বাংলাদেশে ও সার্বিয়ার সম্পর্ক উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করতে ইতালির রোমের বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন সার্বিয়ার জ্যেষ্ঠ্য উপ-প্রধানমন্ত্রী।
রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান সিকদার এবং সার্বিয়ার জ্যেষ্ঠ্য উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আইভিকা ড্যাসিক-এর মধ্যেকার সাক্ষাতে দু’দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথাও উঠে আসে।
আলোচনায় সার্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দু’দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে রাজনৈতিক সংলাপ এবং উভয় দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের সফর বিনিময়ের গুরুত্ব তুলে ধরেন। পাশাপাশি দু’দেশের ঐতিহাসিক বন্ধুত্বের উপর ভিত্তি করে সামগ্রিক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করার বিষয়ে তার আগ্রহের কথা জানান।
রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান সিকদার সার্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে একমত পোষণ করেন এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সাবেক যুগোস্লাভিয়ার রাষ্ট্রপতি মার্শাল জোসেফ টিটোর ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা স্মরণ করেন।
বৈঠকের পর দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দু’দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে বিশেষত অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও জোরদার করার বিষয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আন্তরিকতার সাথে কাজ করছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের পরে তার সার্বিয়ার ব্যবসায়ীদের সাথে বাণ্যিজিক সেমিনারে অংশগ্রহণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন: সেমিনারে দু’দেশের অর্থনৈতিক বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা করা হয়। তিনি দু’দেশের মধ্যে “প্রতিরক্ষা চুক্তি” এবং “সরকারি ও কুটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের ভিসা অব্যাহতি চুক্তি” স্বাক্ষরের জন্য চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে সার্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবহিত করেন। রাষ্ট্রদূত উচ্চ পর্যায়ের সফরের মাধ্যমে এ চুক্তি স্বাক্ষর সম্পাদন করা যেতে পারে বলে মত প্রকাশ করলে সার্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়ে তার আগ্রহের কথা জানান। রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান সিকদার ইতালিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং সার্বিয়া ও আলবেনিয়ার অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োজিত আছেন।
সাক্ষাৎ শেষে রাষ্ট্রদূত বেলগ্রেডে বাংলাদেশ ও সার্বিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি বিষয়ক সেমিনারে যোগদান করেন।
রোমে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং সার্বিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে “চেম্বার ভবনে” এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের উন্নয়ন চিত্র, বিদ্যমান বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ, বিনিয়োগের সম্ভাব্য ক্ষেত্রসমূহ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা এবং বাংলাদেশ ও সার্বিয়ার মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রসমূহ নিয়ে সেমিনারে আলোচনা করা হয়। এক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি, দ্বৈতকর অব্যাহতি চুক্তি এবং দু’দেশের বাণিজ্যিক সংগঠনগুলোর মধ্যে সমঝোতা স্মারক চুক্তি করা যায় বলে সেমিনারে মত প্রকাশ করা হয়।
রাষ্ট্রদূত আব্দুস সোবহান সিকদার-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সেমিনারে সার্বিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া অনুবিভাগের কর্মকর্তা এবং চেম্বার অব কমার্স এর নেতৃবৃন্দসহ প্রায় ৩০ জন সার্বিয়ান ব্যবসায়ী অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন চেম্বার অব কমার্স-এর আন্তর্জাতিক বিভাগের পরিচালক মিজ জেলেনা জোভানোভিস।
রাষ্ট্রদূত প্রথমেই বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন-২০২১ এবং ভিশন-২০৪১ সম্পর্কে এবং বিগত দশ বছরে বাংলাদেশের ধারাবাহিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের চিত্র ব্যবসায়ীদের কাছে তুলে ধরেন। তিনি বলেন: দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক শক্তিশালীকরণে অর্থনৈতিক সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এ সম্পর্ক উন্নয়নে সরকারের ভূমিকার পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের ভূমিকাও অনস্বীকার্য।
সেমিনারে ইকোনমিক কাউন্সেলর মানস মিত্র একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দেন। প্রেজেন্টেশনের শুরুতে তিনি সংক্ষিপ্তভাবে বাংলাদেশের ইতিহাস এবং ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন। এরপর বাংলাদেশের বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের বর্তমান অবস্থান এবং সার্বিয়ার সাথে বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্কের বিষয়ে আলোকপাত করেন।
সবশেষে তিনি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (BEZA), বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (BIDA) এবং হাই-টেক পার্ক-এ বিনিয়োগ করার সুযোগসহ বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা এবং বিনিয়োগের সম্ভাব্য ক্ষেত্র তুলে ধরেন। বিনিয়োগের সম্ভাব্য ক্ষেত্র হিসেবে তিনি পোশাক শিল্প, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, ফার্মাসিউটিক্যাল, তথ্য প্রযুক্তি, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, সিরামিকস, নবায়নযোগ্য শক্তি, ব্লু-ইকোনমি এবং ট্যুরিজম বিষয়ে প্রেজেন্টেশনে বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি।
উপস্থাপনার পর দু’জন সার্বিয়ান ব্যবসায়ী বাংলাদেশে তাদের ব্যবসার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এবং উপস্থিত অন্যদেরকেও বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসায় উৎসাহিত করেন।
এরপর প্রশ্ন-উত্তর ও মুক্ত আলোচনা পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ সরকারের যুগোপযোগী ট্যাক্স, উদার বাণিজ্যনীতি ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিভিন্ন দিক ও অগ্রগতির বিষয়ে প্রশ্ন করেন। রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান সিকদার ও ইকনমিক কাউন্সেলর মানস মিত্র এসব প্রশ্নের উত্তর দেন।