চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

বাংলাদেশে পিপিই উৎপাদনে কতদিন লাগবে?

ভয়ংক রূপ নিয়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সবচেয়ে জরুরি পণ্য পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) বা ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম। যার সংকট রয়েছে পৃথিবীর উন্নত, অনুন্নত সবদেশেই। বাংলাদেশ চাইছে, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশের চাহিদা মিটিয়ে পিপিই রপ্তানি করতে।

এরই মধ্যে পিপিই তৈরিতে জোর প্রচেষ্টা শুরু করেছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক উৎপাদনকারীরা। তবে স্ট্যান্ডার্ড পিপিই তৈরিতে অন্তত ৬ মাস সময় লাগতে পারে।

এ নিয়ে কাজ করছে এমন একটি সূত্র বলছে, ইতোমধ্যে আইএলও, ডব্লিউএইচও, ডব্লিউএফপি, ইউনিসেফ এবং অন্যান্য সংস্থার একটি জোটের সাথে আলোচনা করেছে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ। সংস্থাগুলো এ বিষয়ে সহায়তা করবে বলেও আশ্বাস দিয়েছে।

এ জন্য কারখানায় নতুন মেশিন স্থাপন ও কর্মীদের প্রশিক্ষণে কিছুটা সময় লাগবে। তাছাড়া উন্নতমানের ফেব্রিক আরও সহজলভ্য হতে হবে বলে জানান উৎপাদনকারীরা।

সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘বাংলাদেশ থেকে বেশ কয়েক ধরনের মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট বা চিকিৎসা সরঞ্জাম নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, তারা এগুলো সরবরাহ করতে পারবে। ইতোমধ্যে প্রতিদিন প্রায় ৬ লাখের মতো মাস্ক তৈরি হচ্ছে। আগে ১২ হাজার পিপিই তৈরি হতো, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে প্রতিদিন ৫ লাখ পিপিই তৈরি হবে।’

পোশাক উৎপাদনকারীদের সূত্রগুলো বলছে, দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠানই বিজিএমইএর কাছে পিপিই চেয়েছে।

বিজিএমইএও মনে করে, বাংলাদেশে পিপিই স্যুটের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। কেবল চিকিৎসক এবং নার্সদের জন্য নয়, হাসপাতালের সব কর্মীদের জন্যই পিপিই’র প্রয়োজন।

তবে সংগঠনটি বলছে, পিপিই স্যুটগুলো স্থানীয়ভাবে সাধারণত দেশের পোশাক উৎপাদনকারীরা তৈরি করে না। কারণ এগুলো তৈরির জন্য চিকিৎসা গ্রেড এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মান অনুযায়ী স্ট্যান্ডার্ড ফেব্রিক আমদানি করতে হয়। যা প্রধানত চীন থেকে আমদানি করতে হয়।

এছাড়া চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য পিপিই স্যুট তৈরি করতে কারখানাগুলোতে কিছু বিশেষায়িত যন্ত্রপাতিসহ সিল সিলিং মেশিন দিয়ে পুনরায় প্রস্তুত করতে হবে। কারখানার পরিবেশও জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে। প্রয়োজনীয় প্রশংসাপত্র এবং প্রশিক্ষণ নিতে হবে। বাংলাদেশের কারখানাগুলোর এসব প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে কমপক্ষে ৬ মাস বা তার বেশি সময় লাগবে।

তবে বর্তমানে বিজিএমইএ অনুদান হিসেবে দেওয়ার জন্য কমপক্ষে ২০ হাজার পিপিই তৈরি করার পরিকল্পনা করছে। যেগুলো প্রথম স্তরের পিপিই। যদিও করোনার রোগীদের চিকিৎসা দেয়া চিকিৎসক এবং কর্মীদের জন্য প্রয়োজন সাধারণত ৩/৪ স্তর বিশিষ্ট পিপিই।

এ বিষয়ে বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, আমাদের প্রথম স্তরের এই পণ্যগুলো পুরোপুরি প্রত্যয়িত বা উপযুক্ত নয়। চিকিৎসকরা শুধুমাত্র করোনার লক্ষণযুক্ত রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে নয়, সব কাজেই সুরক্ষা আশা করে।’

