গ্রামীণ অর্থনীতির পুনর্জাগরণ বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার মূল রসদ বলে মন্তব্য করে বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ডক্টর কৌশিক বসু বলেছেন, এই শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়েই চরচর করে বেড়ে উঠছে বাংলাদেশ। গাজীপুর ও শ্রীপুরে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির কর্মকাণ্ড দেখে বাংলাদেশের এই উন্নয়ন মডেল অন্য দেশে চালুর ইচ্ছাও প্রকাশ করেন তিনি।
৫ দিনের সফর শেষে বুধবার ফিরে গেছেন বিশ্বব্যাংকের প্রথম বাঙালি প্রধান অর্থনীতিবিদ। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সন্তান কৌশিক বসুর কাছে গ্রাম বাংলার জীবন-যাপন নতুন কিছু নয়। তবে ২২ বছর পর এসে বাংলাদেশের গ্রামীণ জনপদকে কিছুটা নতুন ঠেকেছে তার কাছে। বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে স্বীকার করেছেন, অনেক এগিয়েছে বাংলাদেশ। তৈরি পোশাক কারখানায় কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে বোঝার চেষ্টা করেছেন জেগে ওঠার গল্প।
শ্রীপুরে ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রে উপকারভোগীরাই বিশ্ব সেরা অর্থনীতিবিদকে শুনিয়েছেন তথ্য-প্রযুক্তি কীভাবে বদলে দিয়েছে নাগরিক সেবার ধরন-ধারন। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প কিভাবে দরিদ্র মানুষের পাশে থেকে মূলধন গড়ে দিচ্ছে তা-ও দেখেছেন তিনি। এজেন্ট ব্যাংকিং দেখে নিশ্চিত হয়েছেন আর্থিক অন্তর্ভুক্তির অভিযান নিয়ে।
তিনি বলেন, ‘ফাইনালশিয়াল ইনক্লুশনটা আসলে আমার বই পড়া বিদ্যা। পরিসংখ্যান দেখছি, ওয়াশিংটনে বসে বসে দেখেছি এখানে কি হচ্ছে। এই প্রথম চোখে দেখলাম প্রান্তি লোকেরা কিভাবে লোন পাচ্ছে। কিভাবে তাদেরকে অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। দেখে খুব ভালো লাগছে। এটা একটা মডেল এটাকে দেশের ভেতরে আরও ছড়িয়ে দিতে হবে।
গত পাঁচ-সাত বছরে দারিদ্রতা কমে এসছে। এর সঙ্গে যদি এই সকল কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে দেওয়া যায় তাহলে ফাইনালশিয়াল ইনক্লুশনটা আরও বাড়বে। আগে বইয়ে পড়েছি, এখন চোখে দেখলাম, মনে হচ্ছে অনেক উন্নতি হয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিং এখানে ভালো বিস্তার লাভ করেছে। আমি খুবই আশাবাদী এটা চলতে থাকলে খুব দ্রুতই এখানকার মানুষ উন্নতি করবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ সফর আর ৫টা সফরের চেয়ে বেশি কিছুই ছিলো কৌশিক বসুর জন্য। এ কর্মযোগের কৃতিত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরকে।
গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদের মুখ থেকে যে সন্তুষ্টির কথা শুনলাম সেটা আমাদের জন্য খুশির খবর। আমাদের উপকার ভোগীদের কথা শুনলাম। একটা কথা নিশ্চিত যে, এখানে ফাইনালশিয়াল ইনক্লুশনে একটা মডেল না-অনেক গুলো মডেল কাজ করছে। যেটা আমাদের নিচের দিককার অর্থনীনির পুনর্জাগরণে ভূমিকা রাখবে। এতে করে বিনিয়োগকারী তৈরী হচ্ছে। অন্যদিকে অনেক মানুষ এর উপকার পাচ্ছে।’
ফিরে যাওয়ার আগে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আরো গবেষণার জন্য বিশ্বব্যাংক সদর দপ্তর থেকে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানোর ইচ্ছের কথা জানিয়েছেন ডক্টর কৌশিক বসু।