে পা রেখেছে বাংলাদেশ। বলা হচ্ছে, নিজেদের ইতিহাসের সেরা দল নিয়েই এবার বিশ্বকাপ খেলতে গেছে টাইগাররা। মাঠের পারফরম্যান্সে সেটি অনূদিত করার পালা এবার।
২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল খেলা বাংলাদেশ পরের বছর এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলেছে। নিধাস ট্রফির ফাইনালেও উঠেছিল। ২০১৮ সালে এশিয়ান দলগুলোর মধ্যে জয়ের হারে দুই নম্বরে থাকা বাংলাদেশ বিশ্বমঞ্চে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন নিয়ে ঢাকা ছেড়েছে।
গত মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজ জেতার সুখস্মৃতি তো এখনো টাটকাই। বিশ্বকাপের সেমিতে খেলতে চাওয়াটা যে বেশি বাড়াবাড়ি নয়, গত দু-তিনবছর ধরে সেটি প্রমাণ করেছে গত বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা দলটি।
শক্তির জায়গা
পঞ্চপাণ্ডব: বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম পাঁচ সেরা ক্রিকেটার মাশরাফী, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ- পাঁচজনই দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে খেলছেন। দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। এই অভিজ্ঞতাই বাংলাদেশকে পথ দেখাতে পারে বিশ্বমঞ্চে।
পাঁচজনের মধ্যে মাহমুদউল্লাহ নিজের তৃতীয় বিশ্বকাপ খেলছেন। বাকি চারজনেরই এটি চতুর্থ বিশ্বকাপ। মেগা-ইভেন্টে খেলার অভিজ্ঞতা তারা কাজে লাগাতে পারলে সেটি বাংলাদেশকে ইতিবাচক ফলাফলই এনে দেবে।
টপঅর্ডার: বাংলাদেশের টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানরা নিয়মিত রান পাচ্ছেন। নতুন বলে উইকেট পাচ্ছেন পেসাররা। বিশ্বকাপেও এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে দারুণকিছু আশা করাই যায়।
টিম ইউনিট: বাংলাদেশের শক্তির সবচেয়ে বড় জায়গা হল টিম ইউনিট। আবু জায়েদ রাহি চমক হিসেবে জায়গা পেয়েছেন। অন্যদিকে গত বিশ্বকাপে খেলা ইমরুল কায়েস, তাসকিন আহমেদ ও শফিউল ইসলাম ছাড়া সবাই রয়েছেন দ্বাদশ বিশ্বকাপের দলে। দীর্ঘসময় একসঙ্গে খেলায় দারুণ এক ইউনিট গড়ে উঠেছে টিমের মধ্যে।
গভীরতা: বাংলাদেশের ব্যাটিং গভীরতাও চোখে পড়ার মতো। ব্যাটিংয়ে সিদ্ধহস্ত মাশরাফী ৯ নম্বর পজিশনে ক্রিজে আসেন, এটিই টিম বাংলাদেশের ব্যাটিং-গভীরতা নির্দেশ করে। তামিম, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, সাব্বির রহমান, মোসাদ্দেক হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজ- ব্যাটিংয়ে অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের মিশেল বাংলাদেশকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে। যাতে নতুন সংযোজন সাইফউদ্দিন। সবাই একসঙ্গে জ্বলে উঠলে এবং পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা থাকলে দ্বাদশ বিশ্বকাপে অবিস্মরণীয় কিছু করে দেখাতে পারে বাংলাদেশ।
দুর্বলতা
ডেথ ওভার: এখানে দুর্বলতা চোখে পড়ার মতো। চার-ছক্কার ফুলঝুরির ক্রিকেটে পার্থক্য গড়ে দেয় ডেথ ওভারের পারফরম্যান্স। এক্ষেত্রে ব্যাটিং-বোলিং দুই ক্ষেত্রেই পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। ডেথ ওভারে বাংলাদেশের বোলাররা খেই হারিয়ে ফেলেন। বাংলাদেশ দলের আক্রমণভাগের প্রধান সেনানী মোস্তাফিজও খুব একটা সুবিধা করতে পারছেন না। বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে হবে টাইগারদের।
অন্যদিকে, প্রতিপক্ষ দলগুলো ডেথ ওভারগুলোয় যেখানে রানবন্যা বইয়ে দেয়, সেখানে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা নিজেদের ঠিকমতো মেলে ধরতে ব্যর্থ হন প্রায়ই। শেষদিকে মাহমুদউল্লাহ, মোসাদ্দেক, মাশরাফী ও সাইফউদ্দিনরা ব্যাট হাতে ঝড় তুলতে পারলে সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারবে টাইগাররা।
রিস্ট স্পিনার না থাকা: ইংল্যান্ডের সিমিং কন্ডিশনে স্পিনাররা কোনো সুবিধা পাবেন না বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু উদ্বোধনী ম্যাচে ইমরান তাহির সেটিকে ভুল প্রমাণ করে দিলেন। সাউথ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড ও ভারত রিস্ট স্পিনার থাকায় ইংলিশ কন্ডিশনে বাড়তি সুবিধা পাবে। আর না থাকায় পিছিয়ে থাকবে বাংলাদেশ।
গতির বোলার না থাকা: বাংলাদেশ দলে গতির ঝড় তোলার মতো বোলার নেই বললেই চলে। রুবেল আছেন, তবে একাদশে প্রথম পছন্দ নন। মোস্তাফিজ ইয়র্কার ও কাটারে গতির ঘাটতি অনেকটাই পুষিয়ে দিতে সক্ষম। তবে অন্যরা কেমন করেন সেটিই দেখার।
নজর থাকবে যার দিকে
সৌম্য সরকার: সৌম্য সরকার বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অন্যতম রানব্যাটারীর নাম। এই স্টাইলিশ ব্যাটসম্যান শুরুতেই ঝড় তুলতে পারঙ্গম। বিশ্বকাপের আগে নিজের প্রস্তুতিটা দারুণভাবে সেরেছেন বাঁহাতি ওপেনার। আয়ারল্যান্ডের মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজে তিন ম্যাচ খেলে প্রতিটিতেই নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন সৌম্য। প্রথম ম্যাচে ৬৮ বলে ৭৩, দ্বিতীয় ম্যাচে ৬৭ বলে ৫৪ এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ফাইনালে ৪১ বলে ৬৬ রানের ইনিংস উপহার দেন তিনি। বিশ্বকাপেও এমন ধারাবাহিক পারফরম্যান্স উপহার দেবেন সৌম্য, তেমনই আশা করে দল ও টাইগারপ্রেমীরা।
এক্স ফ্যাক্টর
মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন: ডেথ ওভারে বাংলাদেশের সমস্যার সমাধান এনে দিতে পারেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। অনেকেই তার মধ্যে মাশরাফীর ছায়া দেখছেন। শেষদিকে বিগশট খেলে বাংলাদেশের সংগ্রহ সমৃদ্ধ করতে ভূমিকা রাখতে পারেন এ পেস-অলরাউন্ডার। সঙ্গে বিগহিটে রান। দ্বাদশ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের এক্স ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারেন এ তরুণ উদীয়মান তারকা।
বাংলাদেশের স্কোয়াড: সৌম্য সরকার, তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, সাব্বির রহমান, মোহাম্মদ মিঠুন, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, লিটন দাস, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মেহেদী হাসান মিরাজ, মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা, রুবেল হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান ও আবু জায়েদ রাহি।