বন্ধ প্রেক্ষাগৃহ চালু ও আধুনিকায়নে লোন দেবে সরকার
এফডিসির দৈন্য কাটিয়ে তোলার জন্য আসছে ৩২২ কোটি টাকার প্রকল্প: নবনির্বাচিত শিল্পী সমিতির সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে জানালেন তথ্যমন্ত্রী
দেশে বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রেক্ষাগৃহ চালু এবং পুরাতন প্রেক্ষাগৃহ আধুনিকায়নের জন্য সরকারিভাবে লোন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে শিল্পী সমিতির নব-নির্বাচিত কমিটির সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে মতবিনিময় শেষে একথা বলেন তথ্যমন্ত্রী।
তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মতবিনিময় শেষে শিল্পী সমিতির আন্তর্জাতিক সম্পাদক ও চিত্রনায়ক ইমন চ্যানেল আই অনলাইনকে এমনটাই জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা অনেক ফলপ্রসূ হবে মনে হয়েছে। উনি সিরিয়াসভাবে চলচ্চিত্রের সংকট দূর করতে কাজ করছেন।
তথ্যমন্ত্রী মতবিনিময় সভায় বলেন, চলচ্চিত্রশিল্পের উন্নয়ন ও বন্ধ হল চালুর লক্ষ্যে সরকার স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দিতে উদ্যোগ নিয়েছে। মন্ত্রী জানিয়েছেন এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থমন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এটা পাওয়া গেলে আশা করা যায় দেশে বন্ধ হলগুলো পুনরায় চালু হবে। আর চলচ্চিত্রশিল্পের দৈন্য কেটে যাবে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা সরকারের পক্ষ থেকে চলচ্চিত্রকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছি। তার মধ্যে এফডিসির দৈন্য কাটিয়ে তোলার জন্য ৩২২ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। যা দিয়ে আগামী ৩/৪ বছরের মধ্যে সেখানে নতুন ভবন তৈরি করা হবে। যেখানে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে। পাশাপাশি গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ১০৫ একর জমির ওপর বঙ্গবন্ধু ফিল্মসিটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এই ফিল্মসিটিকে বিশ্বমানের করতে ১ হাজার কোটি টাকার একটি বড় প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
হাছান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে এফডিসি প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর অনেক কালজয়ী শিল্পী চলচ্চিত্রে এসেছেন। ভারতের মুম্বাই শহরে অনেক সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের দেশে চলচ্চিত্রশিল্পে সামাজিক চলচ্চিত্র না হয়ে অন্য ধরনের চলচ্চিত্র নির্মিত হচ্ছিল। পরিবার নিয়ে দেখার মতো ছবি এখন হচ্ছে। অনেক ছবি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পুরস্কারও পেয়েছে।
চলচ্চিত্র নির্মাণে অনুদানের টাকার বরাদ্দ বাড়ছে, এমনটা জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে অনুদানে ছবি নির্মিত হয়। এ ধরনের ছবি যাতে আরও নির্মিত হয় সেজন্য আমরা বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছি। চলচ্চিত্রে সরকারি অনুদান ৫ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ কোটি টাকা করেছি। একটি ছবি নির্মাণে আগে যেখানে ৬০ লাখ টাকা দেওয়া হতো এখন সেটা বাড়িয়ে ৭৫ লাখ করা হয়েছে। আগে অনুদানের ছবি হলে মুক্তি পেত না, সেটি এখন থেকে হলে মুক্তি দিতে হবে। আর্টফিল্মের জন্য কিছু অনুদান দিতে হবে, সেটি নির্দিষ্টসংখ্যক ছবির জন্য দেবো।
দেশে নতুন সিনেপ্লেক্স হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে নতুন নতুন সিনেপ্লেক্স হচ্ছে। ঢাকায় দু’টি আছে, আরও কয়েকটি হবে এক-দুই বছরের মধ্যে। চট্টগ্রামে চারটি সিনেপ্লেক্স হতে যাচ্ছে। মানুষের রুচির পরিবর্তন হচ্ছে। সুতরাং, সিনেমা হলে আধুনিকায়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদী লোন দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সহসা এক্ষেত্রে সমাধানে পৌঁছাতে পারবো। সরকারিভাবে জেলাগুলোতে তথ্যকেন্দ্র নির্মাণ করবো। এগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে সিনেমার স্বর্ণযুগ ফিরে আসবে।
শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে তথ্য মন্ত্রীকে জানানো হয় প্রযোজকের ন্যায্য টাকা ফেরতের বিষয়ে। চিত্রনায়ক ইমন বলেন, প্রযোজক ন্যায্য টাকা পাচ্ছে না। ছবির ব্যবসা ৭০ লাখ হলে বিভিন্ন মধ্যভোগিদের জন্য প্রযোজক পাচ্ছেন সীমিত টাকা। এজন্য ই-টিকেটিং চালুর জন্য আমরা মন্ত্রীকে জানিয়েছি। তিনি বিষয়টি কঠোরভাবে দেখবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। এছাড়া সরকারের সহায়তায় শিল্পীদের আবাসান ব্যবস্থার ব্যাপারে মন্ত্রীর কাছে আবেদন জানানো হয়েছে বলেও জানান ইমন।
তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা সভায় এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল করিম, শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর, সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান, সহ-সভাপতি ডিপজল ও রুবেল, সহ-সাধারণ সম্পাদক আরমান, সাংগঠনিক সম্পাদক সুব্রত, আন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক ইমন, দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক জ্যাকি আলমগীর, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক জাকির হোসেন, কোষাধ্যক্ষ ফরহাদ, কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য অঞ্জনা সুলতানা, অরুণা বিশ্বাস, আলীরাজ, আসিফ ইকবাল, আলেকজান্ডার বো, জেসমিন, জয় চৌধুরী, মারুফ আকিব ও রোজিনা উপস্থিত ছিলেন।