সাবেক ক্রিকেটার, জাতীয় ক্রিকেট কোচ, সংগঠক, সাংবাদিক, ক্রিকেট লেখক, অনেক পরিচয়ের গুণীজন জালাল আহমেদ চৌধুরী মঙ্গলবার সবাইকে ছেড়ে চলে গেছেন। তার মৃত্যুতে ব্যথিত দেশের ক্রীড়াঙ্গন। মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা ক্যারিয়ারের শুরুতে কোচ হিসেবে পেয়েছিলেন তাকে। ২০১৬ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে কলাবাগান ক্রীড়াচক্রে সবশেষ খেলেছেন তার অধীনে। গুরুকে হারিয়ে শোকে কাতর বাংলাদেশর সাবেক ওয়ানডে অধিনায়ক।
ফেসবুক পোষ্টে মাশরাফী লিখেছেন, ‘যাদের হাত ধরে ক্রিকেট জীবন শুরু করা, তাদের বিদায়গুলো এভাবে দেখা খুবই কঠিন। স্যার আপনার আন্ডারে খেলা, আপনার আদেশ, ড্রেসিংরুমে আপনার স্থির থাকা, আপনার লেখা, এ সবকিছুই এখন স্মৃতি হয়ে গেল। বাংলাদেশ ক্রিকেটে আপনার অবদান যারা দেখেছে তারা আজীবন মনে রাখবে। অসংখ্য খেলোয়াড়ের গুরু ছিলেন আপনি, আর হয়েও থাকবেন। ওপারে ভালো থাকবেন স্যার। আল্লাহ আপনাকে জান্নাতবাসী করুন, আমিন।’
দূর থেকেই ফেসবুক পোস্টে জালাল আহমেদকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, লিটন দাস, এনামুল হক বিজয়সহ আরও অনেকে।
মঙ্গলবার মিরপুরে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালনা পর্ষদের সভা শুরুর আগে এক মিনিট নীরবতা পালনের মাধ্যমে জানানো হয় শ্রদ্ধা। ক্রীড়া সংগঠন ও সাংবাদিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে শোক-সমবেদনা।
বিকেলে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে হয় মরহুমের প্রথম জানাজা। বাদ আছর আরেকটি জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে চিরশায়িত করা হয় জালাল আহমেদকে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।
বয়সে প্রবীণ হলেও তারুণ্যের চেতনা ধারণ করতেন সবসময়। যারা কাছ থেকে তাকে দেখেছেন, তাদের সবার কাছে পরম শ্রদ্ধেয় এক ব্যক্তিত্ব। অমায়িক কথাবার্তা, অসাধারণ শব্দচয়ন, চমৎকার লেখনীর কারণে সবার কাছে খুব অল্প সময়েই আদর্শ ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছিলেন তিনি।
মাসের শুরুতে প্রথম, গত সপ্তাহে দ্বিতীয় দফায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর আর উন্নতি ঘটেনি জালাল আহমেদের শারীরিক অবস্থার। ক্রমেই অবনতি ঘটতে থাকে। গত শুক্রবার থেকে রাখা হয় ভেন্টিলেশনে, ছিলেন আইসিইউতে। ফুসফুসের সংক্রমণ ও শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগে শেষপর্যন্ত পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন এ গুণী ক্রীড়াব্যক্তিত্ব।
খেলোয়াড়ি জীবনে ছিলেন দুর্দান্ত ক্রিকেটার। ষাটের দশকের মাঝামাঝি থেকে সত্তর দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত খেলেছেন ঢাকা ক্রিকেট লিগে। তারপর শুরু করেন কোচিং ক্যারিয়ার। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেট প্রশিক্ষক হিসেবে ভারতের পাতিয়ালায় উচ্চতর কোচিংয়ের ট্রেনিং কোর্স সম্পন্ন করেছিলেন।
পরে মোহামেডান, ধানমন্ডি ক্লাব, কলাবাগানসহ ঢাকার বেশ কয়েকটি শীর্ষ ক্লাবে কোচিং করান। কয়েকবছর আগেও মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা, মোহাম্মদ আশরাফুলদের কোচ হিসেবে ক্লাব ক্রিকেটে কাজ করেছেন। দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ তিনি।
বাংলাদেশ ক্রিকেটে জালাল আহমেদের অবদান অনেক। জাতীয় দলের কোচ হিসেবে কাজ করেছেন তিনি বিভিন্ন সময়ে। এছাড়াও বিসিবির হোম ডেভেলপমেন্ট, ক্রিকেট অপারেশান্স, আম্পায়ার্স কমিটিসহ নানা ভূমিকায় কাজ করেছেন। তার ক্রীড়া সাংবাদিকতা জীবনের যাত্রা আশির দশকের শুরুর দিকে। কোচিংয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন পত্রিকায় কলাম লিখে দারুণ খ্যাতি অর্জন করেন।