একসময় বিশ্বকাপে বাংলাদেশের লক্ষ্য থাকতো প্রতিদ্বন্দ্বিতা উপহার দেয়া। এরপর চাওয়া থাকতো দু-একটি ম্যাচে জিতে হাসিমুখে বাড়ি ফেরা! সময় বদলেছে, বদলে গেছে বাংলাদেশ দলও। এখন মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার দল বিশ্বকাপের অন্যতম সমীহজাগানো প্রতিপক্ষ হিসেবে ইংল্যান্ডে পা রেখেছে। গত কয়েকবছর ধরে বাংলাদেশের ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের সুবাদেই টাইগারদের সমীহ করতে বাধ্য হয়েছে অন্য দলগুলো।
বিশ্বকাপের আগে ত্রিদেশীয় সিরিজে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তিনবার হারিয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর রসদ পেয়েছে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলস বিশ্বকাপে টাইগারদের জন্য যেমন অনেক সম্ভাবনার হাতছানি থাকবে, তেমনি কিছু ভাবনার জায়গাও রয়েছে। দ্বাদশ বিশ্বকাপে স্মরণীয় মুহূর্ত উপহার দিতে সেই জায়গা এবং সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে মাশরাফীর দলের।
প্রত্যাশার চাপ: ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা বাংলাদেশ ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে খেলে। এরপর পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে ২০১৮ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালে, নিধাস ট্রফির ফাইনালে জায়গা করে নেয়। বিশ্বকাপের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তিন ম্যাচের তিনটিতে হারিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজে চ্যাম্পিয়ন হয় টিম বাংলাদেশ। দুর্দান্ত এই পারফরম্যান্সের সুবাদে বাংলাদেশ দলের প্রতি সমর্থকদের প্রত্যাশাও পাহাড়সম। সেই প্রত্যাশার চাপে মাশরাফীরা ভেঙে পড়েন নাকি সেটিকে অনুপ্রেরণায় রূপ দিতে পারেন সেটিই দেখার বিষয়।
দ্রুত রান তোলায় ঝুঁকি: দ্রুত রান তোলার পাশাপাশি উইকেট ধরে রাখার প্রতি মনোযোগ দিতে হবে বাংলাদেশকে। ইংল্যান্ডের পিচ এবার ব্যাটসম্যানদের জন্য আদর্শ বলে ভাবা হচ্ছে। ক্রিজে টিকে থাকতে পারলে রান করা কঠিন হবে না সেটি ইতোমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে। তবে দ্রুত রান তুলতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে দেয়ার যে প্রবণতা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে, বিশ্বকাপেও সেটি গটলে বিপদে পড়তে পারে টাইগাররা।
ডেথের বোলিং: ডেথের বোলিং নিয়ে বাংলাদেশের সমস্যা বেশ পুরনো। ইনিংসের শেষদিকে এসে খেই হারিয়ে ফেলেন বাংলাদেশের বোলাররা। বিশ্বমঞ্চে এদিকে মনোযোগ দিতে হবে টাইগারদের। সঙ্গে ডেথের ওভারগুলোতে রান তোলায়ও টাইগার ব্যাটসম্যানদের ধারাবাহিক হতে হবে সাফল্য পেতে।
সাব্বির নাকি মোসাদ্দেক- সাতে কে? -বিশ্বকাপে সাব্বির রহমানকে খেলানোর জন্য নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ কমিয়ে আনে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। গত নিউজিল্যান্ড সফরে সেঞ্চুরি করে আস্থার প্রতিদান দেন সাব্বিরও। অন্যদিকে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে দুর্দান্ত ইনিংস খেলে বার্তা দিয়ে রাখেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। ফলে সাত নম্বর পজিশনে সাব্বির নাকি মোসাদ্দেক খেলবেন সেটি নিয়ে মধুর সমস্যায় পড়বে টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে কার্যকরী স্পিন করতে পারার জন্য এগিয়ে থাকবেন মোসাদ্দেকই।
নতুন বল কার হাতে? মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন নাকি রুবেল হোসেন- দুজনের কাকে বেছে নেবে বাংলাদেশ। পেস বোলিংয়ের সাথে ঝড়ো ব্যাটিং করতে পারঙ্গম সাইফউদ্দিন। অন্যদিকে রুবেলের সম্বল কেবল বোলিং। ডেথ ওভারে মাশরাফীর পছন্দ রুবেল। তবে লম্বা ব্যাটিং লাইন মাথায় রাখলে সাইফউদ্দিনকেই বেছে নিতে পারে টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে মেহেদী হাসান মিরাজ যদি একাদশে জায়গা না পান, তাতে রুবেল-সাইফউদ্দিন দুজনেরই দেখা মিলবে দলে। সেক্ষেত্রে নতুন বলে মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গী হতে পারেন রুবেল কিংবা সাইফউদ্দিন।
গতির বোলার না থাকা: বাংলাদেশ দলে গতির ঝড় তোলার মতো বোলার নেই বললেই চলে। মোস্তাফিজ ইয়র্কার ও কাটারে গতির ঘাটতি অনেকটাই পুষিয়ে দিতে সক্ষম। তবে অন্যরা কেমন করেন সেটিই দেখার বিষয়। বেশি গতি যার, সেই রুবেল আবার একাদশে অটোমেটিক চয়েস নন। প্রতিপক্ষের বুকে কাঁপন ধরানোর মতো একজন গতির বোলারের অভাব বাংলাদেশ দলকে ভোগাতে পারে।
তিনে কে? -সাকিব আল হাসান তিন নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ের জন্য প্রকাশ্যে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সুযোগ পেয়ে পারফর্মও করছেন। অন্যদিকে ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে ওপেনিংয়ে নেমে ৭৩ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস উপহার দেন লিটন দাস। তার আগে ত্রিদেশীয় সিরিজে একবার সুযোগ পেয়েই করেন ফিফটি। তবে ওপেনিংয়ে যথারীতি তামিম ও সৌম্য সরকার থাকলে লিটনের একাদশে জায়গা মিলবে না। সেক্ষেত্রে সাকিবই থাকবেন তিন নম্বরে। তবে তামিম, সৌম্য ও লিটন একসঙ্গে একাদশে থাকলে তিন নম্বর পজিশনে কাকে খেলানো হবে সেটি নিয়ে স্থির সিদ্ধান্তে না আসলে প্রভাব পড়তে পারে পারফরম্যান্সে।