চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

বন্যা পরিস্থিতি: অন্য অঞ্চলেও নজর দিন

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সর্বশেষ তথ্য বলছে, গাণিতিক মডেলভিত্তিক পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হবে। যে কারণে প্রধান প্রধান নদ-নদীগুলোতে পানি বাড়লেও সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণার বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকবে। তবে হবিগঞ্জে পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে। শুধু তাই নয়, উত্তরাঞ্চলের লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ এবং জামালপুর ও টাঙ্গাইলে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

এছাড়াও চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলার নদ-নদীগুলোর পানি দ্রুত বাড়তে পারে পূর্বাভাসে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। সার্বিকভাবে বিশ্লেষণ করলে উত্তরাঞ্চল-সহ দেশের নিচু বা ঢালু এলাকাগুলোতে আগামী কয়েকদিন বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে যাচ্ছে, তা ধারণা করে নেওয়া যায়। অন্যান্য বছরগুলোতেও এমনই দেখা গেছে। সিলেট-সুনামগঞ্জ কিংবা লালমনিরহাট-কুড়িগ্রামের মতো উচু এলাকায় শুরু হওয়া বন্যার শেষ হয় দেশের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত করে।

স্বাভাবিকভাবেই দেশের মানুষ এখন সিলেট-সুনামগঞ্জের বন্যাকবলিত মানুষকে নিয়ে ব্যস্ত। সরকার বা প্রশাসনও সেই এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। এমনকি অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর সবধরনের কার্যক্রম এই অঞ্চলেই চলছে। সহজ করে বললে, দেশের অন্য এলাকাগুলোতে নজর নেই। সমস্যা বা সঙ্কটটা এখানেই। একদিকে নজর দিতে গিয়ে, অন্যদিকের এক বা একাধিক বড় অঞ্চলে বন্যা মোকাবিলায় যতটা প্রস্তুতি প্রয়োজন; তাতে ঘাটতি থেকে যায়।

সিলেট-সুনামগঞ্জের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি, সেখানে বন্যা পূর্বপ্রস্ততি ছিল না বললেই চলে। এ কারণেই হঠাৎ করে এত ব্যাপক বন্যার মুখে পড়ে ক্ষয়-ক্ষতিটা বেশি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগে থেকেই সেখানে বন্যার পূর্বাভাস থাকলেও প্রস্তুতির অভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।

আমরা জানি, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যে তাৎক্ষণিক বরাদ্দ থাকে, তা দুর্গত মানুষের সংখ্যার তুলনায় খুবেই কম। পরের দিকে বরাদ্দ বাড়লেও মূলত স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে পাওয়া সহায়তা দিয়েই আক্রান্ত মানুষকে প্রথম ধাক্কা সামলাতে হয়। তাই এই ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে পূর্বপ্রস্ততির বিকল্প নেই।

সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, সোমবার থেকে সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যার পানি কিছুটা কমছে। সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনের সাহায়তায় দুর্গত মানুষ এই বিপদ থেকে মোটামুটি রক্ষা পেয়েছে। এখন তাদের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা সাজাতে হবে। কিন্তু উত্তরাঞ্চল-সহ যেসব এলাকায় নতুন করে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, সেসব এলাকায় দ্রুত নজর দিতে হবে।

আমরা মনে করি, নতুন করে যেসব এলাকায় বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে, যেসব এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি প্যাকেটজাত শুকনো খাবার, নিরাপদ পানি, ওষুধসহ অন্যান্য সামগ্রী তৈরি রাখতে হবে। তাতে খুব সহজেই মানুষের পাশে দাঁড়ানো সম্ভব হবে।