চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

বর্ষার আবেগ ভেসে যায় নগরীর রাস্তায়

ধুলোবালি আর দূষিত বাতাসের নগরীতে বৃষ্টি সবসময়ই প্রত্যাশিত। একপশলা বৃষ্টি যেন শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয় নগরবাসীর মনে। সামাজিক মাধ্যমের যুগে সে আবেগ তারা লুকিয়েও রাখতে পারেন না। তাই বলা হয়ে থাকে বৃষ্টির ফোঁটায় মাটি ভেজার আগে ভিজে যায় ফেসবুকের পাতা। অনেকের মনেই উঁকি দেয় কাব্য।

বৃষ্টি হলেই নগরবাসীর এ স্বাভাবিক আবেগ যেন পরিণত হচ্ছে বিরক্তিতে। স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতেই ডুবে যাচ্ছে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক। সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। কিন্তু তা প্রতিকারে যেন গাঁ নেই কারও। পানি নিষ্কাশনের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠনগুলো একে অন্যকে দোষারোপ করেই দায় সাড়ছেন। নেই কোন কার্যকর উদ্যোগ।

আবহাওয়া অফিসের তথ্যানুযায়ী সাধারণত ৪৪ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হলে তাকে অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত বা ভারীবর্ষণ বলা হয়। কিন্তু তার চেয়ে অনেক কম বৃষ্টিপাতেও সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। জনদুর্ভোগ নিচ্ছে ভয়াবহ রূপ। এ মৌসুমে গত মঙ্গলবারই সর্বোচ্চ ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড হয়েছে ঢাকায়। কিন্তু এতেই তলিয়ে যায় নগরীর প্রায় সব কটি গুরুত্বপূর্ন সড়ক। অলিগলিতে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। নগরীর কিছু কিছু এলাকায় দীর্ঘদিন বৃষ্টির পানি জমে থাকার খবরও পাওয়া যাচ্ছে।

এই জলাবদ্ধতায় অফিসগামী কর্মজীবীদের পড়তে হয় সীমাহীন দুর্ভোগে। কোন কোন রাস্তা চলাচলের উপযোগী না থাকায় অন্য সড়কগুলোতে পড়ে যানবাহনের বাড়তি চাপ। সৃষ্টি হয় যানজটের। অন্যদিকে গণপরিবহন সংকট থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও পাওয়া যাচ্ছে না বাস। সব মিলে আবেগের বর্ষা মৌসুম পরিণত হয়েছে দুর্ভোগের মৌসুমে। নগরবাসীর আবেগ যেন ভেসে যাচ্ছে নগরীর রাস্তার পানিতে।

পানি বিশেষজ্ঞ ও নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, নগরীর জলাবদ্ধতা দুর করতে হলে সবার আগে দরকার পানির স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করা। পানি নিষ্কাশনের পথের সকল প্রতিবন্ধকতা দুর করা। এ জন্য নগরীতে যে প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো রয়েছে সেগুলো মুক্ত করার পাশাপাশি কৃত্রিমভাবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।

তাদের মতে, অপরিকল্পিত নগরায়ন, প্রাকৃতিক জলাশয় ভরাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থায় ত্রুটি, বজ্য ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি ইত্যাদি কারণে একটু বৃষ্টিপাত হলেই নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। যার ফলে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে মানুষকে।

তিনটি উপায়ে নগরীর জলাবদ্ধতা দুর করা যেতে পারে বলে এর আগে অনেক বিষেজ্ঞ নিজেদের মতামত ব্যক্ত করে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন নগর কর্তৃপক্ষকে। প্রথমত: নগরীতে যে প্রাকৃতিক জলাশয় রয়েছে সেগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি তার পানি ধারণ ক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে। দ্বিতীয়ত: কৃত্রিমভাবে বৃষ্টির পানিকে ভূগর্ভে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।তৃতীয়থ: ‘ওয়াটার সেনসেটিভ আরবান প্লানিং’ করতে হবে।

অফিসের সামনে বৃষ্টির পানিতে
অাটকে গেছে বেড়নোর পথ

কিন্তু তাদের এ কথাগুলো সিটি করপোরেশন, ওয়াসাসহ সংশ্লিষ্টরা কানে তুলছেন বলে মনে হচ্ছে না। খাল দখলমুক্ত করা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নত করাসহ জলবদ্ধতা নিরসনে নানা মাস্টারপ্লানের কথা বলা হলেও কার্যত কিছুই দৃশ্যমান হচ্ছে না। সামান্য বৃষ্টিতেই নগরবাসীকে পড়তে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগে।

 

 

 

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)