চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

বাংলাদেশের বাদ পড়ার কারণ রাজনৈতিক নাকি অর্থনৈতিক

কাতারে ভিসামুক্ত প্রবেশ তালিকায় বাংলাদেশের নাম না থাকার পেছনে রাজনৈতিক কারণ নেই। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, এর কারণ অর্থনৈতিক।

সম্প্রতি নীতিমালায় পরিবর্তন এনে দক্ষিণ এশিয়ার ভারত, মালদ্বীপসহ বিশ্বের মোট ৮০টি দেশকে ভিসামুক্ত প্রবেশ সুবিধা দিয়েছে কাতার। দেশটিতে অনেক বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করেন। কাতারের নতুন এই ভিসা নীতিতে বাংলাদেশের নাম না থাকায় বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশিদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়।

বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন।

পর্যটনকে গুরুত্ব দিতেই কাতারের নতুন ভিসা নীতি গ্রহণ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘এটি তাদের একক সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে কূটনৈতিক সম্পর্ক থেকে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের নাম বাদ পড়তে পারে।

‘এক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলো, তার মানে এই নয় যে, বাংলাদেশের সঙ্গে কাতারে সম্পর্ক খারাপ হয়ে গেল। এই সিদ্ধান্ত দেশটিতে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের উপর বা কূটনৈতিক ক্ষেত্রে বর্তমানে বা ভবিষ্যতে কোন ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। দেশটি গত বছর বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্কের কথা বলে বাংলাদেশ থেকে বিনামূল্যে জনশক্তি নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। সে নীতির বাস্তবায়ন না হলেও, সে অবস্থান থেকে দেশটি সরে আসেনি।’

অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন

পর্যটনকে গুরুত্ব দেয়ার কারণে যেসব দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেশি এবং ভ্রমণে আগ্রহী তাদেরকেই কাতার বেশি গুরুত্ব দিয়ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, নিম্ন আয়ের বা মধ্য আয়ের অথবা উন্নয়নশীল দেশগুলোর থেকে উন্নত দেশ, অর্থাৎ যেসব দেশের নাগরিকদের মাথাপিছু আয় তুলনামূলক বেশি তাদেরকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি অবৈধ অভিবাসী বৃদ্ধির বিষয়ে সচেতনতার বিষয়টি মাথায় রেখেও অনেক দেশকে বাদ দেয়া হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

কাতারের সিদ্ধান্তে ধর্মীয় বিষয়টিও তেমন গুরুত্ব পায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার মনে হয় না ইসলামিক জোটে থাকার কারণে কাতার বাংলাদেশ নিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেসব দেশের মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বেশি বা যে সব দেশ পর্যটনে এগিয়ে রয়েছে তাদেরকেই সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। এ ছাড়াও কাতারের মতো দেশ এই আশঙ্কায় থাকে যে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ভিসামুক্ত সুবিধার আওতায় আনা হলে সেসব দেশের নাগরিকরা এর সুবিধা গ্রহণ করে দেশটিতে অবাধে প্রবেশ করবে এবং সেখানে নেতিবাচক তৎপরতা বৃদ্ধি পেতে পাবে।

এই নীতি ঘোষণার মাধ্যমেই কার্যকর শুরু হয় এবং এর মধ্য দিয়ে কাতার সর্বোচ্চ সংখ্যক দেশকে ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়া আরব উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশে পরিণত হয়েছে।

নতুন নীতিমালা অনুসারে, তালিকাভুক্ত ওই ৮০টি দেশের নাগরিকরা কাতারে যেতে চাইলে তাদের কোন ভিসা ফি দেয়া লাগবে না। কমপক্ষে ছ’মাসের মেয়াদযুক্ত বৈধ পাসপোর্ট এবং কনফার্ম করা রিটার্ন টিকিট থাকলেই ফি ছাড়াই পোর্ট অব এন্ট্রিতে একাধিক সফরযোগ্য ভিসা ইস্যু করা হবে।

মৌলবাদ এবং জঙ্গিবাদে মদদ ও অর্থায়নের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য উপসাগরীয় অঞ্চলে অস্থিরতা সৃষ্টির অভিযোগে গত ৫ জুন সৌদি আরব, মিশর, বাহরাইন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) কাতারের সঙ্গে সব ধরণের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের পাশাপাশি দেশটির সঙ্গে সার্বিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। কাতার অবশ্য বারবারই এমন অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে।