পাকিস্তানের জন্য কাগজে-কলমে যা একটু সম্ভাবনা আছে। তবে সেটিতে চোখ রেখে সেমিতে যাওয়ার হিসাব কষা তাদের জন্য অসম্ভব লক্ষ্যের পেছনে ছোটার সামিলই! আদতে তাই দুই দলেরই বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেছে। সাদা চোখে শুক্রবারের মহারণ নিয়মরক্ষার লড়াই। সম্মানের লড়াইও। বিশ্বকাপে এমনই এক ম্যাচে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান মুখোমুখি হবে লর্ডসে।
আগের ম্যাচে ভারতের কাছে হেরে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়া নিশ্চিত হয়ে গেছে ৭ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের সাত নম্বরে থাকা বাংলাদেশের। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ইংল্যান্ড জেতায় বাংলাদেশকে হারাতে পারলেও অবিশ্বাস্য কিছু না ঘটলে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়বে ৯ পয়েন্ট নিয়ে আপাতত পাঁচ নম্বরে থাকা পাকিস্তান।
খাতা-কলমে পাকিস্তানের সেমিফাইনালে যাওয়ার সুযোগ এখনো রয়েছে। কারণ বাংলাদেশের বিপক্ষে জিতে যদি কোনোভাবে নিউজিল্যান্ডের নেট রানরেটকে (বর্তমানে ০.১৭৫) টপকে যায় পাকিস্তান (বর্তমানে -০.৭৯২) তাহলে সেমিতে যেতে পারে তারা।
সেক্ষেত্রে প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তানকে অন্তত ৩৫০ রান তুলতে হবে এবং বাংলাদেশকে অলআউট করে দিতে হবে মাত্র ৩৯ রানে। ৪০০ রান তুলতে পারলে হারাতে হবে ৩১৬ রানে। অর্থাৎ, তখন বাংলাদেশকে থামিয়ে দিতে হবে ৮৪ রানের মধ্যে। যদি কোনোভাবে সাড়ে চারশো তোলে পাকিস্তান, বাংলাদেশকে হারাতে হবে ৩২১ রানে। অর্থাৎ, তখন বাংলাদেশকে অলআউট করতে হবে ১২৯ রানের মধ্যে। আর বাংলাদেশ যদি আগে ব্যাটিংয়ে নামে কোনো বল মাঠে গড়ানোর আগেই পাকিস্তানের বিদায় নিশ্চিত!
দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে অনেক এগিয়ে পাকিস্তান। ৩৬ বারের সাক্ষাতে পাকিস্তানের ৩১ জয়ের বিপরীতে বাংলাদেশের জয় কেবল ৫টিতে।
তবে সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে যোজন যোজন এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। দুদলের সর্বশেষ ৪ বারের সাক্ষাতেই জয়ী দলটির নাম টিম টাইগার্স। এই পরিসংখ্যান নিশ্চিতভাবেই চাঙা রাখবে বাংলাদেশকে। ২০১৫ সালে পাকিস্তানকে ঘরের মাঠে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করার পর গত এশিয়া কাপের দেখাতেও জয়ী লাল-সবুজরাই।
বিশ্বকাপের পরিসংখ্যানও বাংলাদেশের হয়েই কথা বলছে। ১৯৯৯ সালে নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতে সাড়া ফেলে দেয় টাইগাররা। পরে আর বিশ্বকাপে দেখা হয়নি দল দুটির।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সময়টা দুর্দান্ত কাটছিল। তবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জিততে জিততে হেরে যাওয়া এবং শ্রীলঙ্কা ম্যাচ বৃষ্টির কারণে ভেস্তে যাওয়ার চড়া মূল্য দিতে হয়েছে টাইগারদের। অন্যদিকে ভারতের বিপক্ষে ডু অর ডাই ম্যাচে ফিল্ডিং ও বোলিং-ব্যর্থতায় হেরে আগেভাগেই ছিটকে পড়েছে মাশরাফীর দল।
চলতি আসরে দুর্দান্ত ব্যাটিং নৈপুণ্য উপহার দিয়েছে বাংলাদেশ। তবে পেসারদের ব্যর্থতার চরম মূল্য দিতে হয়েছে। ইনিংসের প্রথম ১৫ ওভারে বাংলাদেশের পেসাররা ৭৯ ওভার বোলিং করে মাত্র দুই উইকেট নিয়েছেন এপর্যন্ত। অথচ দারুণ বোলিং করে ১৫ উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান। যার কোনটিই ইনিংসের প্রথম ১৫ ওভারে নয়। এতেই পরিষ্কার পেসারদের ব্যর্থতায় শুরুর দিকেই ম্যাচের লাগাম হাতছাড়া হয়েছে বাংলাদেশের।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি সাকিব আল হাসানের দুর্দান্ত ব্যাটিং ফর্ম। সাত ইনিংসে চারটি হাফসেঞ্চুরি, দুটি সেঞ্চুরি ও একটি ফিফটি ছুঁইছুঁই ইনিংসের সুবাদে ৫৪২ রান করেছেন তিনি। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক রোহিত শর্মার চেয়ে দুই রান পিছিয়ে আছেন সাকিব। বিদায়ের আগে নিশ্চিতভাবেই রানসংখ্যা বাড়িয়ে নিতে চাইবেন বিশ্বের নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার। বলে তার নামের পাশে ১১ উইকেট, টুর্নামেন্ট সেরা হওয়ার দৌড়ে অবস্থান শক্ত করতে আরও কিছু ঝলক তার কাছে আশা করাই যায়!
