দেশের চামড়া ও চামড়াজাত শিল্পের উন্নয়নে এ খাত সংশ্লিষ্টদের ‘ভিয়েতনাম মডেল’কে অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থ সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন।
রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে চামড়া ও পাদুকাসহ চামড়াজাত পণ্যকে ‘প্রোডাক্ট অব দ্য ইয়ার-২০১৭’ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, আগামী অর্থবছরে চামড়া খাত থেকে কি পরিমাণে রপ্তানি আয় করা যাবে সে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার।
চামড়া শিল্পে ভিয়েতনাম দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে উল্লেখ করে সরকারের সিনিয়র এ সচিব বলেন, ‘এ খাতে দেশটির রপ্তানি আয় ১২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এ জন্য ‘ভিয়েতনাম মডেল’ যে সব বাহ্যিক কারণে চামড়া শিল্পে দ্রুত উন্নতি লাভ করছে তা পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে।
ওই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮২ শতাংশই আসে তৈরি পোশাকখাত থেকে। এর পরই দ্বিতীয় প্রধান রপ্তানিখাত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ খাত থেকে এক বিলিয়ন ১৬ কোটি ডলার রপ্তানি আয় অর্জিত হয়। আশা করা যায়, ২০২১ সালের মধ্যে এ খাতের রপ্তানি আয় পৌঁছাবে ৫ বিলিয়ন ডলারে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত অর্থ বছরে (২০১৫-১৬) চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য খাত থেকে আয় হয়েছিল ১১৪ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের (২০১৬-১৭) জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত এই সাত মাসে ৬৯ কোটি ৩৮ লাখ ডলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রপ্তানি হয়েছে ৭৪ কোটি ৩৮ লাখ ডলারে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭ দশমিক ১৯ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থ বছরে এর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১২২ কোটি ডলার।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে জুতা উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ৮ম স্থানে রয়েছে। আগামী ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ হবে অন্যতম প্রতিযোগী দেশ।
ট্যানারী শিল্প স্থানান্তর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগামী জুনের মধ্যেই সাভারে ট্যানারী শিল্প নিতে হবে। এই জন্য সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও উদ্যোগ নেয়া জরুরী। কারণ শ্রম ও পরিবেশ বান্ধব কর্মপরিবেশ গড়ে তোলা ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নিশ্চিত করা দরকার। এতে ক্রেতাদের কাছে ইতিবাচক বার্তা পৌঁছানো সহজ হবে।
চামড়া শিল্পে কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা হচ্ছে উল্লেখ করে লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এলএফএমইএবি) এর সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রযুক্তি উন্নয়নের সাথে সাথে এ শিল্পের কর্মপরিবেশ উন্ন হচ্ছে। চলতি বছরের মধ্যে এ খাতের সব শ্রমিককে স্বাস্থ্য বীমার আওতায় আনা হবে।
চামড়া শিল্প নিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা আয়োজনের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, আন্তর্জাতিক বড় বড় ক্রেতা এ দেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে বর্তমানে এই শিল্পের অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে। তাই শিল্পের প্রসারে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা আয়োজন করা দরকার।
এ সময় তিনি গবাদি পশু আমদানির ক্ষেত্রে একটা সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানান।