বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে জয়ের টাটকা সুখস্মৃতি নিয়েই মাঠে নামছে বাংলাদেশ। বুধবার শক্তিশালী নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে আত্মবিশ্বাসী টাইগাররা। নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে বেশ চনমনে রয়েছে কিউই শিবিরও। তবে উজ্জীবিত বাংলাদেশ যে ছেড়ে কথা বলবে না, সেটি সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই প্রমাণ করেছে লাল-সবুজরা।
নিজেদের প্রথম ম্যাচে সাউথ আফ্রিকাকে ২১ রানে হারিয়ে ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ১০ উইকেটে গুঁড়িয়ে নিজেদের শক্তিশালী উপস্থিতি জানান দিয়ে রেখেছে নিউজিল্যান্ড।
বিশ্বকাপে এর আগে চারবার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড, যেখানে নিউজিল্যান্ডের একচ্ছত্র আধিপত্য। চারটি ম্যাচেই জয় পায় কিউইরা। গত বিশ্বকাপে অবশ্য ম্যাককালামের দলের কঠিন পরীক্ষাই নিয়েছিল বাংলাদেশ। তাদেরই ঘরের মাঠে টাইগারদের হারাতে ৪৯ ওভার পর্যন্ত লড়তে হয় কিউইদের। এবার সেই পরীক্ষাটা আরেকধাপ এগিয়ে নেয়ার পালা মাশরাফীদের।
সবমিলিয়ে ৩৪ বারের সাক্ষাতে নিউজিল্যান্ডের জয় ২৪টি। আর বাংলাদেশ জিতেছে ১০ ম্যাচে। তবে গত বিশ্বকাপের পর থেকে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ এখন সেয়ানে সেয়ানে টক্কর দেয়ার মতো সক্ষমতা অর্জন করেছে। পার্থক্যটা সেখানেই গড়ার অপেক্ষা!
বিশ্বকাপের আগে ভারতের কাছে ১-৪ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজে পরাজিত হওয়া নিউজিল্যান্ড পরে ঘরের মাঠে বাংলাদেশকে ৩-০ ব্যবধানে বিধ্বস্ত করে। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ড সিরিজের হতাশার পর ত্রিদেশীয় সিরিজে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তিনবার হারিয়ে আত্মবিশ্বাস সঙ্গী করেই ইংল্যান্ডে পা রেখেছে বাংলাদেশ। সাউথ আফ্রিকাকে পরাজিত করে সেই আত্মবিশ্বাসের পালে জোর হাওয়া লাগিয়েছে টাইগাররা।
বাংলাদেশ চাইলে দুই বছর আগের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকেও অনুপ্রেরণা নিতে পারে। সেবার ইংল্যান্ডের মাটিতেই আইসিসির মর্যাদার আসরে সেমিফাইনালে ওঠার পথে নিউজিল্যান্ডকে হারায় টাইগাররা। কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনে সেই ম্যাচে ২৬৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩৩ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারিয়ে বসে মাশরাফীর দল। পঞ্চম উইকেটে সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ ২২৪ রানের অবিস্মরণীয় জুটি গড়ে বাংলাদেশকে মধুর জয় এনে দনে। ম্যাচে দুজনেই সেঞ্চুরি করেন।
সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে উদ্বোধনী জুটিতে বাংলাদেশকে উড়ন্ত সূচনা এনে দিয়েছিলেন তামিম ও সৌম্য। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও দারুণ শুরুর জন্য এ দুজনের দিকেই তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশ। সাকিব, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহর দারুণ ফর্মও আশার আলো দেখাচ্ছে।
প্রোটিয়াদের বিপক্ষে খরুচে হলেও ডেথ ওভারে মোস্তাফিজুর রহমান ও সাইফউদ্দিনের নিয়ন্ত্রিত বোলিং বাংলাদেশকে জয় এনে দিতে দারুণ ভূমিকা রেখেছে। কিউইদের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনের বিপক্ষেও তাদের কাছ থেকে গোছানো পারফরম্যান্সই আশা করবে লাল-সবুজের জার্সিধারীরা।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কলিন মুনরো ও মার্টিন গাপটিল ওপেনিং জুটিতেই খেলা শেষ করে আসনে। তাতে বিশ্বকাপের মতো মেগা ইভেন্টে এখনো কিউইদের মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যানদের কোনো পরীক্ষা দিতে হয়নি। মাশরাফী, মোস্তাফিজদের বিপক্ষে বড় পরীক্ষাই হয়ে যাবে গত বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালিস্টদের।
নিউজিল্যান্ডের জন্য ভয়ের অন্যতম কারণ হবে বাংলাদেশের স্পিনারদের সাফল্য, বিশেষ করে সাকিব রয়েছেন দারুণ ফর্মে। তবে সানরাইজার্স হায়দরাবাদে মুনরো ও কেন উইলিয়ামসন সাকিবের সঙ্গে খেলায় তাকে একটু বাড়তি চিনেই সামলানোর জন্য আশাবাদী হয়ে মাঠে নামবেন।
সাকিব অবশ্য নিউজিল্যান্ড ম্যাচ রাঙানোর দারুণ এক উপলক্ষই পাচ্ছেন। বাংলাদেশের তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে ২০০তম ওয়ানডে খেলতে যাচ্ছেন টাইগারদের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। এর আগে মাশরাফী (২১০) ও মুশফিকের (২০৬) এই কীর্তি রয়েছে।
২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পারফরম্যান্স যদি সাকিব লন্ডনের কেনিংটন ওভালেও অনূদিত করতে পারেন, তবে টানা দ্বিতীয় জয় দিয়ে বিশ্বকাপকে স্মরণীয় করে রাখার পথে অনেকটাই এগিয়ে যেতে পারবে বাংলাদেশ।
নজর থাকবে যাদের উপর
সৌম্য সরকার (বাংলাদেশ): সৌম্য সরকার নিজের প্রতিভার প্রতি সুবিচার করতে পারেননি এখনও! পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতার অভাবে একটা সময় দলে জায়গা নিয়েই প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন। তবে ২০১৮ সাল থেকে যেন বদলে যাওয়া এক বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের দেখাই পাচ্ছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে চলতি বছর নিজেকে মেলে ধরার চেষ্টার কোনো কমতি রাখেননি সৌম্য। সর্বশেষ চার ইনিংসে যথাক্রমে ৭৩, ৫৪, ৬৬ ও ৪২ রান করেছেন। সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে দুর্দান্ত শুরু এনে দিয়ে বাংলাদেশের বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের বোলারদের শুরুতে এলোমেলো করে দিতে পারলে সেটা বাংলাদেশকে দারুণ পথ দেখাবে।
রস টেলর (নিউজিল্যান্ড): বর্তমান দলের তো বটেই, সম্ভবত নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান তিনি। এমনিতেই দুর্দান্ত ফর্মেও রয়েছেন টেলর। সব ধরনের ফরম্যাট মিলিয়ে কিউইদের মাত্র তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে বুধবার ৪০০তম অন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামছেন তিনি। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে ওয়ানডেতে ৬৮.৮৫ গড়ে রান করেছেন টেলর। বাংলাদেশের বিপক্ষে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন এ তারকা ব্যাটসম্যান।
সম্ভাব্য একাদশ
বাংলাদেশ: তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ মিঠুন, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোসাদ্দেক হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা ও মোস্তাফিজুর রহমান।
নিউজিল্যান্ড: মার্টিন গাপটিল, কলিন মুনরো, কেন উইলিয়ামসন, রস টেলর, টম ল্যাথাম, জেমস নিশাম, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম, মিচেল স্যান্টেনার, ম্যাট হেনরি, লোকি ফার্গুসন ও ট্রেন্ট বোল্ট।