আয়ারল্যান্ডে ছিনতাইকারী ধরতে গিয়ে মারা যাওয়া আকরাম হোসেন নামের এক বাংলাদেশি দোকানদারের জন্য ডাবলিনে শোকের ছায়া নেমেছে।
স্থানীয় সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ডাবলিনের বিভিন্ন গণমাধ্যমে আকরামের মৃত্যুর খবর আসার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শতশত মানুষ তাকে নিয়ে হাহাকার করছেন।
আকরাম হোসেন নামের ওই বাংলাদেশি ডাবলিনের ড্রামকন্ড্রা এলাকার ট্রেন স্টেশনের পাশে একটি সেনট্রা শপে কাজ করতেন।
চলতি মাসের ৪ তারিখে এক ছিনতাইকারীকে ধাওয়া করার সময় তার হার্ট অ্যাটাক হয়। পুলিশ জানায়, ওইদিন রাতে সেনট্রা শপ থেকে একজন বেশকিছু নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে দৌঁড়ে পালাতে নেয়। ওই ডাকাতটিকে ধরতে তাড়া করে আকরামসহ আরেকজন। দৌঁড়ানোর মাঝে হঠাৎ পড়ে যায় আকরাম। পরে তাকে দ্রুত হাসাপাতালে নেয়া হলে কতর্ব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় একটা মামলা হয়েছে। পুলিশ ইতিমধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
আকরাম পৃথিবীর সেরা মুদি দোকানি
আকরামের মৃত্যুর পর স্থানীয় বাসিন্দারা ক্লেয়ার গর্লের সেনট্রা শপ দোকানটিতে শোকবই রেখেছেন। সেখানে অনেক মানুষ আকরামকে স্মরণ করে মন্তব্য লিখছেন।
একজন লিখেছেন, ‘তার ব্যবহারে সব সময়ই মুগ্ধ হতাম, সে পৃথিবী সেরা মুদি দোকানি। আকরামের চলে যাওয়া মেনে নেয়া কঠিন। সে সব সময় আমাদের মাঝে থাকবে।’
একজন ফেইসবুকে লিখেছেন, ‘আমি আকরামকে চিনতাম। অনেক মজার মানুষ ছিলেন। দোকানে গেলেই আমাকে প্রিসেন্স বলে ডাকতেন। বাচ্চাদের দেখলেই চকলেট, মিষ্টি উপহার দিতেন। ওনাকে ভুলতে পারব না।’
ড্রামকন্ড্রার সবার বন্ধু ছিলেন আকরাম
৪৫ বছর বয়সী আকরাম হোসেন দীর্ঘ ১৫ বছর যাবৎ ড্রামকন্ড্রায় ছিলেন। সেখানকার কমিউনিটির সবার কাছে খুব কাছের বন্ধু হয়ে উঠেছিলেন। বিবিসি বলছে, আকরামের মৃত্যুর পর যে শোকবই খোলা হয়েছে, সেটার পাতা উল্টে কমেন্টগুলো দেখলে চোখে পানি আসবেই।
সিওভেন কাহিল নামের একজন বিবিসিকে বলেন, সপ্তাহে তিন থেকে চার বার আকরামের সঙ্গে দেখা হতো। দোকানে গেলে অর্ডার করার সময় সাহায্যও করত। তিনি আমাদের কমিউনিটির একজন বন্ধু ছিলেন। বয়স্ক ও শিশুদের প্রতি আকরাম ছিলেন প্রচণ্ড দুর্বল। তাদের প্রতি তার ভালোবাসা ছিল অপরিসীম।
তিনি বলেন, আকরাম প্রতি মাসে দেশে নিজ মা, স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য টাকা পাঠাতেন।
একজন জানান, আকরামের সঙ্গে দীর্ঘদিনের পরিচয়, তিনি ছিলেন সৎ, হাস্যোজ্জ্বল, মহৎ গুণের মানুষ।
অনলাইনে তহবিল সংগ্রহ করছে ড্রামকন্ড্রাবাসী
প্রিয় বন্ধু আকরামের জন্য অনলাইনে তহবিল সংগ্রহ করছে ড্রামকন্ড্রাবাসী। ক্যাম্পেইন পেজে আকরামকে ‘প্রিয় বন্ধু’ উল্লেখ করে লেখা হয়েছে, ‘আকরাম হোসেন আমাদের সবার প্রিয় বন্ধু ছিলেন। তার মর্মান্তিক মৃত্যুর পর পরিবারকে সাহায্য করতে এই তহবিল সংগ্রহ করা হচ্ছে।’
অনলাইনে তহবিল সংগ্রহের আইরিশ প্ল্যাটফর্ম আইডোনেটে একটি ক্যাম্পেইন চালু করেছেন স্থানীয়রা।
আকরামের পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা দিয়ে সাহায্য করতে চাওয়া ড্রামকন্ড্রাবাসী ইতিমধ্যে ৪০ লাখের বেশি টাকা তহবিলে সংগ্রহ করেছে।
অন্তিম যাত্রায় আকরামকে স্মরণ, চিরশান্তি কামনা
আকরামের লাশ দেশে আনার আগে শেষ শ্রদ্ধার জন্য রাখা হয়েছিল তার সেনট্রা শপের পাশে। সেখানে ড্রামকন্ড্রাবাসী তার জন্য শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তারা আকরামের জন্য চিরশান্তি কামনা করেন।
আকরামের সহকর্মী পেগি গ্রোয়ার্ক জানান, ‘আমাদের কমিউনিটি আজকে শেষ বিদায় দিচ্ছে। আমরা তার চিরশান্তি কামনা করছি। উনার শেষ যাত্রায় আমারা প্রায় সবাই এসেছি।’
আরেকজন বলেন, ‘ড্রামকন্ড্রাবাসীর জন্য গভীর শোক। তারমতো একজন বিনয়ী মানুষের বিদায় মেনে নেওয়া কষ্টকর। আমরা শোকাহত।’
জানা যায়, বাংলাদেশে আকরাম হোসেনের বাড়ি বিক্রমপুরে। ঢাকার মিরপুরে তার পরিবারের বসবাস। মিরপুরে আকরামের ১৪ বছর বয়সী ছেলে আছে। সেখানে তার স্ত্রী, মা, বোন এবং ভাই থাকেন।