‘‘তবে আশার কথা- এই পিপইগুলো পানিতে ভিজবে না। এর মান মোটামুটি পেশাদার পিপিইর কাছাকাছি। স্যুটগুলো স্বাস্থ্যকর্মী এবং চিকিৎসকরা পরতে পারবেন। এই মুহূর্তে অন্তত এটি সহায়তা করবে তাদের। আশা করছি এসব পিপিই দিয়ে দেশের ১০ থেকে ২০ শতাংশ চিকিৎসকদের সহায়তা করা যাবে।’’

এই পিপিইগুলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে অনুমোদন দিয়েছে। তারা এগুলোকে প্রথম স্তরের পিপিই হিসাবে প্রত্যয়নপত্র দিয়েছে বলে জানান তিনি।

রুবানা হক বলেন, ‘এই পিপিই তৈরিতে বর্তমানে বিজিএমইএর অনেক সদস্য কাপড় দিয়ে সহযোগিতা করছেন। আমরা কিছু কাপড় কেনার জন্য তহবিল গঠনের পরিকল্পনাও করছি। অনেক সদস্য কম দামে ফেব্রিক দিচ্ছেন।’

‘‘আপাতত সরকারী এবং আধা-সরকারী সংস্থাসহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে (ডিজিএইচএস) পিপিই দেয়া হবে। এছাড়াও অন্যান্য সংস্থা এবং এনজিওর সাথে জোটবদ্ধ হয়েও কাজ করছেন।’’

বাণিজ্যিকভাবে পিপিই তৈরি করতে চায় পোশাক মালিকেরা। এ বিষয়ে কারখানাগুলো কতটা প্রস্তুত?

এ বিষয়ে রুবানা হক বলেন, যত তাড়াতাড়ি উপযুক্ত ফেব্রিক পাবো, তত দ্রুতই আমরা পিপিই তৈরি করতে পারবো। আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো পিপিইগুললো সারা বিশ্বে রপ্তানি করা এবং এটি খুব দ্রুতই করতে চাই। তবুও আমরা বিকল্পভাবে চীন থেকে ফেব্রিক আনার চেষ্টা করছি। বর্তমানে বিমানের চলাচলের রুটে বিলম্বের কারণে সেখান থেকে ফেব্রিক আসতে ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগবে।

তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে আইএলও, ডব্লিউএইচও, ডব্লিউএফপি, ইউনিসেফ এবং অন্যান্য সংস্থার একটি জোটের সাথে আলোচনা করছি। পিপিই উৎপাদন করার প্রক্রিয়াকে কিভাবে ত্বরান্বিত করা যায়। তারা সরবরাহ পদ্ধতি এবং প্রযুক্তিগত জ্ঞান দিয়ে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশে করোনা মোকারেলায় এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদনের জন্য বিদেশ থেকে কাঁচামাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যে এসব কাঁচামাল আমদানিতে সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত ২৫ মার্চ পিপিই তৈরির অনুমোদন দেয়ার পর কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে কয়েক লাখ পিপিই তৈরির কাজ চলছে ৫টি কারখানায়। আরও এক ডজন কারখানা সুরক্ষা পোশাক তৈরি শুরু করবে সপ্তাহখানেকের মধ্যে।

বিজিএমই, অরুণাচল ট্রাস্ট, বুয়েট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, যুক্তরাজ্যের খ্যাতনামা চেইন শপ মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন–এই পাঁচ প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে পিপিই তৈরির পদক্ষেপ নিয়েছে।

তাদের যৌথ উদ্যোগে ৫টি গার্মেন্টস উর্মি গ্রুপ, স্নো টেক্স, আমান গ্রুপ, ডেকো গ্রুপ এবং স্মার্টেক্স গ্রুপ ২৫ মার্চ থেকে পিপিই উৎপাদন শুরু করেছে। কমপক্ষে ৫ লাখ সুরক্ষা পোশাক তৈরি করবে তারা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় ঔষধালয় চট্টগ্রাম ইপিজেডের বিশেষায়িত পোশাক কারখানা স্মার্ট জ্যাকেট লিমিটেডকে এক লাখ পিপিই তৈরির কার্যাদেশ দিয়েছে। এরই মধ্যে কারখানাটি ৫০ হাজার পিস পিপিই তৈরি করে ঢাকায় পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে।