সৌদি আরবে নারীদের জন্য বিধিমালায় এখন ব্যাপক সংস্কার চলছে। এরই মধ্যে স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখার সুযোগ পাচ্ছেন সেখানকার নারীরা। অনুষ্ঠিত হয়েছে মেয়েদের ম্যারাথনও। গত মার্চে প্রথম বারের মতো মেয়েদের ম্যারাথনে অংশ নেয় সৌদি আরবের মেয়েরা। ড্রাইভিংয়ের অধিকারও মিলেছে তাদের। সেনাসদস্যও নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে নারীদের। সৌদি আরব যেখানে এতটা সামনে এগিয়ে আসছে সেখানে বাংলাদেশের চিত্রটা কী?
৭১ সালে যে প্রগতিশীলতার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের জন্ম সেটা কতটা এগিয়েছে। বাংলাদেশও কি সমান তালে এগোচ্ছে, নাকি আরো বেশি পশ্চাৎপদ হচ্ছে দেশের নারীরা।
তুলনামূলক হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান সর্ম্পকে মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, প্রগতিশীলতার হাত ধরেই বাংলাদেশের জন্ম। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন আর এরপরে স্বাধীনতা আন্দোলনে আমরা সেই প্রভাব দেখি। কিন্তু আরব বিশ্বে সবসময় নারীকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। ইরানে এখন অনেক নারী প্রগতিশীল। তবে সৌদি আরবের এভাবে সামনে আসাটা ইতিবাচক। আর বাংলাদেশের ভালো মন্দ, আলো-অন্ধকার সব দিকই আছে। কিছু মেয়ে যেমন এগিয়ে যাচ্ছে তেমন কিছু মেয়েরা পিছিয়েও রয়েছে।
তবে অন্ধকারে থাকা মেয়েদের আরো এগিয়ে নিতে সবার আগে পরিবারের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর পক্ষেই মত দেন এই নারী নেত্রী। তিনি বলেন, সচেতনতা সমাজের ভেতরে তৈরি হয়েছে তবে নারীর নিরাপত্তা তৈরি হয়েছে কিনা সেদিকে নজর দিতে হবে।
এ বিষয়ে কলামিস্ট ও উন্নয়নকর্মী চিররঞ্জন সরকার বলেন, বাংলাদেশ আর সৌদি আরবের কথা তুলনামূলক আলোচনা করলে মন হয় ওরা অন্ধকার থেকে আলোর দিকে আসছে আর আমরা আলো থেকে অন্ধকারের দিকে যাচ্ছি। সেখানে সৌদি আরবের মতো দেশের নারীরা এখন খেলার মাঠে, ড্রাইভিংয়ে, ম্যারাথনে অংশ নিয়ে সামনের দিকে যাচ্ছে। তারা তাদের নীতি শিথিল করে সামনের দিকে এগোচ্ছে আর আমরা স্বাধানতার পর যেন পেছনের দিকে এগোচ্ছি। আগে আচরণে ও পোশাকে যতটা প্রগতিশীল ছিলাম স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান সময়ে যেন সেই পথ থেকে অনেকটাই পেছাচ্ছি আমরা। রক্ষণশীলতা ও মৌলবাদীতা অনেকটাই এগিয়ে গেছে সামনের দিকে। তবে সৌদি আরবের এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টা অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ।
বাংলাদেশের নারীদের পশ্চাৎপদতার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে চিররঞ্জন বলেন, আমাদের নীতি নির্ধারণী বিষয়টা যতটা নারীবান্ধব হওয়ার কথা ছিলো সেটা হয়নি। সম্পদে নারীর সমান অধিকার নেই। বাল্যবিবাহের বিষয়টাও রাখা হয়েছে বিশেষ বিধান রেখেই। এভাবেই বরাবর নারীর প্রগতিমুখী যাত্রা সংকোচন করা হয়েছে। অন্যদিকে প্রযুক্তি, নিরাপত্তা ও কর্মক্ষেত্রেও নারীদের ব্যাপক পিছিয়ে পড়া লক্ষ করা যাচ্ছে। এসব মোকাবেলা করতে হবে। আমাদের দেশে অনেক ক্ষেত্রেই প্রগতিশীল কর্মকাণ্ড দেখা যাচ্ছে কিন্তু দেশে মানসিক অগ্রগতি কম হচ্ছে। সাক্ষরতার হার বাড়ছে কিন্তু চিন্তা চেতনায় প্রগতিমুখীতা ও যুক্তিবাদিতার তেমন অগ্রসর হচ্ছেন না। সেই জায়গাগুলোতেই বেশি বেশি নজর দিতে হবে।
তিনি আরও যোগ করে বলেন, শুধু নারীদিবস কেন্দ্রিক নয়। বরং সবসময় নারীর উন্নয়নের দিকে নজর রাখতে হবে। নারীকে এগিয়ে নিতে ধারাবাহিক নীতি নির্ধারনী বিষয়ে সমষ্টিক ও সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। শিক্ষার মান ও হারের ক্ষেত্রে আমরা আরো পেছনের দিকে যাচ্ছি। যন্ত্র-প্রযুক্তি নারীদের হয়রানির হাতিয়ার হয়ে উঠছে। সাইবার ক্রাইমের ঘটনা ঘটছে অহরহ। সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে। আইন আমাদের আছে, নেই সেটার প্রয়োগ। সেসব দিকে নীতি নির্ধারক পরিবার ও প্রতিষ্ঠান থেকেও সবদিকে নজর দিতে হবে। কেবল আইন প্রনয়ন করলে হবে না সেসব বাস্তবায়নের সুযোগও থাকতে হবে।