ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের কর্তৃক হামলার বিচার না করা হলে এবং ক্যাম্পাস বহিরাগতমুক্ত না হলে আত্মহত্যা করবেন বলে হুমকি দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তাজুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বহিরাগতমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করার দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধন পরবর্তী সমাবেশে এ হুমকি দেন তিনি।
মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে ঢাবি ও বুয়েটের মধ্যবর্তী ‘পলাশী’ থেকে ক্যাম্পাসে ফেরার পথে বহিরাগত এক যুবকের সঙ্গে তাজুল ইসলামের ধাক্কা লাগে। এ নিয়ে প্রথমে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে ওই যুবকসহ তার সতীর্থরা তাজুলকে বেধড়ক মারধর করে।
এ ঘটনায় তাজুলের হাত ভেঙে যায়। শরীরের অন্যান্য স্থানেও গুরুতর আঘাত পান তিনি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে এসে মানববন্ধনে অংশ নেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসের সামনে সমাবেশে তাজুল ইসলাম বলেন, আমার উপর হামলার বিচার না করা হলে এবং ক্যাম্পাস বহিরাগতমুক্ত না হলে আমি আত্মহত্যা করবো। আর যদি আমাকে লিখিতভাবে অভিযোগ দিতে বলা হয় তাহলে প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে সে অভিযোগপত্র লিখতে আমি রাজি আছি।
এসময় তার সঙ্গে সংহতি জানান ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর, এজিএস সাদ্দাম হোসাইন, সদস্য রাকিবুল হাসান ঐতিহ্য। এসময় সেখানে কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম-আহ্বায়ক ফারুক হাসান, মশিউর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সেখানে নুরুল হক নুর বলেন, দীর্ঘদিন ডাকসু না থাকায় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক হয়েছে ‘সুপেরিয়র’ ও ‘ইনফেরিয়র’ এর মতো। এ সমস্যা দীর্ঘদিনের। যেকোনো বিষয়ে প্রশাসনকে জানালে তারা ‘গা ছাড়া’ ভাব দেখায়। ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের অবাধ বিচরণের বিষয়ে অভিযোগ করলে তারা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তা সিটি কর্পোরেশনের আওতায়’।
অথচ গতবছর সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সঙ্গে বুয়েটের সমস্যা হলে বুয়েট কর্তৃপক্ষ বহিরাগত ও বহিরাগত যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করে। তিনি বলেন, এখন শুধু লিখিত আকারে দাবি জানিয়ে বসে থাকবো না, দাবি আদায়ে সচেষ্ট হবো। ক্যাম্পাসের সড়কে শৃঙ্খলা আনয়নে ডাকসুর পক্ষ থেকে শুক্রবার একটি মিটিং করা হবে। মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত সকলকে জানানো হবে। এর বাইরেও যদি শিক্ষার্থীদের কোনো দাবি আমাদের তা প্রশাসনের কাছে তুলে ধরবো।
সাদ্দাম হোসাইন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও বাইরের মানুষের কারণে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পরিবেশ বিঘ্নিত হয়।
আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনকে জানিয়েছি। এরপরও যদি প্রশাসন ব্যবস্থা না নেয় তাহলে ছাত্ররাই প্রশাসনের ভূমিকা পালন করবে। তাজুলের উপর হামলায় জড়িতদের সনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তিনি বলেন, প্রশাসন যদি চাইতো তাহলে আজ আমাদের রাজপথ প্রকম্পিত করতে হতো না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু হবে শিক্ষার্থীরা। তাদের সুবিধার জন্যই প্রশাসনকে কাজ করতে হবে।
এর আগে বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে এর আয়োজন করা হয়। মানববন্ধনে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
এ সময় তাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে যোগ দেন ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন, সংস্কৃতি সম্পাদক আসিফ তালুকদার, আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাহরিমা তানজিনা অর্ণি ও সদস্য তানভির হাসান সৈকত। সেখানে ডাকসু নেতারা লিখিত অভিযোগ দেওয়ার কথা বলেন। মানববন্ধন শেষে তারা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভটি প্রক্টর অফিসের সামনে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।