প্রচন্ড গরমের পর যখন বর্ষা মৌসুম আসে তখন সবাই যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। তাপদাহ’র কষ্ট থেকে হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন। কিন্তু তার সঙ্গে শুরু হয় শিশুদের নিয়ে মা-বাবার দুশ্চিন্তা। কারণ এ মৌসুমেই শিশুরা প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়েন।
বর্ষা মৌসুমে শিশুদের ঠান্ডা-জ্বর, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া, বদ হজম, পেটে ব্যথাসহ বিভিন্ন অসুখ লেগেই থাকে। অনেক সময় মা-বাবা খুব সচেতন থাকার পরও শিশুর অসুস্থতা ঠেকানো যায় না। কেনো এই অসুখগুলো হয়, বা কীভাবে এর প্রতিকার করা যায়; এই নিয়ে চ্যানেল আই অনলাইনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিস্তারিত জানিয়েছেন রংপুর মেডিকেল কলেজের শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আবু আহমেদ মুর্তজা।
এ মৌসুমে শিশুদের বিভিন্ন অসুখের কারণ কী শুধুই ঠান্ডা আবহাওয়া? এ বিষয়ে ডাক্তার মুর্তজা বলেন, শুধু ঠান্ডা আবহাওয়াই নয়, নোংরা পরিবেশ, স্যাঁতসেতে আবহাওয়া কিংবা দূষিত পানির কারণেও শিশুদের অসুখ হয়ে থাকে। এই সময় তাপমাত্রায় অনেক তারতম্য হয়। কখনো অনেক গরম পড়ে, আবার বৃষ্টির পর তাপমাত্রা কমে যায়। তখন শিশুদের গরম থেকেও ঠান্ডা লাগে। আবার অনেক শিশু পানিতে ভিজেও ঠান্ডা লাগায়।
অনেক মা-বাবা আছেন শিশুদের বৃষ্টিতে ভিজতে দেন না, বিশুদ্ধ খাবার পানি খাওয়ান এবং বাহিরের খাবার খাওয়া থেকে বিরত রাখেন। তারপরও শিশুদের ডায়রিয়া, কলেরাসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ হয়ে থাকে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কিছু কিছু অসুখ আছে বায়ুবাহিত। যেগুলোর জীবাণু নিঃশ্বাসের সঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে। আবার মা-বাবার অজান্তেই শিশুদের এসব রোগ হয়ে যায়। মা হয়তো ধারণাই করতে পারেন না যে তার বাসায় তৈরি কোনো খাবার থেকেই শিশুটির সমস্যা হচ্ছে। বাজার থেকে যেসব ফলমূল এনে শিশুদের খাওয়ান। এগুলার মধ্যে ফরমালিন থাকলে শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ে।
অসুখের ভয়ে শিশুকে বাহিরে যেতে না দিয়ে আবদ্ধ পরিবেশে রাখা হলে শিশুরা প্রকৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে না জানিয়ে এ শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, এতে শিশুদের শরীরে প্রয়োজনীয় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠেনা।
এই মৌসুমে শিশুদের সর্দি-কাশি লেগেই থাকে। ওষুধ খেয়ে একটু ভালো হলেও কিছুদিন পর আবারো সর্দি হয়। প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই শিশুতে মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। মায়ের দুধ সর্দি-কাশি কমায়। এই দুধে শুধু পুষ্টিই নয়, টিকা, ওষুধ আছে যা শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে।
এছাড়াও শিশু যে রুমে ঘুমায় সেই রুমে খাট ছাড়া বেশি আসবাবপত্র রাখা উচিৎ নয়। আসবাবপত্র বেশি থাকলে তাতে ধূলো বেশি পড়ে যার ফলে ঘন ঘন সর্দি-কাশি হয়।
বর্ষা মৌসুমে শিশুদের রোগমুক্ত রাখতে তাদের খাদ্যের প্রতি জোর দিয়ে তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুমকে মধুমাস বলা হয়। এই সময় বিভিন্ন ধরণের পুষ্টিকর, উচ্চ ভিটামিন সমৃদ্ধ দেশি ফলমূল পাওয়া যায়। প্রতিদিনের খাবারের পাশাপাশি আম, কাঁঠাল, লিচু খাওয়াতে হবে।
এ সময় ডায়রিয়া ছাড়াও অনেক শিশু বলে থাকে তাদের পেটে ব্যথা করছে। এর কারণ উল্লেখ করে ডাক্তার আবু অাহমেদ বলেন, এই মৌসুমে পানিবাহিত রোগ বেশি হয়। ফলে কৃমিও বেড়ে যায়। মায়েরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মধ্যে থেকে খাবার তৈরি করলেও তাদের হাতে নখ বড় থাকলে শিশুদের মধ্যে কৃমি ছড়ায়। কৃমির কারণে শিশুদের পেটে ব্যথা হয়ে থাকে। আবার শিশুদের জোর করে বেশি খাবার খাওয়ালে তা বদ হজম হয়। ফলে শিশুরা বমি করে, তাদের পেটে ব্যথা হয়।
বর্ষা মৌসুমে জন্ম নেওয়া শিশুদের রোগ জীবাণু থেকে রক্ষা করতে তিনি বলেন, এসময় শিশুদের তেল মালিশ করা উচিৎ নয়। দুই-তিন দিন পরপর গোসল করাতে হবে। শিশুকে শুধু মায়ের কোলেই রাখতে হবে। পরিবারের সবাই শিশুকে বারবার কোলে নিলে তাদের থেকেও বিভিন্ন রোগ জীবাণু ছড়ায়।