পাকিস্তান অন্যদিকে ইংল্যান্ড, সাউথ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ডের মতো হাইপ্রোফাইল দলের বিপক্ষে জয় পেলেও প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে বিধ্বস্ত হওয়ার মাশুল দিচ্ছে। সেই ম্যাচে চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ের ফলে নেট রানরেটে অনেক পিছিয়ে পড়েছে সরফরাজের দল। যে কারণে বাংলাদেশকে হারিয়ে নিউজিল্যান্ডের সমান ১১ পয়েন্ট পেলেও রানরেটের ব্যবধান ঘুচিয়ে সেমিতে যেতে পারবে না ১৯৯২ সালের চ্যাম্পিয়নরা।
নজর থাকবে যাদের উপর
মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা: চলতি আসরে মাশরাফীর বোলিং পারফরম্যান্স যাচ্ছেতাই। বাজে বোলিংয়ের কারণে সমালোচনার মুখে পড়েছেন টাইগার কাপ্তান। একাদশে তার জায়গা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্বকাপের পরপরই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে পারেন বলে আভাস দিয়ে রেখেছেন ম্যাশ। নিজের শেষ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের শেষ ম্যাচে নিশ্চিতভাবে ভালো করার জন্য মরিয়া হয়েই নামবেন তিনি। যদি শেষ বিশ্বকাপ ম্যাচে তার না খেলার গুঞ্জনও আছে!
বাবর আজম: পাকিস্তানের পারফরম্যান্স অধারাবাহিক হলেও ব্যাট হাতে দারুণ ছন্দে রয়েছেন বাবর আজম। ভবিষ্যতের বিরাট কোহলি ভাবা হয় তাকে! বাংলাদেশের বিপক্ষে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন তিনি।
টিম নিউজ
বৃহস্পতিবার অনুশীলনের সময় মুশফিকুর রহিম কনুইয়ে চোট পেয়ছেন। স্ক্যান করাতে যেতে হয়েছে কতটুকু গুরুতর জানতে। পাকিস্তানের বিপক্ষে সম্মানের লড়াইয়ে খেলবেন কিনা সেই সিদ্ধান্ত নিতে ম্যাচের আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ইনজুরি কাটিয়ে ফেরার অপেক্ষায়। ফিরলে তাকে জায়গা দিতে বেঞ্চে বসতে হবে সাব্বির রহমানকে। অন্যদিকে রুবেল হোসেন একাদশে জায়গা ধরে রাখবেন। সেক্ষেত্রে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে বেঞ্চে সময় কাটাতে হতে পারে স্পিন-অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজকে।
ওয়াহাব রিয়াজ শতভাগ ফিট না হওয়ায় তাকে নিয়ে ঝুঁকি নাও নিতে পারে পাকিস্তান। ফলে ওয়াহাবকে বিশ্রামে রেখে প্রথমবারের মতো চলতি বিশ্বকাপে একাদশে জায়গা পেতে পারেন আরেক পেসার মোহাম্মদ হাসনাইন।
ফ্যাক্ট
বাংলাদেশের বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেলেও শেষ ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে পঞ্চম দল হিসেবে টুর্নামেন্ট শেষ করতে মরিয়া মাশরাফীরা। যে কারণে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের বিকল্প ভাববে না টিম টাইগার্স।
সম্ভাব্য একাদশ
বাংলাদেশ: তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, সাকিব আল হাসান, লিটন দাস, মুশফিকুর রহিম/মোহাম্মদ মিঠুন, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, রুবেল হোসেন, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা ও মোস্তাফিজুর রহমান।
পাকিস্তান: ইমাম-উল হক, ফখর জামান, বাবর আজম, মোহাম্মদ হাফিজ, হারিস সোহেল, সরফরাজ আহমেদ, ইমাদ ওয়াসিম, শাদাব খান, মোহাম্মদ আমির, ওয়াবাহ রিয়াজ/মোহাম্মদ হাসনাইন ও শাহিন আফ্রিদি।